গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না এই বিষয়গুলো গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সকলেই জানি, ফল আমাদের ভিটামিনের সবচেয়ে বড়ো উৎসের অন্যতম। একজন মানুষের সুস্থ্য থাকতে ফলের কোনো বিকল্প নাই। কারণ ফলে থাকা ভিটামিন,আয়রন গুলো সুস্থ সবল মানুষ নির্মাণের সবচেয়ে বড়ো উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। আমাদের দেশীয় উচ্চমাত্রার ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল ছাড়াও বিভিন্ন বৈদেশিক ফলের চাষ ও ফল সমূহ কে বিদেশ থেকে দেশে আমদানির মাধ্যমে আমাদের জন্য সহজলভ্য ফলের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গর্ভাবস্থায় একজন মা ও অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য ফলের কোনো বিকল্প নাই। কিন্তু এমন কিছু ফল আছে, যেগুলো গর্ভাবস্থায় ঝুঁকির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে মা ও শিশুর জন্য। আজকের আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না, তা নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।
গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
গর্ভাবস্থায় ফল গুরুত্ব অনেক বেশি তুলনামূলক। কারণ গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে তুলনামূলক অনেক পুষ্টিগুণের প্রয়োজন হয় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায়। তাছাড়া ফলে থাকা আঁশ সমূহ শরীরের বিভিন্ন জটিলতা দূর করে। ফলে শরীর আরও সুসংগঠিত ও সুন্দর থাকে। ফলে থাকা কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, বিভিন্ন এসিড, বিভিন্ন জৈব ও রাসয়নিক পদার্থ গর্ভকালীন সময়ে বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। তবে সব ফল গর্ভাবস্থায় উপযোগী না খাওয়ার, কারণ শরীরের ব্যপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়ায় গর্ভকালীন সময়ে কী কী ফল খাওয়া যাবে না সেই সম্বন্ধে বিস্তারিত ধারণা থাকা আবশ্যক।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না?
গর্ভাবস্থায় সকল প্রকার ফল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সকল ফল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে শিশু ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই আমাদের বেছে বেছে এই সময় ফল খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না এ ব্যপারে আমরা নিচের আলোচনায় বিস্তারিত জানবো-
আনারস

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস আনারস এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। আনারস ভিটামিন সি, পানি, অ্যামাইনো এসিডের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু পুষ্টি উপাদান ধারণ করে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় আনারসে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়, কারণ আনারসের ফলে জরায়ুর তীব্র সংকোচন সৃষ্টি হয়। আনারসে ব্রোমেলাইন নামক পদার্থ থাকে, যা মূলত একটা এনজাইম। এই প্রোটিন জরায়ু কে নরম করে দিতে পারে। ফলে অকালে প্রসবের ফলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং, আনারস খাওয়া গর্ভাবস্থায় অনুচিত।
আঙুর

গর্ভাবস্থায় আঙুর খাওয়া খুব একটা যৌক্তিক না। বিশেষ করে কালো আঙুর খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও কম। আঙুরে থাকা ভিটামিন, এসিড, খনিজ উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও গর্ভাবস্থায় কালো আঙুরের চামড়া হজমে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ স্বাভাবিকভাবেই গর্ভাবস্থায় হজমের অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল থাকে। আবার আঙুরে থাকা যৌগিক রেজভেট্রোল গর্ভবতী নারীর জন্য বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। সুতরাং, গর্ভাবস্থায় আঙুর এড়িয়ে চলা উচিত।
তেঁতুল

গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই টক খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। আর সেকারণে তেতুল মানুষ গর্ভবতী নারীরা তুলনামূলক বেশি খেয়ে থাকেন। কিন্তু এই তেঁতুল থেকে ক্ষতি হতে পারে। কারণ তেঁতুলে থাকা অতিরিক্ত ভিটামিন সি শরীরে উৎপাদিত প্রজেস্টোরন হরমোন কমিয়ে দেয়। ফলে, ভ্রুণের ক্ষতি হয়। পাশাপাশি এই ক্ষতি গর্ভপাত ঘটাতেও পারে। তাই প্রথম তিন মাস তেঁতুল খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। খেলেও অত্যন্ত অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত।
পেঁপে

পেঁপে সাধারণ অবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। পেঁপের আঁশ আমাদের সঠিক পরিপাক প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গর্ভবতী মায়ের পেঁপে খাওয়া অনুচিত। কারণ পেঁপে লাটেক্স নামক এক ধরনের পদার্থ থাকে। লাটেক্স জরায়ুর সংকোচন ঘটায় ও রক্তপাত ঘটায়। যার ফলে গর্ভপাত ও হতে পারে। পেঁপে ভ্রণের বিকাশেও বাধা সৃষ্টি করে বলে জানা যায়। তাই, পেঁপে অন্য সবার জন্য পুষ্ঠিকর হলেও গর্ভবতী মায়ের এড়িয়ে চলা উচিত যেকোনো অবস্থায়।
কলা

কলা আমাদের দেশের সর্বাধিক সহজলভ্য একটা ফল। কলায় রয়েছে অত্যাধিক কার্বোহাইড্রেট। কার্বোহাইড্রেট স্বাভাবিক মানুষের জন্য খুবই উপকারী। কলাতে চিটনেস নামক একধরণের পদার্থ থাকে। ফলে এলার্জি ও ডায়াবেটিস রোগীদের কলা খেতে নিষেধ করেন ডাক্তাররা। কলা লাটেক্স জাতীয় একটা পদার্থ, যার অপকারীতা পেঁপের ক্ষেত্রে অলরেডি আলোচনা করা হয়ছে। কলার চিটিনেসে থাকা৷ এলার্জির কারণে এলার্জি আক্রান্ত নারীদের কলা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। সুতরাং, কলা গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য শতভাগ নিরাপদ না।
তরমুজ

তরমুজ আমাদের শরীরের পানির চাহিদা পূরণে গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত কার্যকরী একটি ফল। গরম কালে তরমুজের অধিক গুরুত্ব দেখা যায়। তরমুজ আমাদের শরীরের টক্সিন সমূহ দূর করে দেয়। কিন্তু তরমুজের টক্সিন ধ্বংস করতে গিয়ে অনেক সময় ভ্রুণের ক্ষতি ও হয়। তরমুজে থাকা পদার্থ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে তখন রক্ত থেকে টক্সিনের সাথে শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সমূহ বের হয়ে যেতে থাকে। তাছাড়া তরমুজে শরীর ঠান্ডা হয়। ফলে গর্ভবতী নারীর সর্দি-জ্বর, কাঁশির মতো জটিলতা দেখা যেতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে এধরনের নানা জটিলতা সৃষ্টি করায় তরমুজ খাওয়া উচিত না গর্ভাবস্থায়।
খেঁজুর

খেঁজুর অত্যন্ত পুষ্টিকর ও শক্তিশালী একটা ফল। খেঁজুরে থাকা ভিটামিন ও প্রোটিন অত্যন্ত উঁচু মানের। খেঁজুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও রয়েছে। এত প্রকার পুষ্টিকর খাবারের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে, শরীর উষ্ণ হওয়ায় জরায়ুমুখের সংকোচন বৃদ্ধি পায়। যেটা ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকারক। ফলে, পেশিগুলো কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গর্ভাবস্থায় কখনো অতিরিক্ত পরিমাণে খেঁজুর খাওয়া উচিত না।
হিমায়িত ফল

বর্তমানে বিদেশী ফল খাওয়ার একটা ব্যপক প্রবণতা দেখা যায় মানুষের মধ্যে৷ আর এই প্রবণতা থেকেই ফল হিমায়িত করে রাখার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফল শুধু হিমায়িত সরাসরি করাই হয় না। তার পূর্বে ফরমালিন বা প্রিজারভেটিভ এর মতো বিষাক্ত পদার্থ প্রয়োগ করা হয় দীর্ঘদিন তাজা রাখার জন্য। ফলে, এই ধরনের বিষাক্ত ফলে সাধারণ মানুষ তো অবশ্যই গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। এখন অনেক বিদেশি ফল দেশেও চাষ করা হচ্ছে। ফলে হিমায়িত ফলের প্রয়োজনীয়তা এখন অনেক কমে গেছে। তবুও গর্ভাবস্থায় হিমায়িত ফল এড়িয়ে চলা উচিত ।
ক্যানড টমেটো বা ফল সমূহ

ক্যানড টমেটো বা বিভিন্ন ফল সমূহ ক্যানে প্রক্রিয়াজাত করার পূর্বে প্রিজারভেটিভ বা ফরম্যালিন প্রয়োগ করা হয়। এই ধরনের ফরম্যালিন বা প্রক্রিয়াজাত ফল গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্ষতিকারক। কারণ এতে প্রয়োগ করা পদার্থ বিষাক্ত হয়ে যায় নির্দিষ্ট সময় পর।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তর।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে?
গর্ভাবস্থায় প্রায় সব ফলই খাওয়া যাবে। তবে উপরোল্লিখিত গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না আলোচনার ফল সমূহ এড়িয়ে চললেই হবে।
গর্ভাবস্থায় কেমন ফল খাওয়া উচিত?
গর্ভাবস্থায় হজমের জটিলতা এড়াতে সর্বদা আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। ভারি, জটিল ক্যালরি যুক্ত ফলমূল এড়িয়ে চলা উচিত হজমের প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে।
উপসংহার
উপরোক্ত আলোচনা থেকে গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না এ-ব্যাপারে বিস্তারিত জেনেছি। ফল আমাদের পুষ্টির অন্যতম প্রধান আধার। ফল থেকে আমরা পুষ্টির চাহিদা পূরণ করি। গর্ভবতী মা অবশ্যই তার ব্যতিক্রম না। আমাদের উচিত গর্ভাবস্থায় যেসব ফল খাওয়া যাবে না, সেগুলো থেকে গর্ভবতী মা কে দূরে রেখে মা ও শিশুর সুরক্ষা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না” এ বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ!