আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই রয়েছে। আলু এমন একটি সবজি যেটি সবার কাছে পছন্দনীয় একটি খাবার। এই আলুকে কখনো ভর্তা হিসেবে আবার কখনো বিভিন্ন সবজির সাথে রান্না করে খাওয়া হয়। আলু প্রায় মানুষই খেয়ে থাকে। রুটি বা ভাতের পরই খাদ্য তালিকায় আলুর স্থান। এই আলু আবার দ্রুত হজম হয়। সব বয়সের মানুষ আলু খেয়ে থাকে। শরীরের হাড়কে সুস্থ রাখতে আলু বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আলু খাওয়ার ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। আলু স্বাভাবিক সবজি মনে হলেও এটি একটি পুষ্টিগুন সম্বৃদ্ধ সবজি যাতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ বিদ্যমান আছে।
আলু হচ্ছে ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য। আলু প্রতিদিন খাওয়ার ফলে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। অনেকের ধারণা আলু খেলে কোলেস্টেরেলের পরিমাণ বেড়ে যায়। কিন্তু এটা ভুল। আলুকে ভাতের সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। কারণ ভাতে যে পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে আলুতেও সে পরিমাণ পুষ্টি বিদ্যমান আছে। আলুর খোসায় প্রচুর প্রোটিন এবং খনিজ থাকায় আলু খোসাসহ আমাদের খাওয়া উচিত। আলু আমাদের নিত্য দিনের খাদ্য তালিকায় থাকা একটি পুষ্টিকর সবজি। আলুতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। পুষ্টিগুণ গুলো সঠিকভাবে পাওয়ার জন্য তবে নিয়ম অনুযায়ী আলু খেতে হবে।
আলু কি?
আলু একধরনের সবজি জাতীয় খাবার। বাংলাদেশে ও ভারতে এটি দ্বিতীয় খাদ্যশস্য। আলু একটি শর্করা জাতীয় খাবার। এটি শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে থাকে। এ ছাড়াও আলুতে বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান আছে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ব্রিটিশ শাসনামলের সময় আনুমানিক প্রায় ১৭৭২ থেকে ১৭৮৫ সালের মধ্যে ইউরোপের হল্যান্ড থেকে ভারতবর্ষে প্রথমবার আলু আনা হয়। যা তার দেশের নামানুসারে নামকরন করা হয় হল্যান্ডের আলু। এখন বাংলাদেশের বেশিরভাগ এলাকায় হল্যান্ডের আলুর চাষ হয়ে থাকে।
আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ
আমরা আলু শুধু আমরা সবজি হিসেবেই খেয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের কি জানা আছে এতে কি পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে? আলুর উপকারিতা এবং অপকারিতা দুটোই রয়েছে। তাই আমাদের অবশ্যই আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা জানা উচিত। নিচে আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা তুলে ধরা হলো-
আলুর উপকারিতা সমূহ
আলু প্রতিনিয়ত আমাদের খেতে হয় সবজি হিসেবে। আলুকে আমরা ভাতের বিকল্প হিসেবেও গণ্য করতে পারি। আমরা দৈনন্দিন আলু খেলেও জানিনা আলুর উপকারিতা। তাই আমরা এখন জন্য আলুর উপকারিতা সম্পর্কে। নিচে আলুর উপকারিতা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো-
- আলু খাওয়ার কারনে আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে ।
- আলু হজমে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের পেটের অনেক সমস্যা দূর হয়ে যায়।
- আলুতে যে পুষ্টিগুণ রয়েছে সেটি বাত ব্যথা উপশমে অধিক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
- আলুতে অনেক বেশি পরিমাণ ফাইবার থাকে যার ফলে আমাদের হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক থাকে।
- আলু খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কারন আলুতে ভিটামিন A এবং অ্যান্টিঅক্সিডান উভয়ি বিদ্যমান আছে।
- আলুতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইডেট থাকায় ওজন বৃদ্ধি করতে আলু বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
- আলুতে যে ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদি রয়েছে তা হাড়ের জন্য বেশ উপকারী।
- আলুর মধ্যে কিছু আলু যেমন লাল আলু এবং বাদামী আলুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ বিদ্যমান থাকায় এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
- আলু চুল পড়া এবং চুল পাকা রোধে করতে সাহায্য করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে আলু কার্যকরি ভূমিকা পালন করে থাকে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে সোডিয়ামযুক্ত খাবার। তার সঙ্গে পটাশিয়াম থাকলে আরও ভালো হয়। এর সবটাই রয়েছে আলুতে।
- আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার এবং তার সাথে আছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি ১২। সবটাই হৃদ্যন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে।
- আলুতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম এবং আয়রন হাড়ের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে সক্ষম। ফলে নিয়ম করে আলু খাওয়া গেলে হাড়ও ভালো থাকে এবং আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে।
- আলুতে থাকা ফাইবার হজমশক্তিও বৃদ্ধি করে থাকে।
- আলুর ভিটামিন থাকা এ এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- চোখ ফুলে গেলে এই ফোলা দূর করার জন্য আলু গোল করে কেটে চোখে লাগালে সমস্যা দূর হয়ে যায়।
- আলু থেকে রস বের করে নিয়ে তার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে সেই মিশ্রিত রস কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে থাকে
- মুখের ব্রণ দূর করার জন্য আলুর রস এর বিকল্প নাই।
- আলুর রসের সাথে গোলাপজল মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যায় নিমিষেই।
আলুর অপকারিতা সমূহ
আলু প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে পরিপূর্ণ। এতে রয়েছে ভিটামিন C, B6, পটাশিয়াম এবং আরও অনেক উপাদান।আলুর মধ্যে থাকা ফাইবার ও অন্যান্য উপাদান হজমে সাহায্য করে এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তারপরেও আলুতে কিছু অপকারিতাও রয়েছে। নিচে সেই অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো-
- অতিরিক্ত আলু খাওয়ার কারনে অনেকসময় ডায়রিয়া হতে পারে।
- সবুজ আলু বিষাক্ত কারণ এতে 3 – 3 – অ্যালকালয়েড যেমন সোলেনিন, চ্যাকোনিন এবং আর্সেনিক থাকে। এই রাসায়নিকের অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরের মারাত্মক হতে পারে।
- নষ্ট বা পঁচা আলু খাওয়া যাবে না কারণ এগুলো শরীরে বিষাক্ত প্রভাব ফেলে।
- গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কাঁচা আলু খাওয়া ক্ষতিকর তবে ভাজা আলু খাওয়া যেতে পারে।
- আলুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুব বেশি হওয়ায় তাই যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন বা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের আলু খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
- আলুর অতিরিক্ত ব্যবহার রক্তে শর্করার ভারসাম্যহীনতা, ক্ষুধা হ্রাস,ডায়াবেটিসের মতো জটিলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- আলু বেশি পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- এক ধরনের সবুজ আলু পাওয়া যায়। আর এই সবুজ আলুতে এক ধরনের বিষাক্ত সোলেনিন এর সাথে আর্সেনিকও থাকে। তাই অধিক পরিমাণ গ্রহণ করা ক্ষতিকর।
- গর্ভাবস্থায় কাঁচা আলু খাওয়া মারাত্মক তবে আলু ভেজে খাওয়া যেতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কাঁচা আলু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- অতিরিক্ত আলু গ্রহনের ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। তাই আলু পরিমান অনুযায়ী খাওয়া উচিত।
- অধিক আলু খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করা ও ইনসুলিন বেড়ে যায় যার কারনে ডায়াবেটিস হতে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিকস রয়েছে তারা অধিক পরিমানে আলু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
আলু বেশি খাওয়া ক্ষতিকর কেন?
অতিরিক্ত কোনকিছুই খাওয়া ভালো না। অতিরিক্ত বা সাধারণভাবে খুব বেশি আলু খেলে হজমের সমস্যা যেমন পেটে অস্বস্তি, ফোলাভাব এবং গ্যাসের কারণ হতে পারে । তাই যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে তাদের আলু পরিমানমত খাওয়া উচিত।
প্রতিদিন আলু খেলে কি হয়?
আলু আমাদের শরীরকে নানাভাবে উপকার করে থাকে। যেমন আলুতে থাকে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন ও জিংক থাকে ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম । পাশাপাশি আরও থাকে ভিটামিন বি১,ভিটামিন বি২,ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি৯ ,ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই থাকে। তাই খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন আলু থাকা খুবই ভালো।
উপসংহার
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। আলু সাধারণত আমাদের রান্নাঘরের এক অপরিহার্য উপাদান। আলুর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম হৃদপিণ্ডের জন্যও উপকারী। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। আলু সাধারনত ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আলুর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্যে ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে। অতিরিক্ত আলু সেবন স্বাস্থ্যের জন্য আবার ক্ষতিকরও হতে পারে। আলু উচ্চ কার্বোহাইড্রেটের উৎস হওয়ায় এটি ওজন বৃদ্ধির কারণও হতে পারে।
আলুর বিভিন্ন উপকারিতা এবং অপকারিতা আপনাদের সামনে একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে হলো। এই খাদ্যদ্রব্যটি তার নানাবিধ পুষ্টিগুণ এবং বহুমুখী ব্যবহারের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। কিন্তু এর অপকারিতাগুলোও অবহেলা করা উচিত নয়। সমগ্র খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের উপর নির্ভর করে আলুর স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা নির্ধারিত হয়ে থাকে। সচেতন খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন একজন ব্যক্তির সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে থাকে। তাই আমাদের উচিত আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে আলু খাওয়া। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে খাদ্য সংরক্ষণের ৫টি উপায় সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।