কোন ধরনের মাটিতে আলু উৎপাদন বেশি হয় চাষে আগ্রহীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আলু আমাদের দেশে পরিচিত এক অত্যন্ত সহজলভ্য সবজি | বালাদেশে আলু অর্থকরী ফসলও বটে। প্রতি বছর এ দেশে আলুর উৎপাদন এত বেশি যে দেশীয় চাহিদা পূরন করার পর বিদেশে রপ্তানিও করা হয়। তার পরও খাদ্য হিসেবে আলুর ব্যবহার দিন দিন এমনভাবে বেড়ে গেছে যাচ্ছে যে বাজারে আলুর দাম ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সে কারনে প্রতি বছরই আলুর মৌসুম শুরুর হওয়ার আগেই শুধু কৃষকরাই নয় যারা কৃষি কাজের সাথে জড়িত নন এমন অনেকেই আলু চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। কারণ আলু চাষে স্বল্প সময়ে লাভ যেমন বেশি তেমনি এটি আবর অতিব জরুরী নিত্যসবজিতে রুপ নিয়েছে। অনেক সময় কৃষকবন্ধুরা আলু চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন তাই আলু চাষের পূর্বে তাদের আলু সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য জেনে নেওয়া অতিব প্রয়োজন। আলু এমন একটি সবজি যা সারা বিশ্বে জনপ্রিয় ৷ সারা বছর ধরেই এটি যেমন চাষ করা যায় তেমনই আবার এর গুনাগুন, সহজলভ্যতা, প্রয়োজনীয়তা এর চাহিদাকে ধরে রেখেছে ৷
আলু সবজি হিসেবে কি উপকার করে?
আলু একটি সবজি জাতীয় খাবার। অনেক দেশে আবার এটি প্রধান খাদ্য। আলুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম বিদ্যমান আছে ৷ অরগ্যানিক আলুর খোসা আমাদের শরীরকে বিভিন্নভাবে উপকার করে থাকে৷ শরীরকে বাড়তি শক্তি প্রদান করে থাকে৷ এতে প্রটুর পরিমাণে লোহা রয়েছে যা আমাদের শরীরের রক্তকণিকাগুলির কাজ সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে থাকে৷ আলুর খোসায় ভিটামিন বি-৩ রয়েছে যা আমাদের শারীরিক ক্লান্তি এবং চাপ দূর করতে সাহায্য করে ৷ এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারও বিদ্যমান আছে৷ আলুর খোসা কোলন ক্যান্সার, হার্টের সমস্যা, টাইপ ২ ডায়াবেটিজের সম্ভাবনাও দূর করে থাকে৷ আলুর খোসায় রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি, ফ্ল্যাভোনয়েডস্ এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এফেক্টস যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে থাকে ৷ আলুর খোসা আমাদের হার্টকে বিভিন্ন সমস্যা থেকে যেমন দূরে রেখে সুরক্ষা প্রদান করে তেমনই আবার রক্তচাপের ক্ষেত্রেও ভারসাম্য ধরে রাখতে সাহায্য করে থাকে। আলুতে বিদ্যমান ম্যাগনেশিয়াম,পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম এই কাজ করতে সাহায্য করে থাকে।
কোন ধরনের মাটিতে আলু উৎপাদন বেশি হয়?
আলু একটি শক্তিশালী সবজি জাতীয় খাবার। মোটামুটি প্রায় সকল মাটিতেই কম বেশি আলু হয়ে থাকে। তবে আলু চাষের জন্য আদর্শ মাটি হচ্ছে বেলে বা বেলে দো-আরঁ মাটি। হালকা প্রকৃতির মাটি অর্থাৎ বেলে দো-আঁশ মাটি আলু চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। এতে ফলনও যেমন ভালো হয় তেমনি এর গুনগত মানও বজায় থাকে। আমরা নিচে সংক্ষেপে কোন ধরনের মাটিতে আলু উৎপাদন বেশি হয় তা সেই মাটিগুলোর বেশিষ্ট্য জানার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করবো। মাটির মধ্যে যে ধরনের বেশিষ্ট্য বা গুনাগন থাকলে আলু ভালো জন্মে সেই সকল গুনাগুন নিচে উল্লেখ করা হলো।
- বেলে বা বেলে দো-আঁশ মাটিতে আলু ভালো হয়। কারন এই মাটির পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা ভালো।
- দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি আলু উৎপাদনের জন্য বেশ উপযোগী। কারন এই মারি উর্বরতা অন্যান্য মাটি থেকে বেশি।
- আলু চাষের জন্য বায়ূ চলাচল একটি গরুত্বপূণ বিষয়। তাই আলুর জন্য বায়ু চলাচল করতে পারে এরূপ নরম ও ঝুরঝুরে মাটি আলু চাষের জন্য উপযোগী। এতে আলু তাড়াতাড়ি বড় হওয়ার সুযোগ পায়।
- যে মাটিতে প্রচুর পরিমানে জৈব পদার্থ থাকে সেই মাটি আলু চাষের জন্য উপযোগী। বেলে ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে প্রচুর পরিমানে জৈব পদার্থ থাকে।
- যেখানে সূর্যের আলো প্রচুর পরিমানে পড়ে সেখানে আলু ভালো জন্মে। তাই এমন উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমি আলু চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত।
- যে জমিতে পানি সেচ দেওয়ার সুযোগ সুবিধা বেশি ও পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা বেশি সেই জমিতে আলু ভালো জন্মে। সেদিক থেকে বেলে ও বেলে দো-আঁশ মাটি উপযুক্ত। এ জন্য জমি সমতল করতে হয়।
- হালকা ঝরঝরে প্রকৃতির মাটি অর্থ্যাৎ বেলে দো-আঁশ মাটি আলু চাষের জন্য বেশ উপযোগী।
- গোল আলুর মাটিতে প্রচুর জৈব পদার্থ থাকা দরকার। এদিক থেকে বেলে ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে প্রচুর পরিমানে জৈব পদার্থ থাকে।
- আলুর চাষের মাটি পানি নিষ্কাশকযুক্ত, গভীর ও কিছুটা অম্লাত্মক হলে ভালো হয় ৷ যা বেলে ও বেলে দো-আঁশ মাটির মধ্যে বিদ্যমান।
- PH এর পরিমান ৫.৫-৬০ এর মধ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। এতে আলুর জন্য ক্ষতিকর রোগ স্কেভিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না৷
- আলুর জমি গভীরভাবে চাষ করা উচিত৷ এবং দুই পাশে উচঁ থাকবে। তাহলে ভিতরে পানি ধারন করতে পারবে।
- জমি শুধু গভীরভাবে চাষ করলেই হবে না মাটি যাতে মোলায়েম হয় ও ঝুরঝুরা করে প্রস্তুত করা হয় সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে।
- ঢেলা যুক্ত ও আঁটসাঁট জমিতে আলুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়৷ তাই মাটি যত ছোট ও মিহি করা যায় তত ফলন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
কোন ধরনের মাটিতে আলু উৎপাদন বেশি হয় এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
এক বিঘা জমিতে কত মণ আলু হয়?
জমির উর্বরতা, চাষ পদ্ধতি ও বীজের উপর নির্ভর করে এক বিঘা জমিতে কি পরিমান আলু পাওয়া যেতে পারে। তবে বিভিন্ন কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এক বিঘা জমিতে ৩০ থেকে ৪০ মন আলু উৎপাদন হয়ে থাকে।
আলু চাষ ধারনাটি কোথা থেকে আসে?
আলু পেরুভিয়ান-বলিভিয়ান আন্দিজের স্থানীয় থেকে আসা একটি ফসল বা সবজি। এটি দক্ষিণ আমেরিকায় ১৮০০ বছর আগে ইনকাদের দ্বারা চাষ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। ১৬ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে দক্ষিণ আমেরিকার উপনিবেশকারী স্পেনীয়রা ইউরোপে আলু চালু করেছিল বলে পাওয়া যায়। যেমন হল্যান্ডের আলু নামে আলুটি হল্যান্ড থেকে আসা একটি জাত।
উপসংহার
আলু চাষে সেচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। রোপণের সময় জমির জো (চাষের উপযুক্ত সময়) অবস্খা থাকতে হয়। আলুর চারা রোপণের পর ১ থেকে ২টি গাছ যখন মাটির ওপরে উঠে আসে তখন প্রথমবার সার মাটির উপরে প্রয়োগ করতে হয়। এবং এর পর একটি হালকা সেচ দিতে হয়। এই সেচটি সাধারণত চারা রোপণের ৭ দিনের মধ্যে দিতে হয়। এবপর মাটির অবস্থা ও প্রয়োজন অনুযায়ী পুরো চাষ প্রক্রিয়ায় ৩ থেকে ৫ বার সেচ দিতে হয়। তবে টিউবার গঠনের শুরুর সময় অর্থাৎ ৪০ থেকে ৪৫ দিনের সময় মাটিতে রস না থাকলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে বা ফলন কমে যেতে পারে তাই বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করতে হয়। কোন ধরনের মাটিতে আলু উৎপাদন বেশি হয় তা অবশ্যই একজন আদর্শ কৃষককে জানতে হবে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“কোন ধরনের মাটিতে আলু উৎপাদন বেশি হয়” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।