টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না এই বিষয়টি খুব কঠোর ভাবে মানা উচিত যাদের প্রায় টনসিলের সমস্যা দেয়া দেয়। শীতে যে সব অসুখের আক্রমনে আমাদের ভুগতে হয়, টনসিল সংক্রমণ তার মধ্যে অন্যতম। জিভের পিছনের অংশে গলার দুই পাশে যে গোলাকার মাংস পিণ্ডটি দেখা যায় তাই টনসিল। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় টনসিলকে টনসিলাইটিস বলা হয়। এটি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি কোষ বা টিস্যু। টনসিল একটি জটিল সমস্যা। অনেকেই এই সমস্যায় ভোগেন। তবে ৩ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বড়দের দেখা যায়না তা কিন্তু নয়।
শীতে এই টনসিলের প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। তীব্র গলাব্যথা, মাথাব্যথা, খাবার খেতে কষ্ট, মুখ হাঁ করতে অসুবিধা, কানে ব্যথা, মুখ দিয়ে লালা বের হওয়া, কণ্ঠস্বর ভারি হওয়া ও মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া এইসব উপসর্গ দেখা দিলেই বুঝতে বাকি থাকে না টনসিল আক্রমন করেছে।
টনসিল কি?
জিভের পিছনের অংশে গলার দুই পাশে যে গোলাকার মাংস পিণ্ডটি দেখা যায় তাই টনসিল। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় টনসিলকে টনসিলাইটিস বলা হয়। টনসিল হলো আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অংশ এবং আমাদের মুখের ভেতরেই চারটি গ্রুপে তারা অবস্থান করে। এদের নাম লিঙ্গুয়াল, প্যালাটাইন, টিউবাল ও অ্যাডেনয়েড। এই টনসিলগুলোর কোনো একটির প্রদাহ হলেই তাকে বলে টনসিলাইটিস। টনসিল বলতে আমরা সচরাচর যা বুঝি তা কিন্তু আসলে টনসিলাইটিস। টনসিলাইটিস যে শুধু শিশুদের হয়, তা নয়। এটি শিশুদের বেশি হলেও যে কোনো বয়সেই মানুষের হতে পারে। টন্সিলাইটিস তিন প্রকারের হয় – তীব্র, পুনরাবৃত্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী।
টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না
আপনি কি এই টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না এটা জানতে চাচ্ছেন? টনসিল হলে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এগুলি গলা ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনার সমস্যাকে আরো দীর্ঘায়িত করতে পারে। চলুন টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না তালিকাটি জেনে নেই।
- চানাচুর, চিপস, চটপটি, ফুচকা এবং কোমল পানীয় জাতীয় জাঙ্কফুড খাওয়া যাবে না। এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
- অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। যেকোন খাবারে এইসময় কম মশলা ব্যবহার করে খাবার খেতে হবে। এইবস খাবার টনসিল বাড়িয়ে দেয়।
- টক জাতীয় সকল খাবার গলা ব্যথা বাড়তে পারে। টনসিলের ব্যথা কমাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারগুলো খেতে হবে এবং কোন অবস্থাতেই টক জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। যেমন: তেঁতুল, আমলকি, লেবু ইত্যাদি।
- বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকোলি এই খাবারগুলো খাওয়া যাবে না। কারণ এই খাবারগুলো টনসিলের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে এবং গলা ফোলা কমতে দেয় না।
- মিষ্টি আলু, চিনা বাদাম ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। এই খাবারগুলো টনসিল বাড়িয়ে দেয়।
- দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার যেমন পনির, চিজ, টক দই ইত্যাদি খাওয়া যাবে না।
- চিনি, রান্না করা গাজর, পাকা কলা, শুকনো ফল, মধু, ময়দার রুটি, আলু, সাদা পাস্ত এবং মিষ্টি কম খেতে হবে। কারণ, এই খাবারগুলো শরীরে কার্বহাইড্রেটের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
- অ্যাসিডযুক্ত খাবার যেমন টমেটো, স্ট্রবেরি, কমলা, কুল, আঙ্গুর, আনারস, আচার, সস, ওয়াইন, কফি, সোডা, চকোলেট ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। এগুলো টনসিলের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
- তেলযুক্ত খাবার যেমন ফ্রাইড মাছ, ফ্রাইড চিকেন, মাখন, চিজ, ভাজা খাবার, পিৎজা ইত্যাদি খাওয়া যাবে না।
- কাঁচা খাবার বিশেষ করে সালাদ, ব্রকোলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ফল, শাকসবজি, মাশরুম, কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা রসুন, পেঁয়াজ এবং কাঁচা যেকোন ফল ইত্যাদি খাওয়া যাবে না।
- চকলেট, আইসক্রিম, মাখন, চিজ, রুটি, পাস্তা, ভাত ইত্যাদি ঠান্ডাজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। অথ্যাৎ কোন ঠান্ডা খাবার খাওয়া যাবে না।
- অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম জাতীয় খাবার এসময় খাওয়া যাবে না।
- কোনো ধরণের শক্ত খাবার খাওয়া যাবে না যেমন, গরু মাংস, রুটি ইত্যাদি। শক্ত খাবার টনসিলের ফোলা বৃদ্ধি করতে পারে। এসময় নরম খাবার খেতে হবে।
- পাকা কলা ও শুকনো কলা খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলতে হবে।
- মধু ও মিষ্টি কম খেতে হবে। এগুলো টনসেল বাড়িয়ে দেয়।
- ঝাল খাবার খাওয়া যাবে না। কম ঝাল দিয়ে খাবর খেতে হবে।
- ধূমপান করা যাবে না। ধুমপান টনসিল ছাড়াও স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।
- এলকোহল জাতীয় কোন খাবার গ্রহন করা যাবে না।
- এছাড়াও হজমে সমস্যা হয় বা বাঁধা দেয় এমন খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে।
- ফাইবার সম্বৃদ্ধ খাবার খাওয়া যাবে না যেমন শালগম, মুলা, পুঁইশাক ইত্যাদি।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না সমূহ এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তবে চলুন জেনে নেই সেই সকল সমস্ত সকল প্রশ্ন ও উত্তর।
বাচ্চাদের টনসিলাইটিস কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
যেসকল বাচ্চারা বাহিরে বের হয় অর্থ্যাৎ বিদ্যালয়ে যাওয়া বাচ্চারা যাদের বয়স ৫ থেকে ১৪ বছর তারা সংক্রামক ভাইরাস অথবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বেশী আক্রান্ত হয়। তাই এদের টনসিলাইটিস প্রতিরোধ করার জন্য ভালো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেমন নিজের হাত ধোয়া, খাবার বা পানির বোতল অন্যের সাথে শেয়ার করে নেওয়া বন্ধ করা এবং যে সমস্ত সহপাঠীর শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সংক্রমণ হয়েছে, তাদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এড়িয়ে যাওয়া।
টনসিল হওয়ার কারণ কি?
টনসিলাইটিস হল টনসিলের প্রদাহ। টনসিল হল গলায় অবস্থিত দুটি ছোট, নরম মাংসপিন্ড। এগুলি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তবে, কখনও কখনও টনসিলগুলি ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে, যার ফলে টনসিলাইটিস হয় যা টনসিল নামে পরিচিত। সাধারনত পুষ্টির অভাব, ঠান্ডা জাতীয় খাবার যেমন, আইসক্রিম, ফ্রিজে রাখা শীতল পানি পান করা, স্যাঁতসেঁতে স্থানে থাকা বা রোদ থেকে দূরে থাকা এই রোগের কারণ।
উপসংহার
শীতে ও গরমে ঠাণ্ডা লাগা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। অনেক দিন ধরে ঠাণ্ডা লাগলে টনসিলের সমস্যা দেখা দেয়। গলার ভেতর টর্চ দিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যায় যে দুদিকের টনসিল লাল হয়ে ফুলে গেছে। অনেক সময় এর ওপর হলুদ বা সাদা আস্তরণও পড়ে। ঘরোয়া নিয়মের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খেলে দ্রুত এ সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব। এখানেও একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স বা নিয়ম পুরোপুরি মানতে হবে।
অনেকেই সাধারণ গলা ব্যথা আর টনসিলের ব্যথার মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে টনসিলের ব্যথাকে সাধারণ গলা ব্যথা মনে করেই এড়িয়ে যান। ফলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। এই সময় টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না এই বিষয়গুলোও খুবই কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে যাতে সমস্যা দ্রুত শেষ হয়। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।
তাহলে আর কি খাবো🙁
সব খাবারই তো বন্ধ
কোন খাবার গুলো খেতে পারবো? এটা বলে দিলে আরো উপকৃত হই। যেহেতু এখানে অনেক খাবারই খেতে নিষেধ করা হয়েছে, তাই কোন খাবার গুলো খাওয়া যাবে এটা বের করা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।