Skip to content
Home » শেরপুর কিসের জন্য বিখ্যাত

শেরপুর কিসের জন্য বিখ্যাত

What Is Sherpur Famous For

শেরপুর কিসের জন্য বিখ্যাত তা জানার জন্য হয়তো অনেকেই ইন্টারনেটের বিভিন্ন জায়গায় তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করেন। আপনাকে কিন্তু এমনটা করতে হবে না। আপনি শেরপুর জেলা বিখ্যাত হওয়ার বিশেষ বিশেষ কারণগুলো দেখে নিন এই পোস্ট থেকে। সুতরাং আপনি যদি শেরপুর সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে চান তবে এই পোস্টটি আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। পড়তে থাকুন…

শেরপুর কিসের জন্য বিখ্যাত

শেরপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত একটি জেলা। এই জেলাটি তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সুস্বাদু খাবারের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। চলুন তাহলে শেরপুর কিসের জন্য বিখ্যাত তা বিস্তারিতরূপে জেনে নিই। 

শেরপুর জেলার নামকরণ ও ইতিহাস

শেরপুর জেলার নামকরণ করা হয়েছে শেরপুর গ্রাম থেকে। শেরপুর গ্রামটি শেরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নে অবস্থিত। এই গ্রামটি একসময় একটি জঙ্গলে ঢাকা ছিল। ১৬শ শতাব্দীতে, তুর্কি সুলতান শের শাহ সুরি এই জঙ্গলে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। দুর্গের নাম ছিল শেরপুর দুর্গ। দুর্গের নাম থেকেই শেরপুর গ্রাম ও শেরপুর জেলার নামকরণ করা হয়। শেরপুর জেলার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। এই অঞ্চলে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই মানুষের বসবাস ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, শেরপুর জেলার ইতিহাস খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দী থেকে শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে, এই অঞ্চলটি মগধ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। এরপর এই অঞ্চলটি গুপ্ত সাম্রাজ্য, পাল সাম্রাজ্য, সেন সাম্রাজ্য এবং মোঘল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। ১৭শ শতাব্দীতে, শেরপুর জেলা তুর্কি সুলতান শের শাহ সুরির অধীনে আসে।

শের শাহ সুরি শেরপুর দুর্গ নির্মাণ করেন এবং এই অঞ্চলের শাসনভার তার পুত্র ইসলাম শাহের হাতে তুলে দেন। ইসলাম শাহের মৃত্যুর পর, শেরপুর জেলা আবারও মোঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। ১৭শ শতাব্দীর শেষের দিকে, শেরপুর জেলা বাংলার নবাবদের অধীনে আসে। ১৮শ শতাব্দীতে, শেরপুর জেলা ব্রিটিশদের অধীনে আসে। ব্রিটিশ শাসনামলে, শেরপুর জেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। ১৯৪৭ সালে, দেশভাগের পর শেরপুর জেলা পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর শেরপুর জেলা বাংলাদেশের একটি জেলায় পরিণত হয়।

শেরপুর জেলার বিখ্যাত খাবার

শেরপুর জেলায় অনেকগুলো জনপ্রিয় খাবার পাওয়া গেলেও আমরা এখানে এই জেলার বিখ্যাত খাবারগুলির মধ্যে বিশেষ কিছু খাবারের তথ্য উল্লেখ করছি। 

ছানার পায়েস

শেরপুরের ছানার পায়েস বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত মিষ্টি। এ পায়েস তৈরিতে তুলসীমালা চাল, ছানা, এবং নানা ধরনের ফল ব্যবহার করা হয়। এ পায়েস খেতে খুব সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর।

ছানার চপ

শেরপুরের ছানার চপও খুব জনপ্রিয়। এ চপ তৈরিতে ছানা, পেঁয়াজ, মরিচ, এবং আদা ব্যবহার করা হয়। এ চপ খেতে খুব সুস্বাদু এবং মুখরোচক।

অনুরাধার দই

আপনি কখনো শেরপুর গেলে অনুরাধার দই খেতে ভুলবেন না কেমন! কেননা, শেরপুরের অনুরাধার দইও খুব বিখ্যাত। এ দই তৈরিতে গাভীর দুধ, চিনি, এবং বিভিন্ন ধরনের ফল ব্যবহার করা হয়। এ দই খেতে খুব সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর।

তুলসীমালা চাল

শেরপুরের তুলসীমালা চাল তার উচ্চমানের জন্য বিখ্যাত। এ চালের দানা ছোট এবং ঝরঝরে। এ চালের ভাত খেতে খুব সুস্বাদু।

কাঁচা গোল্লা

শেরপুরের কাঁচা গোল্লাও খুব জনপ্রিয়। এ মিষ্টি তৈরিতে ছানা, চিনি, এবং নানা ধরনের ফল ব্যবহার করা হয়। এ মিষ্টি খেতে খুব সুস্বাদু এবং মুখরোচক।

মাংসের বড়া

শেরপুরের মাংসের বড়াও খুবই জনপ্রিয়। মাংসের বড়া মাংস, পেঁয়াজ, মরিচ এবং মশলা দিয়ে তৈরি একটি মুখরোচক খাবার। শেরপুরের মাংসের বড়া খুবই সুস্বাদু।

ভুনা খিচুড়ি

শেরপুরের ভুনা খিচুড়িও খুবই জনপ্রিয়। ভুনা খিচুড়ি চাল, ডাল, মাংস, সবজি এবং মশলা দিয়ে তৈরি একটি সুস্বাদু খাবার। শেরপুরের ভুনা খিচুড়ি খুবই সুস্বাদু।

শেরপুরের এই খাবারগুলি শুধুমাত্র স্থানীয়দের মধ্যেই নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের কাছেও খুবই জনপ্রিয়।

শেরপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

শেরপুর জেলার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখা শত শত ব্যক্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নাম এবং তাদের ভূমিকা আমরা এখানে তুলে ধরছি। 

শের আলী গাজী

শের আলী গাজী ছিলেন একজন সুফি সাধক ও যোদ্ধা। শের আলী গাজী ছিলেন একজন ধার্মিক ও সৎ মানুষ। তিনি মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সাহায্য করতেন। তিনি ছিলেন একজন বীর যোদ্ধাও। তিনি অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। শের আলী গাজী একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। তিনি শেরপুর জেলার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

নিগার সুলতানা

নিগার সুলতানা একজন বাংলাদেশী মহিলা ক্রিকেটার। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য। দলে তিনি মূলত উইকেট রক্ষকের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। পাশাপাশি ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবেও তিনি দলে ভূমিকা রাখছেন।

শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী

শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী একজন বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ। তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০১ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে।

নাদেরুজ্জামান খান

নাদেরুজ্জামান খান ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে তিনি নকলা-নালিতাবাড়ী আসন থেকে গণ পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মো: গোলাম রহমান

অধ্যাপক ড. মো: গোলাম রহমান বাংলাদেশের একজন শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যম গবেষক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বাংলাদেশ সরকারের তথ্য কমিশনের প্রধান তথ্য কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

শেরপুর জেলার দর্শনীয় স্থান

শেরপুর জেলা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি জেলা। জেলাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

গজনী অবকাশ কেন্দ্র

গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি বিনোদন কেন্দ্র। এখানে রয়েছে একটি সুন্দর লেক, একটি চিড়িয়াখানা, এবং একটি বিশাল শিশুপার্ক।

মধুটিলা ইকোপার্ক

মধুটিলা ইকোপার্কটি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি বনভূমি। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা, প্রাণী, এবং পাখি।

শের আলী গাজীর মাজার

শের আলী গাজীর মাজারটি শেরপুর জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত। তিনি ছিলেন একজন সুফি সাধক ও যোদ্ধা। তার নামেই এই জেলার নামকরণ করা হয়।

পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি

পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়িটি শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি প্রাচীন জমিদার বাড়ি।

পানিহাটা-তারানি পাহাড়

পানিহাটা-তারানি পাহাড়টি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি।

শেরপুর দুর্গ

শেরপুরের সদর উপজেলায় অবস্থিত শেরপুর দুর্গটি তুর্কি সুলতান শের শাহ সুরি নির্মাণ করেছিলেন।

রাজার পাহাড়

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় অবস্থিত রাজার পাহাড়টি একটি প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র।

এছাড়াও, শেরপুর জেলায় আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মাইসাহেবা জামে মসজিদ, বারদুয়ারী মসজিদ, ঘাগড়া লস্কর খান মসজিদ, নয়াবাড়ির টিলা, সুতানাল দীঘি, রঘুনাথ জিউর মন্দির, জরিপা কালিদহ গাং, নালিতাবাড়ির বিখ্যাত রাবারড্যাম, বাউলিয়া ইত্যাদি।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

প্রিয় পাঠক, শেরপুর সম্পর্কে তো অনেক কিছুই জানলেন। এ বিষয়ে আপনার কি নতুন কোন প্রশ্ন জেগেছে? আমার কিন্তু জেগেছে! শেরপুর কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-

শেরপুর জেলার অবস্থান কোথায়?

শেরপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি জেলা। এর উত্তরে নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ জেলা, দক্ষিণে জামালপুর জেলা, এবং পশ্চিমে ভারতের মেঘালয় রাজ্য অবস্থিত।

শেরপুর জেলার আয়তন কত?

শেরপুর জেলার আয়তন ১,৩৬৩.৭৬ বর্গকিলোমিটার।

শেরপুর জেলার জনসংখ্যা কত?

আদমশুমারী অনুযায়ী শেরপুর জেলার জনসংখ্যা ৯৭,৯৭৯।

শেরপুর জেলার প্রধান শিল্পগুলি কী কী?

শেরপুর জেলার প্রধান শিল্পগুলির মধ্যে রয়েছে কৃষিভিত্তিক শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, ওষুধ শিল্প, পোশাক শিল্প, এবং ইলেকট্রনিক্স শিল্প।

শেরপুর জেলার প্রধান ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি কী কী?

শেরপুর জেলার প্রধান ঐতিহাসিক ঘটনাগুলির মধ্যে রয়েছে ১৭৬৩ সালের শেরপুরের যুদ্ধ, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ।

উপসংহার

বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের অন্যতম জেলা শেরপুর সম্পর্কে তথা শেরপুর কিসের জন্য বিখ্যাত সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি কি আপনার শেরপুর সম্পর্কে চাহিদার বিন্দুমাত্র উপকারে এসেছে? যদি মনে করেন হ্যাঁ আপনার উপকারে এসেছে তবে দয়া করে এটাকে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন সবার মাঝে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে পঞ্চগড় কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।

শেরপুর কিসের জন্য বিখ্যাত‘ হওয়ার কারণগুলো নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। মনে রাখবেন, জ্ঞান অর্জন করা যেমন নৈতিক দায়িত্ব সঠিক জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া কিন্তু এর বাইরে নয়! প্রিয় পাঠক, ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, নতুন কোন আলোচনায় কথা হবে ইনশাআল্লাহ্। সুখ আর সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক আপনার জীবন। আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *