Skip to content
Home » গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না?

গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না?

What Fish Can Not Be Eaten During Pregnancy

গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না আর কী কী মাছ খাওয়া যাবে, তা গর্ভধারণ কালীন সময়ে জানা আবশ্যক। গর্ভাবস্থা একজন নারী তথা একজন মানুষের জীবনে যেমন অত্যন্ত সংবেদনশীল, তেমনই ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় একজন মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যাপক প্রয়োজন আছে৷ কিন্তু এমন কিছু খাবার আছে, যেগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় ফল, মূল, মাছ, মাংস, শুকনা খাবার সহ অন্যান্য সুষম খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু গর্ভে থাকা সন্তানের আরও ভালোর জন্য মায়ের স্বাস্থ্য বিবেচনা করে এই ধরণের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতমানের গবেষণার ফল এই ধরণের ছোটখাটো খাওয়া দাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা। আজকের আর্টিকেলে আমরা বিশেষভাবে গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না, সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

গর্ভকালীন খাওয়া দাওয়া কেমন হওয়া উচিত? 

গর্ভকালীন সময়ে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া আবশ্যক। প্রতিদিন বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে গর্ভবতী মা’য়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নজর দিতে হবে। একজন সুস্থ মা কেবল মাত্র একটি সুস্থ সন্তান জন্মদান করতে পারে। অনেক সময় নির্দিষ্ট কিছু খাবারের প্রতি অরুচি আসতে পারে গর্ভকালীন সময়ে কিন্তু তবুও পরিমিত পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করে, সেই খাবারের চাহিদা পূরণ করতে হয়। কিন্তু গর্ভকালীন সময়ে শারিরীক ব্যপক পরিবর্তন হওয়ায় কিছু খাবারের প্রতি বিধি নিষেধ থাকে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, পনির মাখন, শাক-সবজি সবই পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে পারবে। তবে, কিছু মাছ খাওয়ায় বিধি নিষেধ আছে। গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না, সে সম্বন্ধে জানা অত্যাবশকীয়। 

গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না?

গর্ভাবস্থায় সকল প্রকার মাছ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সকল মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে শিশু ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই আমাদের বেছে বেছে এই সময় মাছ খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না এ ব্যপারে আমরা নিচের আলোচনায় বিস্তারিত জানবো-

হাঙর 

হাঙর অত্যন্ত জনপ্রিয় একটা সামুদ্রিক মাছ। সামুদ্রিক মাছ হওয়ায় হাঙরে প্রচুর পরিমাণ, ভিটামিন, আয়রন, মিনারেল সহ অন্যান্য খনিজ উপাদান থাকে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় হাঙর খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে গর্ভবতী মায়ের জন্য। হাঙরে রয়েছে মিথাইল মার্কারি নামক এক ধরনের পদার্থ; যা গর্ভকালীন অবস্থায় গর্ভবতী মায়ের শরীরে হরমোনাল পরিবর্তনের জন্য বেশ ক্ষতিকর হতে পারে। এতে গর্ভবতী মা ও শিশুর ক্ষতি গতে পারে। তাই হাঙর গর্ভকালীন সময়ে এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়।

কিং ম্যাকরেল

কিং ম্যাকরেল আরেকটি সামুদ্রিক মাছ। কিং ম্যাকরেলে আয়রনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে অনেক বেশি। আয়রন ছাড়াও ম্যাকরেলে খনিজ পদার্থ, প্রোটিন ও ভিটামিন রয়েছে। কিন্তু কিন্তু কিং ম্যাকরেলেও রয়েছে মিথাইল মার্কারি নামক পদার্থ। মিথাইল মার্কারি রক্তে মিশে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর জন্য। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ দুটি ইস্ট্রোজেন ও ল্যাকটোজ হরমোনের ক্ষরণেও বাধা প্রদান করে এটি। ফলে কিং ম্যাকরেল গর্ভবতী মায়ের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ায় উপযুক্ত। 

সোর্ডফিশ বা তলোয়ার মাছ

সোর্ডফিশ অনেক জনপ্রিয় একটি মাছ। সমুদ্রে জেলেরা সোর্ড ফিশ প্রায়ই শিকার করে আনে৷ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে সহজলভ্য সোর্ড ফিশ গর্ভাবস্থায় মায়ের জন্য ক্ষতিকর। সোর্ডফিশে থাকা নিউরোটক্সিন গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে, পাশাপাশি শিশুর জন্যও এটি ক্ষতির কারণ হতে পারে। ফলে, সোর্ড ফিশ বিশেষজ্ঞরা গর্ভবতী মায়েরদের জন্য খাওয়া নিষিদ্ধ করে দেন। গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই প্রকারের নিউরোটক্সিন সমৃদ্ধ পদার্থ মাছ খেতে নিষেধ করেন ডাক্তাররা। 

টাইল ফিশ 

গর্ভাবস্থায় নিষিদ্ধ আরেকটি ক্ষতিকর মাছ হচ্ছে টাইল ফিশ। প্রোটিন,  নিউট্রিশনে পরিপূর্ণ এই মাছ স্বাভাবিক মানুষের জন্য ক্ষতিকর না হলেও গর্ভাবস্থায় এটি বেশ ক্ষতিকর। এই মাছে মিথাইল মার্কারির মতো ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। যেটি শ্বসন তন্ত্রের পাশাপাশি স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন করে থাকে। গর্ভাবস্থায় মায়ের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল শরীরে টাইল ফিশ খাওয়া অনিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়। 

সুশী 

জাপানে সুশী নামক সামুদ্রিক মাছ খুবই জনপ্রিয়। জাপানে সুশী সাধারণত স্যুপের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় সুশী খাওয়া অনিরাপদ হতে পারে। সুশী তে নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদান স্বাভাবিক মানুষের জন্য বেশ উপকারী হলেও গর্ভাবস্থায় এটি শরীরের পরিবর্তন ব্যহত করে বলে ধারণা করেন বিশেষজ্ঞরা। তাই, সুশী গর্ভকালীন সময়ে অনিরাপদ। 

সিভিচ 

প্রোটিন, খনিজ উপাদান, আয়রণে পরিপূর্ণ আরেকটি সামুদ্রিক মাছ হচ্ছে সিভিচ। এটি স্বাভাবিক মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বহন করলেও গর্ভাবস্থায় শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি করতে সক্ষম। ফলে, সিভিচ খাওয়াও অনিরাপদ। 

সাশিমি 

সাশিমি একটি সমস্ত পুষ্টি গুণে সমৃদ্ধ সামুদ্রিক মাছ। এটি গর্ভাবস্থায় খাওয়া অনিরাপদ কারণ এর কিছু খনিজ উপাদান শরীরের সাথে মানিয়ে নিতে পারে না গর্ভকালীন সময়ে। ফলে, স্বাভাবিক মানুষের জন্য এটি নিরাপদ হলেও গর্ভাবস্থায় এটি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। 

হিমায়িত মাছ

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির অগ্রগ্রামীতায় হিমায়িত মাছ খাওয়ার প্রবণতা মানুষের বৃদ্ধি পেয়েছে। ইলিশ, চিংড়ি সহ অধিকাংশ সামুদ্রিক মাছ হিমায়িত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই ধরনের হিমায়িত মাছ গুলো শরীরে বিভিন্ন সমস্যার উদ্রেক করতে সক্ষম। কারণ এই হিমায়িত মাছগুলো নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি সময় হিমায়িত থাকার ফলে এর পুষ্টি উপাদানের সাথে রাসয়নিক বিক্রিয়া হয় পরিবেশের ভিন্ন অবস্থায়। ফলে এই বিক্রিয়ায় কিছু ক্ষতিকর পদার্থ উৎপন্ন হতে পারে। এই ধরনের পদার্থ স্বাভাবিক সময়ে সহনীয় হলেও গর্ভাবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, গর্ভাবস্থায় হিমায়িত মাছ এড়িয়ে চলা উত্তম। 

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তর। 

গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে? 

গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না তা আমরা উপরে আলোচনা করেছি। উক্ত উল্লেখিত মাছ গুলো ছাড়া সব মাছ পরিমিত পরিমাণে খেতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে গর্ভবতী মা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত থাকলে, ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সেক্ষেত্রে আবশ্যক। 

গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে পুষ্টিকর মাছ সমূহ কোন গুলো?

গর্ভাবস্থায় সব মাছই খেতে পারেন। তবে পাঙাস, স্যালমন, চিংড়ি, মাগুড়, কড মাছের মতো অধিক পুষ্টি উপাদান যুক্ত মাছ গুলো সবচেয়ে পুষ্টিকর। 

উপসংহার

গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না, কি কি মাছ খাওয়া যাবে, গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর মাছের নাম সমূহ জেনেছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে। একজন গর্ভবতী মা ও অনাগত শিশুর ভবিষ্যতের কথা ভেবে এই বিধিনিষেধ গুলো মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উচিত এই বিধিনিষেধ যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে, একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উপহার দেওয়া। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত সম্পর্কে পড়তে পারেন।

“গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না” এ বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *