Skip to content
Home » গাজীপুর কিসের জন্য বিখ্যাত

গাজীপুর কিসের জন্য বিখ্যাত

What Is Gazipur Famous For

গাজীপুর কিসের জন্য বিখ্যাত আপনার জানা আছে কি? যদি জানা থাকে তবে তো আলহামদুলিল্লাহ্। আর যদি না জেনে থাকেন যে গাজীপুর আসলে বিখ্যাত কেন তবে এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিন। আশা করছি গাজীপুর জেলার বিখ্যাত হওয়ার সঠিক তথ্য এখান থেকে জানতে পারবেন। 

গাজীপুর কিসের জন্য বিখ্যাত

গাজীপুর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এখনো পর্যন্ত এটি চলমান রয়েছে। গার্মেন্টস শিল্প, এতিহ্যে গাঁথা সাফারি পার্ক, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান এবং অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই মূলত গাজীপুরের বিখ্যাত হওয়ার অন্যতম কারণ। বুঝলেন তো গাজীপুর কিসের জন্য বিখ্যাত? চলুন বিস্তারিত জানা যাক- 

গাজীপুর জেলা সম্পর্কে কিছু তথ্য

গাজীপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি ঢাকা জেলার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। গাজীপুর জেলার উত্তরে টাঙ্গাইল জেলা, পূর্বে ঢাকা জেলা, দক্ষিণে ময়মনসিংহ জেলা এবং পশ্চিমে নরসিংদী জেলা অবস্থিত। গাজীপুর জেলার আয়তন ১৭৭০.৫৪ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৩৪০৩৯১২ জন।

গাজীপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

  • মেঘনাদ সাহা – তিনি ছিলেন একজন জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী। পদার্থবিজ্ঞানে থার্মাল আয়নাইজেসন তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি বিশষভাবে খ্যাত। 
  • ফকির শাহাবুদ্দীন – বাংলাদেশের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল এর নাম জানেন? ফকির শাহাবুদ্দীন বাংলাদেশের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল।
  • তাজউদ্দিন আহমেদ – তাজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
  • আহসানউল্লাহ মাস্টার – একজন জননন্দিত রাজনীতিবিদ।
  • মোঃ সামসুল হক – তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
  • আবু জাফর শামসুদ্দীন – আপনি কি আবু জাফর শামসুদ্দীন এর নাম শুনেছেন? তিনি হচ্ছেন, বাংলাদেশ সাবেক পাটমন্ত্রী।
  • এম জাহিদ হাসান – তিনি ছিলেন একাধারে পদার্থবিদ, ভাইল ফার্মিয়ন কণার আবিষ্কারক এবং সেই সাথে ল ফার্মিয়ন কণার আবিষ্কারকও বটে।
  • রহমত আলী – তিনি ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ ও গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর সাবেক মন্ত্রী।
  • আ.ক.ম মোজাম্মেল হক – তিনি হচ্ছেন গাজীপুর ১ আসনের এমপি মহোদয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর মাননীয় মন্ত্রী।
  • জাহিদ আহসান রাসেল – তিনি হচ্ছেন গাজীপুর আসন নং ২ এর এমপি ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এর মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ।
  • আনিছুর রহমান মিঞা – তিনি একজন জনপ্রিয় সচিব।
  • মেহের আফরোজ চুমকি – বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত এবং সেই সাথে সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য।

গাজীপুর জেলার বিখ্যাত সব খাবার

গাজীপুর জেলায় আপনি জনপ্রিয় অনেক খাবার পাবেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে-

কাঁঠাল

গাজীপুর জেলা কাঁঠালের জন্য বিখ্যাত। এ জেলায় উৎপাদিত কাঁঠাল অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুগন্ধি। গাজীপুরের কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হয়।

পেয়ারা

গাজীপুরের পেয়ারাও বেশ জনপ্রিয়। এ জেলায় উৎপাদিত পেয়ারার স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। গাজীপুরের পেয়ারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়।

রসগোল্লা

গাজীপুর জেলার রসগোল্লা বেশ সুস্বাদু। এ জেলায় অনেক ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকান রয়েছে যেখানে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির মধ্যে রসগোল্লা বেশ জনপ্রিয়।

চমচম

বাংলাদেশের অন্যতম জেলা গাজীপুরের চমচমও বেশ সুস্বাদু। এ জেলায় অনেক ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকান রয়েছে যেখানে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির মধ্যে চমচম বেশ জনপ্রিয়।

বিরিয়ানি

গাজীপুরের বিরিয়ানিও বেশ সুস্বাদু। এ জেলায় অনেক রেস্তোরাঁ রয়েছে যেখানে বিভিন্ন ধরনের বিরিয়ানি পরিবেশন করা হয়।

হালুয়া

আপনি গাজীপুর গেলে অনেক জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে হালুয়াও পাবেন। এই হালুয়া কিন্তু বেশ সুস্বাদু। জেলার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকানে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির মধ্যে হালুয়া পাবেন যা স্বাদে অতুলনীয়।

পায়েস

গাজীপুরের পায়েসও বেশ সুস্বাদু। এ জেলায় অনেক ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকান রয়েছে যেখানে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির মধ্যে পায়েস বেশ জনপ্রিয়।

গাজীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

গাজীপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত একটি জেলা। এটি ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত। গাজীপুর জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

বলিয়াদী জমিদার বাড়ি

বলিয়াদী জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন জমিদার বাড়ি। এটি ১৯শ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর জমিদার বাড়ি। বলিয়াদী জমিদার বাড়িটির স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত সুন্দর। এটি হিন্দু ধর্মীয় স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে নির্মাণ করা  হয়। জমিদার বাড়িটির মূল ভবন একটি দ্বিতল ভবন। এটিতে রয়েছে অনেকগুলি কক্ষ, একটি অন্দরমহল, একটি দরবার হল, একটি সুইমিং পুল, একটি মসজিদ এবং সেই সাথে একটি মন্দির।

নুহাশ পল্লী

নুহাশ পল্লী বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলায় অবস্থিত একটি বাগানবাড়ি। এটি প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি। নুহাশ পল্লীটি ১৯৮৭ সালে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ৪০ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। নুহাশ পল্লীতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। এছাড়াও এখানে একটি ছোট পুকুর, একটি দীঘি, একটি ভূত বিলাস বাড়ি, একটি ট্রি হাউস, একটি ঔষধি গাছের বাগান এবং একটি মসজিদ রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের প্রথম সাফারি পার্ক। ২০১৩ সালে এটি উদ্বোধন করা হয়। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের মোট আয়তন ৪৯০৯ একর। এর মধ্যে সবথেকে বেশি এলাকা বন্যপ্রাণীদের জন্য উন্মুক্ত স্থান রয়েছে। বাকি জায়গায় পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাঘ, সিংহ, হাতি, জিরাফ, জলহস্তী, সিংহশাবক, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, বানর, হনুমান, কুমির, ইত্যাদি।

ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী

ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার ভাওয়াল উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। এটি ভাওয়াল রাজবংশের রাজাদের সমাধিস্থল। ভাওয়াল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা রামনারায়ণ। তিনি ১৬৮২ সালে ভাওয়াল রাজবাড়ী প্রতিষ্ঠা করেন। ভাওয়াল রাজবংশের রাজারা ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের মতে শ্মশানক্ষেত্রে দাহ করা পছন্দ করতেন। তাই তারা ভাওয়াল রাজবাড়ির কাছেই একটি শ্মশানক্ষেত্র নির্মাণ করেন।

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান


ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় উদ্যান। এটি রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় অবস্থিত। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের মোট আয়তন ৫০.২২ বর্গকিলোমিটার। এটি একটি ক্রান্তিয়, আদ্র পর্ণমোচী বৃক্ষের বন। এখানকার মূল প্রজাতি হলো শাল। মুল কর্তিত গাছ থেকে পুনরায় গজানোর গুন থাকায় এগুলোকে গজারী বন ও বলা হয়। এখানকার বর্তমান শাল বন মূলত দ্বিতীয় পর্যায়ভূক্ত শালবন। যা কপিছ থেকে উৎপন্ন।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

ঢাকা বিভাগের অন্যতম জেলা গাজীপর এ রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান যেগুলো হাজার হাজার দর্শকের মন ভরে তুলছে প্রতিনিয়তই। রয়েছে বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় সব খাবার যা মানুষকে পরিতৃপ্তি দিচ্ছে অনবরত। আর রয়েছেন বিখ্যাত ব্যক্তি যারা প্রতিনিয়তই জেলার মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। গাজীপুর কিসের জন্য বিখ্যাত বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই।

গাজীপুর কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-

গাজীপুর জেলার আয়তন এবং জনসংখ্যা কত?

গাজীপুর জেলার আয়তন ১৭৭০.৫৪ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৩৪০৩৯১২ জন।

গাজীপুর জেলার প্রধান নদী কোনটি?

বাংলাদেশের অন্যতম জেলা গাজীপুর এর প্রধান নদী হচ্ছে বুড়িগঙ্গা নদী। যদিও এখানে আরো অনেকগুলো নদী আছে।

গাজীপুর জেলার প্রধান শিল্প কোনটি?

গাজীপুর জেলার প্রধান শিল্প হলো ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের মধ্যে গার্মেন্টস শিল্প অন্যতম।

গাজীপুর জেলার প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কোনটি?

গাজীপুর জেলার প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হলো কালিয়াকৈর জমিদার বাড়ি।

গাজীপুর জেলার প্রধান ঐতিহাসিক স্থান কোনটি?

গাজীপুর জেলার প্রধান ঐতিহাসিক স্থান হলো চন্দ্রা রাজবাড়ী।

গাজীপুর জেলার প্রধান ক্রীড়াঙ্গন কোনটি?

গাজীপুর জেলার প্রধান ক্রীড়াঙ্গন হলো গাজীপুর জেলা স্টেডিয়াম।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশ নিয়ে জানার কৌতুহল থেকে আপনার জানার পরিমাণকে বৃদ্ধি করার জন্য গাজীপুর কিসের জন্য বিখ্যাত তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। এর জন্যই মূলত আমরা এই পোস্ট লিখেছি। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে শেরপুর কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।

গাজীপুর কিসের জন্য বিখ্যাত‘ পোস্ট কেমন লেগেছে আপনাদের বলুন তো! ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও গাজীপুর সম্পর্কে জানার সুযোগ তৈরী করে দিন। আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *