আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম জানা অত্যন্ত প্রয়োজন আমাশয় রোগের নিরাময়ের জন্য। আমাশয় রোগের ঔষধ হিসেবে অনেকেই বিভিন্ন কিছুর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমাশয়ের মতো দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যায় তারা অধিকাংশ সময় সঠিক পরামর্শের অভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন না। ফলে আমাশয় নিরাময় তো হয়ই না, বরং আরও দীর্ঘমেয়াদি অসুখে পরিণত হয়। তাই, আমাশয় রোগের সঠিক চিকিৎসা সঠিক ঔষধের মাধ্যমে হওয়া জরুরি। আমাশয় যেহেতু অন্ত্রের রোগ সেহেতু, আমাশয় নিরাময় করতে ব্যর্থ হলে, ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যের বড়ো অবনতি দেখা দিতে পারে । সুতরাং, সঠিক সময়ে আমাশয় থেকে মুক্তি পাওয়া আবশ্যক।
আজকের আর্টিকেলে আমরা আমাশয় থেকে মুক্তি পেতে আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম ও তাদের কার্যক্রম সম্বন্ধে বিস্তারিত ধারণা গ্রহণ করবো।
আমাশয় রোগ কী?
আমাশয় হচ্ছে অন্ত্রের প্রদাহ। ডায়েরিয়ার থেকেও শংকাজনক অবস্থার সৃষ্টি করে। শরীরে ব্যপক পানি শূণ্যতা সৃষ্টি করে। আমাশয় সাধারণত দুই প্রকার।
- ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রি: ব্যাসিলারী ডিসেন্ট্রি সাধারণ আক্রান্ত ব্যাক্তির খাবার, পানি সহ বিভিন্ন উপায়ে ছড়িয়ে থাকে। এটি শিগেলা নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে সৃষ্টি হয়।
- অ্যামিবিক ডিসেন্ট্রি: যা Entamoeba Histotolytica নামক পরজীবির কারণে আক্রান্ত হয়। এই পরজীবির আক্রমণে একটা নির্দিষ্ট এলাকার ৪০% মানুষ আক্রান্ত হয় ৷
সাধারণত স্যানিটেশন সমস্যা থাকলে এই ধরনের আমাশয় হয়। খাবার, পানির মতো এটিও সংক্রামক হিসেবে কাজ করে। আমাশায় এই জটিল অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার সেরা উপায় হচ্ছে আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম এর মাধ্যমে ঔষধ গ্রহণ করা।
আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম
আমাশয় রোগ অনেক কষ্টকর একটি রোগ। এই রোগে সাময়িকভাবে শরীর একেবারে দুর্বল করে ফেলে। এমতাবস্থায় আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম জানা থাকলে সহজেই সেবন করতে পারি। নিচে ঔষধের নাম ও বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হলো-
সিপ্রোফ্লক্সাসিন (Syproflaxacin)
সিপ্রোফ্লক্সাসিন আমাশয় রোগের অন্যতম সেরা একটি ঔষধ। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কতৃক স্বীকৃত। আমাশয় রোগী কে দিনে ৩ বার খাওয়ার পর খাইয়ে দেওয়ার নিয়ম এটি। তবে কত দিন খাওয়াতে হবে, তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডাক্তার নির্দেশনা দিবে।
সেফট্রিয়াক্সোন (Safetriaxon)
সেফট্রিয়াক্সন WHO স্বীকৃতি আরেকটা বিখ্যাত আমাশয়ের ঔষধ। আমাশয়ের আরেকটা খ্যাতিমান ঔষধ হিসেবে পরিচিত সেফট্রিয়াক্সোন।জ্বর, মাথা ও পেট ব্যথা উপশমেও এটি অনেক সময় ব্যবহৃত হয়।
সেফট্রিয়াক্সোন খাওয়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। আমাশয় রোগী কে খাওয়ার আগে তিন বেলা একটি করে খাওয়ানো প্রয়োজন এটি। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কতদিন খাওয়াতে হবে, তা রোগীর অবস্থানুযায়ী নির্ধারিত হবে।
পিভমেসিলিনাম (Pivmessilinam)
WHO স্বীকৃতি একটি আমাশয় ঔষধ হচ্ছে পিভমেসিলিনাম। ডাক্তারদের পছন্দের শীর্ষ স্থানে এটি থাকে বরাবরই। সাধারণত রোগী কে দিনের কয়েক ঘন্টা পরপর তাদের রোগের ধরণ অনুযায়ী খাওয়ার পরামর্শ দেয় ডাক্তাররা। ব্যাক্টেরিওলজিকাল কারণ গুলো ধ্বংস করে থাকে এটি। তাছাড়া পেট ব্যাথা ও বমি বমি ভাব ও নিয়ন্ত্রণ করে। ঔষধ গ্রহনের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক।
ব্যাসিল্যাক্স ট্যাবলেট (Basilex Talet)
ব্যাসিলেক্স ট্যাবলেট আমশয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ এলোপ্যাথি ঔষধের নাম। এটি আমাশয়ের ব্যাক্টেরিয়া কে ধ্বংস করে। ফলে, এটি অন্য মাত্রা আরও কমিয়ে দেয়৷ দিনে কয়েকবার খাওয়ার আগে অথবা পরে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই ঔষধের।
পিভিসিল ট্যাবলেট(Pivicil Tablet)
পিভিসিল আমাশয়ের গুরুত্বপূর্ণ ট্যাবলেট গুলোর অন্যতম। পেটের ভিতরে ব্যকটেরিয়া কতৃক আক্রান্ত হওয়ার ফলে যে ক্ষত হয়, তা পিভিসিল ট্যাবলেট নিয়ন্ত্রণ করে। পেটের দীর্ঘমেয়াদি ব্যাথার উপশমেও ব্যবহৃত হয়। এটি পেটের অভ্যন্তরীণ ব্যাকটেরিয়া জনিত ক্ষত দূর করে। খাওয়ার পরে দিনে ৩ বার একটা করে ট্যাবলেট গ্রহণ করার নিয়ম এটির। ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। সাধারণ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
ফ্লাজিল ট্যাবলেট (Flagyl Tablet)
ফ্লাজিল ৪০০ মি.গ্রা আমাশয়ের সব ঔষধ গুলোর মধ্যে দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয়। এটি সবাই ব্যবহার করে থাকে৷ আমাশয় ছাড়া বদ হজম, মাথা ব্যাথার সমস্যা সমাধানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ ফ্লাজিল সব বয়সী মানুষ-ই খেয়ে থাকে। সাধারণত খাওয়ার পরে ১ টি করে খাওয়ার নির্দেশ দেয় ডাক্তাররা। তবে খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
আলেক্সিড ট্যাবলেট (Alexid Tablet)
আলেক্সিড ট্যাবলেট আমাশয়ের আরেকটি কার্যকরী ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আলেক্সিড আমাশয় ছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় ও ডাক্তাররা ব্যবহার করে থাকেন। আলেক্সিড সাধারণত আমাশয় রোগের সহ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত খাওয়ার আগে দিনে তিনবার একটা করে খাওয়ার নির্দেশ আলেক্সিডের। ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক।
এমছিল ট্যাবলেট (Emcil Tablet)
এমছিল আমাশায়ের গুরুত্বপূর্ণ এলোপ্যাথিক ঔষধের অন্যতম। আমাশয় রোগীর আমাশয় নিরাময়ে এটি ব্যবহৃত হয়। আমাশয় আমাদের দেহের পানির যে ঘাটতি পূরণ করে, আমাশয় সেটি নিয়ন্ত্রণ করে। আমাশয় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ঔষধ। খাওয়ার পরে দিনে ২-৩ টি ট্যাবলেট গ্রহণ করার নিয়ম আমাশয় রোগীর। তবে রোগীর অবস্থানুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক।
লেক্সিপেন ট্যাবলেট (Lexipen Tablet)
লেক্সিপেন আমাশয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমাশয়ের এলোপ্যাথিক ঔষধ। আমাশয় রোগীর শারিরীক দূর্বলতা নিয়ন্ত্রণে এটি রীতিমতো ম্যাজিকের মতো কাজ করে। ডাক্তাররা লেক্সিপেন প্রায়ই ব্যবহার করে তাদের শারীরিক দূর্বলতা থেকে মুক্তি পেতে৷ আমাশয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময় পরপর দিনে কয়েকটি করে ব্যবহার করা হয়৷ রোগীর অবস্থানুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই ব্যবহার করা শুরু করা উচিত।
জক্স ট্যাবলেট (Zox Tablet)
জক্স অনেক পুরনো একটি ট্যাবলেট যেকোনো আমাশয়ের প্রতিষেধক হিসেবে। জক্স ট্যাবলেট আমাশয় রোগীর কাঙ্ক্ষিত সুস্থ্তা এনে দিতে অনেক দিন যাবৎ ব্যবহৃত হয়ে আয়াছে। আবার ডাক্তাররাও এর ওপর আস্থা রাখেন। জক্স ট্যাবলেটের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। প্রতিদিন ২-৩ টি খাওয়ার পর ব্যবহারের পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। এর এখনো পর্যন্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
রিলেক্সিড ট্যাবলেট (Relexid Tablet)
রিলেক্সিড আমাশয় পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিক, মাথা ও পেট ব্যাথা নিরাময়ে উপশম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রিলেক্সিড আমাশয় নিরাময়ে উপযুক্ত একটি সবক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী একটি উপযুক্ত ঔষধ। রিলেক্সিড সাধারণত খাওয়ার আগে ১-৩ টি বয়স ভেদে খাওয়ার নিয়ম। তবে খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
পিনাম ট্যাবলেট (Pinam Tablet)
পিনাম আমাশয় উপশম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া পিত্তথলি থেকে অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিড পাকস্থলী তে প্রয়োগ করে এটি পাকস্থলীর ভিতরের অবস্থা আরও এসিডীয় করে ফেলে। ফলে আমাশয়ের ব্যকটেরিয়ার ভিতরে বেচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। বৃহদান্ত ও ক্ষুদ্রান্ত্রের নিরাময় করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাওয়ার আগে প্রতিদিন ৩ টি ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন। তবে কত দিন খেতে হবে তা, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জেনে নিতে হবে রোগী শারীরিক অবস্থা বিবেচনায়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তর।
আমাশয় রোগে কোন ধরনের ঔষধের কার্যকারিতা বেশি?
আমাশয় রোগের প্রতিষেধক হিসেবে হোমিনিন ও এলোপ্যাথি উভয়ই কার্যকরী। তাই, আমরা আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম সমূহ বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আমাশয় রোগের লক্ষ্মণ কী কী?
আমাশয় রোগের লক্ষ্মণ গুলো হচ্ছে, পাতলা পায়খানা হওয়া দুর্গন্ধযুক্ত, খিচুনি, বমি বমি ভাব, ক্ষুধা মন্দা, জ্বর ও সর্দি। সবকিছু থেকে মুক্তি পেতে আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম থেকে ঔষধ সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
উপসংহার
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম ও আমাশয়ের বিস্তারিত সম্বন্ধে আমরা জেনেছি। আমাশয় অত্যন্ত ভয়াবহ রোগ। আমাশয় থেকে মুক্তি পেতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধের বিকল্প নাই। পাশাপাশি প্রতিরোধ করতে আমাদের জীবন যাপনে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। যার ফলে আমরা আমাশয় হওয়ায় সমস্ত কারণ থেকেই দূরে থাকতে পারবো। স্বাস্থ্য সকল সুখের মুল। সেই স্বাস্থ্যকে রোগ মুক্ত রাখতে হলে ঔষধ ও বিশুদ্ধ জীবন যাপনের বিকল্প নাই। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে পাইলস এর এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম” এ বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ!
পাতলা পায়খানার সাথে আম যাচ্ছে। সেই সাথে জ্বর। কি ওষুধ খেতে হবে?