কক্সবাজার কিসের জন্য বিখ্যাত তা নিজে জানুন আর অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন এই পোস্টের মাধ্যমে। প্রিয় পাঠক, আমরা জানি বাংলাদেশের ৬৪ জেলা বিভিন্ন দিক থেকে আলাদা হলেও তাদের বিশেষ জনপ্রিয় খাবার, দর্শনীয় স্থানে অনেক মিল লক্ষ করা যায়। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় কক্সবাজার কেন বিখ্যাত তার খুঁটিনাটি জানা যাক তাহলে-
কক্সবাজার কিসের জন্য বিখ্যাত
কক্সবাজার তার সুন্দর সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতটি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতগুলির মধ্যে একটি। এটি ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত। কক্সবাজার কিসের জন্য বিখ্যাত এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানতে পড়তেই থাকুন। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতটি সাদা বালু দিয়ে তৈরি এবং এটি অত্যন্ত স্বচ্ছ। এটি সাঁতার, সূর্যস্নান, জল ক্রীড়া এবং অন্যান্য জল-সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য।
কক্সবাজার জেলার নামকরণ ও ইতিহাস
কক্সবাজার জেলার নামকরণ করা হয়েছে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামে। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স ১৭৭৩ সালে বাংলার গভর্নর ওয়ারেন্ট হোস্টিংয়ের অধীনে পালংকির মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। তিনি এখানে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন এবং বাজারের নামকরণ করেন “কক্স সাহেবের বাজার”। পরবর্তীতে এই বাজারের নাম পরিবর্তিত হয়ে “কক্সবাজার” হয়। কক্সবাজার জেলার ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। প্রাচীনকালে এ অঞ্চলটি হরিকেল রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে এ অঞ্চলটি ত্রিপুরা, আরাকান এবং পর্তুগিজদের দখলে চলে যায়। ব্রিটিশ শাসনামলে এ অঞ্চলটি ব্রিটিশ ভারতের চট্টগ্রাম জেলার একটি অংশ ছিল। ১৯৮৪ সালে কক্সবাজারকে চট্টগ্রাম জেলা থেকে পৃথক করে একটি জেলায় রূপান্তর করা হয়।
কক্সবাজার জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত। কক্সবাজার জেলার উত্তরে চট্টগ্রাম জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বান্দরবান জেলা এবং পশ্চিমে টেকনাফ উপজেলা অবস্থিত। কক্সবাজার জেলার আয়তন ২,৪৯১.৮৬ বর্গ কিলোমিটার। কক্সবাজার জেলার প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হল পর্যটন, কৃষি এবং মৎস্য। কক্সবাজার বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক কক্সবাজারে ঘুরতে আসেন। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত, দ্বীপ এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। কক্সবাজার জেলার প্রধান ফসল হল ধান, পাট, গম, আখ এবং আলু। কক্সবাজার জেলার প্রধান মৎস্য হল চিংড়ি, ইলিশ এবং রুই। কক্সবাজার জেলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এ জেলার সমুদ্র সৈকত, দ্বীপ এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কক্সবাজার জেলার বিখ্যাত খাবার
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এবং জনপ্রিয় জেলা কক্সবাজার এর বিখ্যাত খাবারগুলোর একটি তালিকা আপনাদের সুবিধার্থে এখানে দেওয়া হচ্ছে-
ইলিশ মাছের মালাইকারি
কক্সবাজারের ইলিশ মাছের মালাইকারি অত্যন্ত সুস্বাদু ও জনপ্রিয়। এই মালাইকারিটি তৈরি করা হয় ইলিশ মাছ, মালাই, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, জিরা, ধনে, গরম মশলা ইত্যাদি দিয়ে।
মুন্ডি
মুন্ডি একটি নুডলস জাতীয় খাবার যা কক্সবাজারের পাহাড়ি আদিবাসী সম্প্রদায় দ্বারা তৈরি করা হয়। মুন্ডি সাধারণত মুরগির স্যুপ দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
লইট্যা ফ্রাই
লইট্যা একটি ছোট মাছ যা কক্সবাজারের সমুদ্রে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। লইট্যা ফ্রাই সাধারণত তেলে ভাজা হয় এবং এটি বেশ সুস্বাদু।
চিকেন ফ্রাই
আপনি কক্সবাজারে বিভিন্ন ধরনের চিকেন ফ্রাই পাবেন। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রাই, চিকেন স্টিক, চিকেন পপকর্ন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
চিংড়ি ভাজা
কক্সবাজারে বিভিন্ন ধরনের চিংড়ি ভাজা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে চিংড়ি ভাজা, চিংড়ি ফ্রাই, চিংড়ি কাবাব ইত্যাদি।
মোচা ভাত
মোচা ভাত কক্সবাজারের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই ভাতটি তৈরি করা হয় ভাত, মাংস, বিভিন্ন ধরনের মাছ ও ডিমের সম্মিলিত একটি খাবার।
মধু ভাত
আপনি কখনো মধু ভাতের কথা শুনেছেন? মধু ভাত কক্সবাজারের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই ভাতটি তৈরি করা হয় ভাত, মধু, দুধ, চিনি ইত্যাদি দিয়ে।
বাঁশখালীর খিচুড়ি
বাঁশখালীর খিচুড়ি কক্সবাজারের একটি বিখ্যাত খাবার। এই খিচুড়িটি তৈরি করা হয় চাল, ডাল, মাংস, মাছ, সবজি ইত্যাদি দিয়ে।
চিকেন লাকসু
চিকেন লাকসু একটি মুখরোচক খাবার যা কক্সবাজারের বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
বৈদ্যনাথ ঝিঙা
বৈদ্যনাথ ঝিঙা একটি স্থানীয় ধরনের ঝিঙা যা কক্সবাজারের বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। বৈদ্যনাথ ঝিঙা সাধারণত ঝোল দিয়ে রান্না করা হয়।
কাঁকড়া ভুনা
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে প্রচুর পরিমাণে কাঁকড়া পাওয়া যায়। কক্সবাজারের কাঁকড়া ভুনা বেশ সুস্বাদু।
কক্সবাজার জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
কক্সবাজার জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। এ জেলার সুন্দর সমুদ্র সৈকত, দ্বীপ এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। কক্সবাজার জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে-
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতগুলির মধ্যে একটি। এটি ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি সাদা বালু দিয়ে তৈরি এবং এটি অত্যন্ত স্বচ্ছ। এটি সাঁতার, সূর্যস্নান, জল ক্রীড়া এবং অন্যান্য জল-সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য।
ইনানী সমুদ্র সৈকত
ইনানী সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের একটি অংশ। এটি কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ইনানী সমুদ্র সৈকতটি তার সুন্দর দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত।
মহেশখালী দ্বীপ
মহেশখালী দ্বীপটি কক্সবাজার জেলার একটি দ্বীপ। এটি কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মহেশখালী দ্বীপটি তার সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত।
সোনাদিয়া দ্বীপ
সোনাদিয়া দ্বীপটি কক্সবাজার জেলার অন্য একটি জনপ্রিয় দ্বীপ। এটি কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সোনাদিয়া দ্বীপটি তার সুন্দর সৈকত এবং নীল সমুদ্রের জন্য বিখ্যাত।
হিমছড়ি
হিমছড়ি কক্সবাজার জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যটন কেন্দ্র। এটি কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হিমছড়ি তার সুন্দর পাহাড় এবং সমুদ্রের জন্য বিখ্যাত।
দ্বীপের বাজার
দ্বীপের বাজারটি কক্সবাজার শহরের একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। এটি কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। দ্বীপের বাজারটি তার সুস্বাদু খাবারের জন্য বিখ্যাত।
বার্মিজ বাজার
দ্বীপের বাজার এর মত বার্মিজ বাজারটি কক্সবাজার শহরের একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। এটি কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। বার্মিজ বাজারটি তার সুস্বাদু বার্মিজ খাবারের জন্য বিখ্যাত।
রামুর ঐতিহাসিক মসজিদ
রামুর ঐতিহাসিক মসজিদটি কক্সবাজার জেলার একটি ঐতিহাসিক মসজিদ যা কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। রামুর ঐতিহাসিক মসজিদটি তার সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত।
কক্সবাজার জাদুঘর
কক্সবাজার জেলার অন্যতম একটি জাদুঘর হচ্ছে, কক্সবাজার জাদুঘর যা কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এই জাদুঘরটি কক্সবাজার জেলার ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।
এছাড়াও, কক্সবাজার জেলায় বেশ কিছু ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে, যেমন নাফ Island, সেন্টমার্টিন Island, ছেঁড়া দ্বীপ, এবং কুতুবদিয়া Island। এসব দ্বীপও পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।
কক্সবাজার জেলার প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গ
কক্সবাজার জেলার উন্নয়নে অনেক ব্যক্তি ভূমিক রাখেন। বিশেষ বিশেষ কাজে ভূমিকা রাখা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ব্যক্তির তথ্য আমরা এখানে উল্লেখ করছি।
- সলিমুল্লাহ খান – তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন অধ্যাপক, লেখক, গবেষক, আইনজ্ঞ ও রাজনীতি বিশ্লেষক।
- আশেক উল্লাহ রফিক – তিনি কক্সবাজার জেলার অন্যতম রাজনীতিবিদ। এছাড়াও তিনি দেশের কাজের জন্য কর্মঠ নেতা।
- জাফর আলম – বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম রাজনীতিবিদ হচ্ছেন জাফর আলম।
- ইলিয়াস কোবরা – বাংলাদেশের চলচিত্র জগতের একজন প্রখ্যাত অভিনেতা। তিনি দীর্ঘকাল ধরে চলচিত্রে কাজ করেছেন।
- শিরিন আক্তার – জনপ্রিয় এবং জন-নন্দিত শিক্ষাবিদ হিসেবে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।
- সত্যপ্রিয় মহাথের – তিনি একজন জনপ্রিয় বৌদ্ধ পণ্ডিত। তাকে মেনে অনেক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর মানুষ তাদের ধর্ম পালন করেন।
- এ.টি.এম. জাফর আলম – স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত;
- নুরুল হুদা – স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শণের জন্য বীর প্রতীক উপাধীতে ভূষিত হোন।
- আনিসুর রহমান জিকো– বাংলার বাজপাখি হলেন আনিসুর রহমান জিকো। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে একজন গোলরক্ষক হিসেবে খেলেন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত কক্সবাজার জেলা নিয়ে হয়তো আপনার মনের প্রশ্নগুলোর কিছুটা অবসান ঘটানো গেছে। কি বলেন? কক্সবাজার কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
কক্সবাজার কোথায় অবস্থিত?
কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি জেলা। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত। কক্সবাজার শহরটি বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত।
কক্সবাজারের আয়তন কত?
কক্সবাজার জেলার আয়তন ২৪৯১.৮৬ বর্গ কিলোমিটার।
কক্সবাজারের জনসংখ্যা কত?
আদমশুমারি অনুযায়ী, কক্সবাজার জেলার মোট জনসংখ্যা ২২,৮৯,৯৯০ জন।
কক্সবাজারের প্রধান নদী কোনটি?
কক্সবাজারের প্রধান নদী হল মাতামুহুরী নদী। এটি কক্সবাজার শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
উপসংহার
কক্সবাজার জেলা তার অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। শুধু কি তাই! এখানে পাওয়া যায় মিষ্টিপান যা একবার খাওয়ার পর অনেক সময় ধরে মুখের মধ্যে তার মিষ্টতা থেকে যায়। এখানে থাকা সমুদ্র সৈকতে প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণপ্রিয় দর্শক সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য যান। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে রাজশাহী কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।
কক্সবাজার কিসের জন্য বিখ্যাত বুঝে গেছেন নিশ্চয় । প্রিয় বন্ধুরা অনেক কথা হয়ে গেছে, থাক, আজ আর নয়। আমাদের আজকের পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগলে শেয়ার করে দিবেন। আল্লাহ হাফেজ।