Skip to content
Home » সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত

সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত

What Sylhet Famous For

সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত তার একটি প্রকৃত রূপরেখা পাবেন এই জেলার বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির জন্ম তথ্য যাচাই করলে। দেশের অন্যতম পর্যটন স্থানের যেন এক মিলন মেলা এই জেলা। আবার এই জেলার চা যেন সারা বাংলাদেশে লাখো মানুষের চাহিদা নিবৃত করছে অনবরত। চলুন আজকে আমরা সিলেট জেলার বিখ্যাত সবকিছুর একটি তালিকা দেখে আসি।

সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত

৩৬০ আউলিয়ার দেশ হিসেবে খ্যাত সিলেট জেলায় রয়েছে শত শত দর্শনীয় স্থান যা হাজার হাজার পর্যটকের মনের খোরাক। রয়েছেন শত শত জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত ব্যক্তি যারা এই জেলার সার্বিক উন্নয়নের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে গেছেন। সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত এই প্রসঙ্গে এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্।

সিলেট জেলা সম্পর্কে কিছু তথ্য

সিলেট বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি জেলা। এটি সিলেট বিভাগের অন্তর্গত। জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, পূর্বে ভারতের আসাম রাজ্য, দক্ষিণে ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ জেলা অবস্থিত। সিলেট জেলার আয়তন ৩,৪৫২.০৭ বর্গ কিলোমিটার। জনশুমারি ২০২২ অনুযায়ী সিলেট জেলার জনসংখ্যা ৩৮,৫৩,৫৭০ জন যার মধ্যে পুরুষ ১৮,৯৪,২৩২ জন, মহিলা ১৯,৫৯,০৫৪ জন এবং হিজড়া জনগোষ্ঠি হচ্ছে ২৮৪ জন। 

সিলেট জেলার অর্থনীতির প্রধান খাত হল কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন। সিলেটের প্রধান ফসল হল ধান, পাট, গম, আলু, ভুট্টা, সরিষা, গম, আখ, তিল, বাদাম, আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, পেঁপে, আনারস, তরমুজ, লাউ, শিম, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ, হলুদ, ধনিয়া, জিরা, মৌরি, মেথি ইত্যাদি। সিলেটের প্রধান শিল্প হল পাটকল, ধানকল, চালকল, তেলকল, আটাকল, সিমেন্টকল, কাগজকল, ইত্যাদি। 

সিলেট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

সিলেট জেলার অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন-

  • হযরত শাহজালাল (র.) – একজন দরবেশ ও ধর্মীয় নেতা যিনি ১৩০৩ সালে সিলেটে ইসলাম প্রচার করেন।
  • আবুল মাল আব্দুল মুহিত – গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত একই অর্থমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য।
  • এম সাইফুর রহমান – অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন এম সাইফুর রহমান এবং সেই সাথে তিনি সাবেক সংসদ সদস্যও ছিলেন। 
  • হযরত শাহ পরান (র.) – একজন দরবেশ ও ধর্মীয় নেতা যিনি হযরত শাহজালাল (র.)-এর সঙ্গে সিলেটে ইসলাম প্রচার করেন।
  • রাজা গিরিশচন্দ্র রায় – তিনি হচ্ছেন, মুরারিচাঁদ কলেজ যাকে সংক্ষেপে এমসি কলেজ বলা হয় তার প্রতিষ্ঠাতা 
  • জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী – তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
  • এনামুল হক মোস্তফা শহীদ – বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক সমাজকল্যান মন্ত্রী এবং একজন স্বনামধন্য আইনজীবী।
  • সিরাজুল হোসেন খান – তিনি ছিলেন, সাবেক তথ্য মন্ত্রী, সাবেক মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী এবং সাবেক শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রী। এর বাইরে তাঁর আরো একটি পরিচয় আছে। তিনি একজন জননন্দিত সাংবাদিকও বটে।
  • হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী – তিনি লিছেন সাবেক স্পীকার ও সাবেক পররাস্ট্র মন্ত্রী এবং সেই সাথে সাবেক পররাস্ট্র সচিব।
  • সৈয়দ এবি মাহমুদ হোসেন – বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন সৈয়দ এবি মাহমুদ হোসেন
  • মেজর জেনারেল এম এ রব – মেজর জেনারেল এম এ রব একইসাথে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ও বাংলাদেশের প্রথম সেনাবাহিনী প্রধান আর সাবেক সংসদ সদস্য। অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন তিনি।

সিলেট জেলার বিখ্যাত সব খাবার

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় যেমন জনপ্রিয় আর বিখ্যাত খাবার রয়েছে তেমনি জনপ্রিয় জেলা সিলেটেও আপনি অনেক বিখ্যাত খাবার দেখে থাকবেন। শুধু দেখলেই কিন্তু হবে না। এগুলো খাওয়ার চেষ্টাও কিন্তু করবেন।

আখনী

আখনি হলো সিলেটের একটি বিখ্যাত খাবার। এটি চাল, মাংস, ঘি, গরম মশলা ও বিভিন্ন সবজি দিয়ে রান্না করা হয়।

সাতকরা দিয়ে রান্না করা মাংস

সিলেটে সাতকরা দিয়ে রান্না করা মাংস খুবই জনপ্রিয়। সাতকরার টক স্বাদ মাংসের স্বাদকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

চুঙ্গা পিঠা

চুঙ্গা পিঠা হলো সিলেটের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এটি চালের গুঁড়া, দুধ, চিনি ও বিভিন্ন মশলা দিয়ে তৈরি করা হয়।

আমড়ার মোয়া

আমড়ার মোয়া হলো সিলেটের একটি জনপ্রিয় মিষ্টি। এটি আমড়ার আঁটি ফেলে দিয়ে, চিনি, গুড় ও বিভিন্ন মশলা দিয়ে তৈরি করা হয়।

সিলেটি মুখরোচক খাবার

সিলেটে অনেক ধরনের মুখরোচক খাবারও পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে মুড়ি, নাড়ু, পিঠা, মিষ্টি, ইত্যাদি।

সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান

অসংখ্য এতিহ্যে ভরপুর সিলেট জেলা বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত জেলা। সিলেটের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল-

হযরত শাহজালাল (র.) মাজার

হযরত শাহজালাল (র.) মাজার বাংলাদেশের সিলেট শহরের দরগাহ গেইট এলাকায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থাপনা। এই মাজারটি ১৩০৩ সালে সিলেটে ইসলাম প্রচারকারী হযরত শাহজালাল (র.)-এর সমাধিস্থল। হযরত শাহজালাল (র.) ছিলেন একজন তুর্কি সুফি সাধক। তিনি ১২৭১ সালে সিলেটে আসেন এবং ইসলাম প্রচার শুরু করেন। তিনি সিলেটে ইসলামের প্রসার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

হযরত শাহ পরান (র.) মাজার

হযরত শাহজালাল (র.) এর সহচর হযরত শাহ পরান (র.) মাজার বাংলাদেশের সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থাপনা। এই মাজারটি ১৩০৩ সালে নির্মাণ করা হয়। একজন তুর্কি সুফি সাধক হযরত শাহ পরান (র.) সিলেটে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

জৈন্তাপুর রাজবাড়ি

জৈন্তাপুর রাজবাড়ি বাংলাদেশের সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। এই রাজবাড়িটি ১৭শ শতাব্দীতে নির্মাণ করা হয়। জৈন্তাপুর রাজবাড়িটির মালিক ছিলেন জৈন্তাপুর রাজবংশ। এই রাজবংশটি সিলেটের একটি প্রভাবশালী রাজবংশ ছিল। কেননা, রাজবংশের সদস্যরা ছিলেন অত্যন্ত ধনী ও প্রভাবশালী। তাদের রাজবাড়িটি ছিল অত্যন্ত সুন্দর ও জাঁকজমকপূর্ণ।

শাহী ঈদগাহ, সিলেট

শাহী ঈদগাহ, সিলেট বাংলাদেশের সিলেট জেলার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। এই ঈদগাহটি ১৭শ শতাব্দীতে নির্মাণ করা হয়। শাহী ঈদগাহটি সিলেটের তদানীন্তন ফৌজদার ফরহাদ খাঁ নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে, তদারকি ও তত্বাবধানে এটি নির্মাণ করেন। প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উপলক্ষে এখানে বিশাল দুটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ মুসল্লী এক সাথে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন।

জাফলং

জাফলং বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এই স্থানটি তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। জাফলং খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। এখানে পাহাড়, নদী, ঝর্ণা, চা বাগান ইত্যাদির অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন অনায়াসেই।

লালাখাল 

লালাখাল বাংলাদেশের সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি পর্যটন কেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থান। লালাখালের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সারি গোয়াইন নদী। সেই নদীতে অসংখ্য বাঁক রয়েছে। নদীটির কূলে পাহাড়ি বন, চা-বাগান এবং নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি রয়েছে। লালাখালের পানির রঙ নীল। এই কারণেই এটিকে নীল নদ বা লালাখাল নামে ডাকা হয়। লালাখালের নদীর তলদেশের বালু ও কাদামাটিতে উপস্থিত খনিজ পদার্থের কারণে এর পানির রঙ নীল হয়। এখানে গেলে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য আস্বাদন করা যায়।

রাতারগুল জলাবন

রাতারগুল জলাবন বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত একটি বিরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত জলাবন। এটি গোয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত। রাতারগুল জলাবনটি মূলত একটি চিরসবুজ বন। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ, লতাপাতা, ফুল-ফলসহ নানা ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণী, পাখি, বানর, সাপ, ইঁদুর, হাঁস-মুরগি, কচ্ছপ ইত্যাদিও রয়েছে।

তামাবিল

তামাবিল বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত একটি সীমান্তবর্তী জনপদ। এটি বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে অবস্থিত। তামাবিল বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর। এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কয়লা, সাদা পাথর সহ অন্যান্য পাথর আমদানি করা হয় যা সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থলপথ এর মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। সিলেটের জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-

সিলেটের প্রধান উৎসবগুলি কী কী?

সিলেটের প্রধান উৎসবগুলির মধ্যে রয়েছে: বৈশাখী, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, পহেলা বৈশাখ, রাস উৎসব, বিষহরি পূজা ও চৈত্র সংক্রান্তি অন্যতম।

সিলেটের বিখ্যাত ফলের নাম কি?

সিলেটের বিখ্যাত ফলের নাম হল সাতকরা। এটি একটি টক ফল যা সিলেট এবং আসামের পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়।

উপসংহার

সিলেটের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জননন্দিত এবং বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ আর বিখ্যাত সব খাবার, গোটা বাংলাদেশের মানুষকে যেন সৌন্দর্য বিলিয়ে দিচ্ছে অনবরত। তাইতো প্রতিবছর হাজার হাজার নয় লক্ষ লক্ষ পর্যটক সিলেটের দর্শনীয় স্থানে ভিড় জমিয়ে থাকেন। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে ভোলা কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।

সিলেট কিসের জন্য বিখ্যাত‘ প্রিয় পাঠক, আপনি নিশ্চয় তা বুঝতে পারছেন। আপনার কি কোন প্রশ্ন আছে? তাহলে কমেন্ট করে ফেলুন দ্রুত। আমরা আপনার মূল্যবান কমেন্টের অপেক্ষায় – আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আল্লাহ্ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *