Skip to content
Home » ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়?

ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়?

What Are The Problems With Diabetes

ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয় তা জানা আমাদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই সমস্যার সমাধান সম্পর্কে ধারণা নিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। আপনি কি জানেন কেন ডায়াবেটিস হয়? এই ব্যাধি দেখা দিলে কি করা উচিত এমন দুঃশ্চিন্তা অনেকের মাঝে লক্ষ্য করা যায়। আজকে আমরা ডায়াবেটিস নামক রোগের বিস্তারিত তথ্য যেমন ডায়াবেটিস এর কারণে কি কি সমস্যা হতে পারে, সেই সমস্যা থেকে উত্তোরণের উপায় কি এগুলো খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করবো। সাথে থাকবেন তো! তাহলে দেরি না করে বরং চলুন শুরু করা যাক-

ডায়াবেটিস কি?

What Is Diabetes

ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয় তা জানার পূর্বে আমাদের ডায়াবেটিস কি বিষয় তা বিস্তারিত জানা দরকার। ডায়াবেটিস এর কারণে দীর্ঘমেয়াদে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকে আর এর উপযুক্ত কারণ হতে পারে শরীর ইনসুলিন এর স্বাভাবিক উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয় অথবা, উৎপন্ন হওয়া ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করে না। বর্তমান সময় বিশ্বে অনেক মানুষ প্রতিনিয়তই এমন সমস্যার শীকার হচ্ছেন আর ক্রমেই তা বেড়ে চলেছে। এখন পর্যাপ্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা না গড়ে তুললে সমস্যা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। 

ডায়াবেটিস কেন হয়?

Why Does Diabetes Occur

ডায়াবেটিস মূলত দুই ধরনের হয় – টাইপ ১ এবং টাইপ ২। টাইপ ১ ডায়াবেটিস একটি অটোইমিউন রোগ, যার মানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষগুলিকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে দেয়। বিটা কোষগুলি শরীরের ইনসুলিন উৎপন্ন করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের নির্দিষ্ট কারণ অজানা, তবে জিনগত এবং পরিবেশগত কারণগুলির একটি সম্মিলিত প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করা হয়। বুঝতে পারছেন নিশ্চয়! টাইপ ২ ডায়াবেটিস একটি বিপাকীয় রোগ, যার মানে শরীর ইনসুলিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ওজন বেশি হওয়া, শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকা, বংশগত কারণ এবং বয়স।

ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ কি কি?

What Are The Symptoms Of Diabetes

ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণগুলো সাধারণত রক্তের শর্করার মাত্রা খুব বেশি হয়ে গেলে দেখা দেয়। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে, লক্ষণগুলি দ্রুত বিকাশ লাভ করতে পারে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে, লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করতে পারে এবং এমনকি অনুপস্থিতও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ডায়াবেটিসের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-

  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা
  • অতিরিক্ত প্রস্রাব
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি
  • অজানা কারণে ওজন হ্রাস
  • ঝাপসা দৃষ্টি
  • ক্ষত সারতে দেরি
  • প্রায়শই যোনি সংক্রমণ
  • অতিরিক্ত প্রস্রাবের প্রবণতা
  • দ্রুত ওজন হ্রাস
  • প্রচণ্ড ক্ষুধা
  • অস্বাভাবিক বিরক্তি
  • বমি বমি ভাব 
  • পেটে ব্যথা
  • অপ্রীতিকর গন্ধের অনুভূতি
  • চুলকানি
  • ধীরে গতিতে ক্ষতস্থান নিরাময় 
  • হাতে এবং পায়ে ঝিনঝিন 
  • মূত্রনালীতে সংক্রমণ
  • মেজাজ পরিবর্তন
  • মাথাব্যথা
  • মাথা ঘোরা 
  • বগল এবং ঘাড়ের কাছে কালচে ছাপ

ডায়াবেটিসের আরও গুরুতর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে-

ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস

Diabetic Ketoacidosis

কিটোসিসের ফলে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে কিটোন এসিড জমা হয় যা ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস নামে পরিচিত। 

ডায়াবেটিক হাইপোগ্লাইসিমিয়া

Diabetic Hypoglycemia

রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কম (4mmols/l এর থেকেও কম) হয়ে গেলে এটি ঘটে থাকে। সাধারণত ডায়াবেটিসের কতিপয় ঔষুধ এবং ইনসুলিনের জন্য পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে একে বিবেচনা করা হয়। আপনি যদি এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন তবে আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই একটি সমস্যা আপনাকে অন্যান্য রোগেও ভুগাতে পারে। তাই সাধু সাবধান! 

ডায়াবেটিস সঠিকভাবে পরিচালনা না করা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে কিছু লক্ষণ বয়স, লিঙ্গ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য অবস্থার উপর নির্ভর করে আলাদা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলির মধ্যে পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। বয়স্কদের মধ্যে ডায়াবেটিসের লক্ষণ কম স্পষ্ট হতে পারে।

ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়?

ডায়াবেটিস হলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে গুরুতর যেসব সমস্যা হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে-

হৃদরোগ

Heart Disease

ডায়াবেটিস হৃদরোগ, স্ট্রোক, এবং রক্তনালীতে জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়। সুতরাং সর্তক থাকা অত্যন্ত জরুরী।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি

Diabetic Retinopathy

ডায়াবেটিস চোখের রেটিনার ক্ষতি করতে পারে, যা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। চোখের পশ্চাৎভাগের যে অংশটি আলোকে বৈদ্যুতিক সংকেতে পরিবর্তন করে তার গুরুতর ক্ষতি করে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি।

ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি

Diabetic Nephropathy

ডায়াবেটিস কিডনিতে ক্ষতি করতে পারে, যা কিডনি ব্যর্থতার কারণ হতে পারে। এমনটা ঘটে থাকে সাধারণত ব্লাড সুগারের কারণে।

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি

Diabetic Neuropathy

ডায়াবেটিস স্নায়ুকে ক্ষতি করতে পারে, যা ব্যথা, অসাড়তা, এবং অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে। অনেক সময় হাতে কিংবা পায়ে অথবা শরীরে অন্য কোন অঙ্গে আঘাত ঘটলে কোন টের পাওয়া যায় না। এমন সমস্যাকে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি বলে।

ডায়াবেটিস ফুট আলসার

Diabetic Foot Ulcers

ডায়াবেটিস পায়ে রক্ত ​​সঞ্চালন কমাতে পারে, যা ক্ষত নিরাময় করতে দেরি করতে পারে বা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

ডায়াবেটিস থেকে নিরাপদ থাকার উপায়

ডায়াবেটিস থেকে নিরাপদ থাকার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:

স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা

Maintaining A Healthy Weight

অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। সুতরাং স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরী।

নিয়মিত ব্যায়াম করা

Exercise Regularly

নিয়মিত ব্যায়াম রক্ত ​​শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সুতরাং চেষ্টা করবেন নিয়মিত ব্যায়াম করার।

স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া

Ways To Stay Safe From Diabetes

মনে রাখবেন বেঁচে থাকার জন্য সঠিক এবং স্বাস্থ্যকর খাবার অত্যন্ত আবশ্যকী একটি বিষয়। স্বাস্থ্যকর খাবার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

ধূমপান ত্যাগ করা

Quit Smoking

আপনি কি ধূমপান করেন? যদি এমন স্বভাব থাকে তবে দ্রুত তা দূর করে ফেলুন। কেননা, ধূমপান ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করা এড়ানো

মদ্যপান মানে বিষপান এটি কথিত একটি কথা হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বাক্য। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। ডায়াবেটিস থেকে নিরাপদ থাকার জন্য আপনি কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপও গ্রহন করতে পারেন।

নিয়মিত রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা

Check Blood Sugar Levels Regularly

এটি আপনাকে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।

ডাক্তারের নির্দেশাবলী অনুসরণ করা

Follow The Doctor's Instructions

ডাক্তার আপনাকে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করার জন্য ওষুধ, খাদ্য পরিবর্তন বা ব্যায়ামের পরামর্শ দিতে পারেন।

স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া

Eat Healthy Food

ডাক্তারের সাথে নিয়মিত চেকআপ করা এবং আপনার স্বাস্থ্যের অন্যান্য দিকগুলির যত্ন নেওয়া ডায়াবেটিসের জটিলতাগুলির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, তবে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

ডায়াবেটিস কেন হয়, এরূপ সমস্যা দেখা দিলে করণীয় কি তার বিস্তারিত জেনেছেন নিশ্চয়। ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয় এ সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-

ডায়াবেটিস কিভাবে নির্ণয় করা হয়?

Taking Care Of Health

ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য রক্তের শর্করার পরীক্ষা করা হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থাকে।

ডায়াবেটিস কিভাবে পরিচালনা করা হয়?

ডায়াবেটিস পরিচালনার জন্য ওষুধ, খাদ্য পরিবর্তন এবং ব্যায়ামের সংমিশ্রণ প্রয়োজন হতে পারে। 

উপসংহার

প্রিয় পাঠক আমরা এতক্ষনে ‘ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়‘ এসব সমস্যা থেকে নিরাপদ থাকার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের আলোচনা আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।

এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে শরীর দুর্বল হলে কি কি সমস্যা হয় এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।আপনি যদি ডায়াবেটিস সম্পর্কে নতুন কিছু জেনে থাকেন তবে আমাদেরকেও জানিয়ে দিবেন এই প্রত্যাশায় আপনাদের সু-স্বাস্থ্য কামণা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আল্লাহ্ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *