পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয় – তার খুঁটিনাটি জেনে এমন সমস্যায় প্রয়োজনীয় কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে তারও একটি রূপরেখা এই পোস্টে তুলে ধরা হয়েছে। জীবনচারণে পরিবর্তন, খাদ্যাভাসে বিভিন্ন অনিয়ম এর কারণে এই মারাত্মক সমস্যা দিনকে দিনকে আমাদের সমাজে খুবই লক্ষণীয় একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন পাইলস আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, এ থেকে কি কি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আর কেনইবা আমাদের পাইলস সমস্যায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে তারই বিস্তারিত থাকছে আজকের পোস্টে। সুতরাং, আপনি যদি না জেনে থাকেন যে, পাইলস কি, কেন হয় আর এ থেকে পরিত্রাণের জন্য করণীয় কি তবে এই পোস্টটি অত্যন্ত মনোযোগসহ পড়তে থাকুন। আশা করছি, পাইলস নিয়ে আপনার মনের হাজারো প্রশ্নের অবসান ঘটবে ইন্শাআল্লাহ্। আলোচনার শুরুতে আমরা জানবো পাইলস কি?
পাইলস কি?
পাইলস বা হেমোরয়েড যাকে বাংলায় অর্শ রোগ বলা হয় তা হচ্ছে, মলদ্বারের নীচে শিরার প্রদাহ বা ফুলে যাওয়া। এটি একটি সাধারণ সমস্যা যা প্রায়শই বয়স্কদের মধ্যে লক্ষ করা যায়। পাইলস সাধারণত ব্যথাহীন হয়, তবে এটি রক্তপাত, চুলকানি এবং অস্বস্তির কারণও হতে পারে।
পাইলস কয় ধরণের হতে পারে?
পাইলস দুই ধরণের হতে পারে-
অভ্যন্তরীণ পাইলস

এই পাইলস মলদ্বারের ভিতরে থাকে এবং সাধারণত ব্যথাহীন হয়ে থাকে। তবে, তারা রক্তপাত করতে পারে, যা মল বা টয়লেট পেপারে লালচে দাগ হিসাবে দেখা যায়।
বাহ্যিক পাইলস

এই পাইলস মলদ্বারের বাইরে থাকে এবং ব্যথা বা অস্বস্তির কারণ হতে পারে। তারা স্পর্শে নরম বা শক্ত হতে পারে এবং রক্তপাত ঘটাতে পারে।
এছাড়াও গ্রেড – ১, গ্রেড – ২, গ্রেড – ৩ এবং গ্রেড – ৪ নামেও পাইলসের কিছু প্রকার লক্ষ করা যায়।
পাইলস কেন হয়?
পাইলস হওয়ার নির্দিষ্ট কোন কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। তবে নিচের বিষয়গুলো পাইলস এর জন্য দায়ী কিংবা পাইলসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- আমরা অনেকেই মলত্যাগের সময় চাপ দিয়ে মলত্যাগের চেষ্টা করি যা পাইলসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
- আমাদের মধ্যে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তারা মূলত পাইলস নামক ব্যাধির খুবই নিকটে।
- খুব বেশি সমস্যা না হলে দীর্ঘক্ষণ ধরে মলত্যাগ করা যাবে না। এতে করে পাইলস হওয়ার কিংবা এর ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- গর্ভাবস্থায় মলদ্বারের আশে-পাশে প্রচুর চাপ অনুভূত হয়। এ সময় পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- ডায়রিয়া এর কারণে পাইলস এর সমস্যা বাড়তে পারে। সুতরাং ডায়রিয়া হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
- পরিবারের অন্য কারো পাইলস থাকলে এটি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত একটি সমস্যাও হতে পারে।
- আমাদের অনেকের মলত্যাগ নিয়মিত হয় না। এটি বিভিন্ন সমস্যার কারণে হতে পারে। আর এর কারণে পাইলস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
- আমাদের মধ্যে যারা বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে তাদের পাইলসের ঝুঁকি বেশি।
পাইলসের লক্ষণ
আমরা জানলাম যে, বিভিন্ন কারণে পাইলস হয়ে থাকে। এবার আমরা জানবো কোন কোন লক্ষণগুলো দেখা দিলে আমরা বুঝবো যে, আমাদের পাইলস হয়েছে।
- মলদ্বারের চারপাশে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
- মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি হতে পারে।
- মল বা টয়লেট পেপারে লালচে দাগ দেখা দিতে পারে।
- মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে আসা নরম বা শক্ত গোলাকার টিউব
আপনাদের মধ্যে কারো যদি উপর্যুক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তবে অনতিবিলম্বে চিকিৎসা গ্রহনের চেষ্টা করুন। সেই সাথে, যে সকল কারণে পাইলস হতে পারে যা আমরা উপরে তুলে ধরেছি তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহন করুন।
পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয়

এতক্ষন আমরা দেখলাম পাইলস কি, কেন হয় আর পাইলসের লক্ষণগুলো কি কি? প্রিয় পাঠক, এ পর্যায়ে আমরা জানবো পাইলসের কারণে যে সকল সমস্যা দেখা দিতে পারে তার বিস্তারিত তথ্য। সাথেই থাকুন আর জেনে নিন পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয়? পাইলস হলে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো হতে পারে-
মলদ্বারের চারপাশে ব্যথা বা অস্বস্তি
এটি পাইলসের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। এরকম লক্ষণ প্রকাশ পেলে বুঝতে হবে আপনার পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে। নিশ্চয় মলদ্বারের চারপাশে ব্যাথা বা অস্বস্তি কোন ভালো বিষয় নয়।
মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি
পাইলস হলে আপনার মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি হতে পারে। সুতরাং যদি মলদ্বারের পাশে চুলকানি লক্ষ করেন তবে তা এড়িয়ে যাবেন না। লক্ষ করে দেখবেন পাইলসের অন্যান্য লক্ষণগুলোও এর সাথে প্রকাশ পেয়েছে কি না? মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি হওয়া কিন্তু পাইলসের আরেকটি সাধারণ লক্ষণ।
মল বা টয়লেট পেপারে লালচে দাগ
এটি পাইলস থেকে রক্তপাতের কারণে হয়। সুতরাং পাইলস হলে মল বা টয়লেট পেপারে লালচে দাগ নামক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে আসা নরম বা শক্ত গোলাকার টিউব
কারো পাইলস হলে মলদ্বার দিয়ে নরম এবং শক্ত গোলাকার টিউবের মত অংশ বেরিয়ে আসে যা স্পষ্ট বোঝা যায়। এটি অভ্যন্তরীণ পাইলসের লক্ষণ।
পাইলস গুরুতর হলে, এটি নিম্নলিখিত সমস্যাগুলোর কারণও হতে পারে-
পাইলস ফেটে যাওয়া
তীব্র ব্যথা এবং রক্তপাতের কারণে মলদ্বারের নরম অংশ ফেটে যেতে পারে। পাইলস সংক্রমিত হওয়া – এমনটা হলে সেখানে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং মলদ্বারে ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে এবং সেই সাথে, অন্যান্য সমস্যাও তৈরী হতে পারে।
পাইলস থেকে টিউমারের বিকাশ
পাইলস নামক সাধারণ সমস্যা এক সময় বেশি হতে থাকলে তা টিউমারের বিকাশ সৃষ্টি করতে পারে। এটি একটি গুরুতর জটিলতা যা রক্তপাত, ব্যথা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করে থাকে।
পাইলস হলে কি কি খাবার খাওয়া নিষেধ
আমরা এবার দেখবো পাইলস হলে কোন কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবে না আর কোন খাবারগুলো বেশি বেশি খাওয়া উচিত। পাইলস হলে নিম্নলিখিত খাবারগুলি খাওয়া নিষেধ-
কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টিকারী খাবার

যেসব খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে সেগুলো পাইলসকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। এই খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে-
- বাদাম
- বীজ
- মসুর ডাল
- লাল মাংস
- দুগ্ধজাত খাবার
- ভাজা খাবার
- প্রক্রিয়াজাত খাবার
মশলাদার খাবার

মশলাদার খাবার মলদ্বারে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে যা পাইলসের ব্যথা এবং অস্বস্তিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
অ্যালকোহল

অ্যালকোহল মলদ্বারের শিরাগুলিকে প্রসারিত করতে পারে, যা পাইলসের বিকাশকে উৎসাহিত করতে পারে।
কফি এবং চা

কফি এবং চায়ের ক্যাফিন মলদ্বারের শিরাগুলোকে প্রসারিত করতে পারে, যা পাইলসের বিকাশকে উৎসাহিত করতে পারে।
পাইলস হলে নিম্নলিখিত খাবারগুলো খাওয়া উচিত
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার

ফাইবার মলকে নরম করে এবং মলত্যাগকে সহজ করে তোলে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে-
- ফল
- শাকসবজি
- পুরো শস্য
- লেবুর রস
তরল

পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল পান করা মলকে নরম করে এবং মলত্যাগকে সহজ করে তোলে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

প্রোটিন পেশী গঠনে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে-
- মাছ
- মুরগির মাংস
- ডিম
- দুগ্ধজাত খাবার
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
পাইলস কি, কেন হয়, এর ফলে কি কি সমস্যা হয়ে থাকে অর্থাৎ, পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয়, এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি এমন নানান তথ্য জেনে নিশ্চয় আপনার খুবই ভালো লেগেছে। পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয় এ সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
হেমোরয়েড হলে কখন চিন্তিত হওয়া উচিত?
হেমোরয়েড সংক্রমিত হয়ে ফেটে যেতে পারে – এমনটা হলে তা আপনার জন্য চিন্তার বড় কারণ হতে পারে। দীর্ঘ সময় এমনটা চলতে থাকলে এক সময় টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় আপনাকে চিন্তিত হতেই হয়।
পাইলস রোগের চিকিৎসা কি?
পাইলস রোগের চিকিৎসার লক্ষ্য হল ব্যথা এবং অস্বস্তি কমানো এবং রক্তপাত বন্ধ করা। পাইলসের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে, যার মধ্যে, বিভিন্ন ব্যাথানাশক, মল নরমকারী এবং রক্তপাত বন্ধ করার ঔষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। পাইলস সংকোচন চিকিৎসা করা যেতে পারে অথবা পাইলস অপসারণ করতে অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে।
উপসংহার
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সাধারণ একটি সমস্যা পাইলস এর বিষয়ে আপনি নিশ্চয় বিস্তর তথ্য পেয়েছেন? যদি এ বিষয়ে আপনার নতুন কিছু জানা থাকে অর্থাৎ, ‘পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয়‘ আপনি যদি আমাদের আলোচনার বাইরে এ বিষয়ে নতুন কোন তথ্য জেনে থাকেন তবে তা মূল্যবান কমেন্ট আকারে কমেন্ট বক্সে তুলে ধরুন।
এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।আপনাদের সকলের সু-স্বাস্থ্য কামণা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ্ হাফেজ।