Skip to content
Home » গম কোন মাটিতে ভালো হয়?

গম কোন মাটিতে ভালো হয়?

Which soil does Wheat grow best

গম কোন মাটিতে ভালো হয় এ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ গম চাষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গম  বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। বিভিন্ন ধরনের সুস্বাধু খাদ্য তৈরিতে এটি ব্যবহৃত হয়। শীতকালীন অন্যান্য ফসলের তুলনায় গম চাষ করা সুবিধাজনক। অন্যতম কারণ পানি কম লাগে, রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হয়। বিশ্বের অনেক দেশে গম প্রধান খাদ্যশস্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে ধানের পরে খাদ্যশস্য হিসেবে গমের অবস্থান। বর্তমানে দেশের প্রায় সকল জেলাতেই কম বেশি গমের চাষ করা হয়। তবে রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, জামালপুর, যশোর, দিনাজপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও ও কুষ্টিয়া জেলায় গম বেশি চাষ হয়। বাংলাদেশে গমের অনেক উচ্চফলনশীল জাত রয়েছে। তার মধ্যে কাঞ্চন, আকবর, অগ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ, গৌরব, শতাব্দী, প্রদীপ, বিজয় ইত্যাদি জাত জনপ্রিয়। 

গম মূলত শীতকালীন ফসল। বাংলাদেশে শীতকাল স্বল্পস্থায়ী যার কারণে গমের ভালো ফলন পেতে হলে সঠিক সময়ে সঠিক গম বীজ বপন করা উচিত। আমাদের দেশে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত গম বপনের উপযুক্ত সময়। উঁচু ও মাঝারি দোঁআশ মাটিতে পম ভালো জন্মে থাকে। তবে লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয়। যেসব এলাকায় ধান কাটতে ও জমি তৈরি করতে দেরি হয় সেসব এলাকায় কাঞ্চন, আকবর, প্রতিভা, গৌরব চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় ।

গম কি?

গমের বৈজ্ঞানিক নাম Triticum aestivum.গম এর ইংরেজি হলো Wheat। গম বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত একটি ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ যার আদি উৎপত্তি মধ্যপ্রাচ্যের লেভান্ট অঞ্চলে। কিন্তু এখন গম সারাবিশ্বেই চাষ করা হয়। গম একটি খাদ্যশস্য যা একটি সূক্ষ্ম সাদা ময়দা দেয় যা প্রধানত পাউরুটি, ব্রেড পণ্য (যেমন কেক এবং ক্র্যাকার) এবং পাস্তা (যেমন ম্যাকারনি বা স্প্যাগেটি) এ ব্যবহৃত হয় এবং এটি পশুর খাদ্যেও গুরুত্বপূর্ণ। গম হল একগুচ্ছ ঘাস যা খাড়া টিলার সহ। কিন্তু পাতা ঘূর্ণায়মান হয়। পাতার ব্লেডগুলি গোড়ার কাছে মসৃণ এবং উপরের দিকের ডগার কাছে রুক্ষ হয়। নীচের দিকটি সম্পূর্ণ মসৃণ হয়ে থাকে। গমের ঘাসকে সাধারণত গমের সাথেই উৎপাদন করা হয়ে থাকে। গমের ঘাসে অনেক খনিজ, ভিটামিন এবং অ্যানজাইমা থাকে । গমের ঘাস থেকে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে পাওয়া যায়।

দো-আঁশ মাটি কি?

যে মাটিতে বালি, পলি এবং কর্মকণা প্রায় সমান অনুপাতে বিদ্যমান থাকে তাকে দো-আঁশ মাটি বলে। এ মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই চাষের জন্য সর্বাপেক্ষা উপযোগী হচ্ছে এই মাটি। এ মাটির পানি ধারণ ও শোষণক্ষমতা উভয়ই অনেক বেশি। বাংলাদেশের স্থলভাগের বেশিরভাগ মাটি দো-আঁশ মাটি। কৃষিক্ষেত্রে দো-আঁশ মাটিকে আদর্শ মাটি বলা হয়ে থাকে।

বেলে দো-আঁশ মাটি কি?

বেলে দোআঁশ এক ধরনের মাটি যা বাগান করার জন্য বেশি ব্যবহৃত হয় । এই মাটি বালি, পলি এবং কাদামাটির একটি সঠিক পরিমান ভারসাম্য বজায় রাখে। অনেক লোক তাদের বাগান করার জন্য বেলে দোআঁশ মাটি পছন্দ করে কারণ এটি সাধারণত ভাল পানি নিষ্কাশন করে। 

গম কোন মাটিতে ভালো হয়?

সাধারনত দোআঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি গম চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। এই মাটি সহজে পানি নিষ্কাষন করে থাকে। আবার এঁটেল ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতেও গমের চাষ করা যায়। লবণাক্ত মাটিতে গমের ফলন ভালো হয় না। গম বোনার জন্য একর প্রতি গম বীজের প্রয়োজন হয় ৪৮ কেজি বা বিঘা প্রতি ১৬ কেজির মত। গম কোন মাটিতে ভালো হয় তার জন্য গম চাষোপযোগী মাটির বৈশিষ্ট্য নিচ তুলে ধরা হলো।

  • দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি গম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কারন এই মাটির উর্বরতা ক্ষমতা বেশি ও দ্রুত পানি নিস্কাশন করতে পারে।
  • এঁটেল-দোআঁশ মাটিতেও গমের ভালো চাষ হয়ে থাকে ।
  • বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে গমের চাষ ভালো হয়। কারন এখানকার বেশিরভাগ মাটি এঁটেল দো-আঁশ মাটি। 
  • উত্তরাঞ্চল ছাড়াও কুমিল্লা, টাঙ্গাইল,ঢাকা ফরিদপুরেও গমের চাষ হয়। তবে তুলনামূলকভাবে ফলন কম হয়।
  • এঁটেল দোআঁশ বা দোআঁশ মাটির উর্বরতা ও পরিমিত পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্নের কারনে গম চাষের জন্য আদর্শ।
  • উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি গম চাষের জন্য বেশি উপযোগী। মাঝারি নিচু জমিতেও গম চাষ করা যায় তবে ফলন কম হয়।
  • দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি গম চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। এঁটেল-দোআঁশ মাটিতেও গমের চাষ ভালো হয়।
  • বাংলাদেশের সব কৃষি অঞ্চলের মাটিতে গমের চাষ হয় না। বিশেষ করে হাওর-বাঁওড় ও বিল অঞ্চলে গমের আবাদ করা যায় কারন মাটির পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা কম থাকে।
  • যে মাটিতে pH (অম্ল-ক্ষার) মাত্রা ৬.০০ থেকে ৭.০০ সেসব মাটিতে গম চাষ ভালো হয়।
  • এছাড়াও লোনা মাটিতে গম চাষ করা যায়। তবে এ মাটিতে ফলন তুলনামূলকভাবে কম হয়ে থাকে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

গম কোন মাটিতে ভালো হয় এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।

গম রবি শস্য কেন?

সাধারনত গম চাষের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় আর্দ্র আবহাওয়া থাকার কথা তাই শীতকালে গমের বীজ বপন করা হয় এবং পরবর্তী পর্যায়ে শুষ্ক ও রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া প্রয়োজন কিন্তু 20-25 ডিগ্রি সেলসিয়াসের এর বেশি নয়। অতিরিক্তি তাপমাত্রা গমের বৃদ্ধির জন্য ভালো নয়। এসব কারণে গমকে শীতকালীন ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং রবি মৌসুমে চাষ করা হয়ে থাকে তাই গম রবি শস্য।

গম এর উপকারিতা কি ?

গম হতে যে আটা হয় তার প্রতি ১০০ গ্রাম আটায় আমিষ থাকে ১২.১ গ্রাম, শর্করা থাকে প্রায় ৬৯.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম থাকে প্রায় ৪৮ মিলিগ্রাম, লৌহ প্রায় ১১.৫ মিলিগ্রাম,ভিটামিন বি-১ ০.৪৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.২৯ মিলিগ্রাম, আঁশ ১.৯ গ্রাম এবং খনিজ পদার্থ ২.৭ গ্রাম। এটি হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে, রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখতে, দাঁতের ক্ষয়কে রোধ করতে, দ্রুত ঘা শোকাতে এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণকে রোধ করার জন্য খুবই উপকারি।

উপসংহার

গম আমাদের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফসল। গম চাষে পানির দরকার হয় কম তাই গম চাষ অন্যান্য ফসলের তুলনায় সহজ হয়। গমের রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও কম। ফলে খুব বেশি কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। বিশ্বব্যাপী গম এখন প্রোটিনের নিরামিষ উৎস হিসেবে অত্যন্ত গুরুতপূর্ণ যা মানুষের খাদ্যে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গমে অধিক পরিমানে প্রোটিন থাকে, এছাড়াও ধান ও ভূট্টাতেও এই প্রোটিন পাওয়া যায়। মূলত গম থেকে আটা ও ময়দা তৈরি করা হয়ে থাকে। দেশের মানুষ বিশেষ করে শহরাঞ্চলে সকালের নাস্তার এক বিরাট অংশজুড়ে জায়গা দখল করে আছে গমের আটা বা ময়দার রুটি বা পরোটা।

এছাড়া গম থেকে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা হয়ে থাকে। নানারকম বিস্কুট, কুকিজ, কেক,রুটি, পিঠা, পাস্তা, নুডলস তৈরিতে ব্যবহার করা হয় গম। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় এর অবশিষ্টাংশ। গমের ভুসি গৃহপালিত পশুর খাদ্য ও ঘরের ছাউনির নির্মাণসামগ্রী হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় গমের চাষ তুলনামূলক বেশি হয় হয়। গম কোন মাটিতে ভালো হয় তা জানা গম চাষের পূর্বশর্ত। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে শরীর ফিট রাখার ১০ টি উপায় সম্পর্কে পড়তে পারেন।

“গম কোন মাটিতে ভালো হয়” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *