Skip to content
Home » মানিকগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত

মানিকগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত

What Is Manikganj Famous For

মানিকগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত তা জানতে অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকেন। তাদের কথা ভেবে আমরা এখানে মানিকগঞ্জ বিখ্যাত হওয়ার সঠিক তথ্যগুলো তুলে ধরছি। প্রিয় পাঠক, আপনি যদি মানিকগঞ্জ কি কি কারণে বিখ্যাত সেই বিষয়ে না জেনে থাকেন তবে আজকের এই পোস্ট থেকে মানিকগঞ্জ জেলা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য জানতে পারবেন। শুরু করা যাক তাহলে-

মানিকগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত

বাংলাদেশের জনপ্রিয় জেলাগুলোর মধ্যে মানিকগঞ্জ জেলার ভূমিকা অন্যতম। ঢাকা বিভাগের এই জেলাটিতে রয়েছে অসংখ্য বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও ঐতিহ্য। জেলাটি বাংলাদেশের মধ্য অঞ্চলে অবস্থিত। প্রিয় পাঠক, তাহলে চলুন আজকের এই পোস্ট থেকে মানিকগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত তথা মানিকগঞ্জ সম্পর্কে জানা-অজানা নানান তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি।

মানিকগঞ্জ জেলার নামকরণ ও ইতিহাস

মানিকগঞ্জ জেলার নামকরণ নিয়ে দুটি মতবাদ রয়েছে। প্রথম মতবাদ অনুসারে, মানিকগঞ্জ জেলার নামকরণ হয়েছিল মানিক শাহ নামে এক সুফি সাধকের নামানুসারে। মানিক শাহ ছিলেন একজন ধর্মপ্রচারক এবং তিনি ধলেশ্বরী নদীর তীরে একটি খানকা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই খানকার চারপাশে জনবসতি গড়ে উঠে এবং সেই জনবসতিকে মানিকগঞ্জ বলা হয়। দ্বিতীয় মতবাদ অনুসারে, মানিকগঞ্জ জেলার নামকরণ হয়েছিল মানিক নামে এক পাঠান জমিদারের নামানুসারে। মানিক ছিলেন একজন ধনী জমিদার এবং তিনি ধলেশ্বরী নদীর তীরে একটি বিশাল বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। এই বাড়ির চারপাশে জনবসতি গড়ে উঠে এবং সেই জনবসতিকে মানিকগঞ্জ বলা হয়।

মানিকগঞ্জ জেলার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। এই অঞ্চলটিতে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের বসবাস ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে এই অঞ্চলটি মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে এই অঞ্চলটি পাল, সেন, তুর্কি, মোঘল, ব্রিটিশ ইত্যাদি বিভিন্ন শাসনের অধীনস্থ ছিল। মানিকগঞ্জ জেলার প্রধান অর্থনৈতিক ক্ষেত্র হল কৃষি। এই জেলায় ধান, পাট, আখ, গম, শাকসবজি ইত্যাদির চাষ হয়। এছাড়াও, এই জেলায় মৎস্য শিকার, পোষাকশিল্প, এবং পর্যটন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। মানিকগঞ্জ জেলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চন্দ্রবিহার মন্দির, আরিচা, ভ্রমণবাড়ী। এই জেলার ইতিহাস ও সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

মানিকগঞ্জের বিখ্যাত খাবার

মানিকগঞ্জ জেলার অনেক বিখ্যাত খাবার রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি বিখ্যাত খাবারের তালিকা আপনাদের জানানোর জন্য নিচে দেওয়া হলো। দেখে নিন বিস্তারিতরূপে মানিকগঞ্জের বিখ্যাত সব খাবার-

মানিকগঞ্জের ইলিশ মাছ

মানিকগঞ্জের ইলিশ মাছ তার সুস্বাদ এর জন্য বিখ্যাত। এই জেলার পদ্মা নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। আর আপনি তো জানেন যে ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ।

পায়েস

মানিকগঞ্জ জেলায় সুস্বাদু পায়েস পাওয়া যায়। শুধু কি মানিকগঞ্জেই পায়েস পাওয়া যায় নাকি? জি, না আপনি প্রতিটি জেলায় পায়েস পাবেন। কিন্তু মানিকগঞ্জের পায়েস সত্যিকার অর্থেই অন্যান্য জেলার পায়েস এর তুলনায় বেশি সুস্বাদু হয়ে থাকে। তবে, ব্যক্তি বিশেষ মতামত ভিন্ন হতে পারে। মানিকগঞ্জের পায়েস সাধারণত নারিকেলের দুধ, চিনি এবং এলাচ দিয়ে তৈরি করা হয়।

মানিকগঞ্জের রসমালাই

আপনি যদি কখনো মানিকগঞ্জ জেলায় যান তবে সেখানের রসমালাই খেতে ভুলবেন না কেমন! অনন্য স্বাদ আপনার মনে আলাদা এক অনুভূতি তৈরী করবে নিশ্চিত। এই রসমালাই সাধারণত দুধ, চিনি এবং এলাচ দিয়ে তৈরি করা হয়।

মানিকগঞ্জের রসগোল্লা

এই জেলায় আপনি সুন্দর সুন্দর রসগোল্লা পাবেন যেগুলো তাদের সুস্বাদের জন্য বিখ্যাত। এই রসগোল্লাগুলো সাধারণত রসমালাই এর মতই দুধ, চিনি ও এলাচ দিয়ে তৈরি করা হয়।

মানিকগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

ঐতিহ্যবাহী জেলায় বহু বিখ্যাত ব্যক্তি অবদান রেখেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নাম আমরা এখানে আপনাদের সুবিধার্থে সংযুক্ত করছি। আশা করছি আপনি উপকৃত হবেন। 

ড. অমর্ত্য সেন

অমর্ত্য সেন হলেন একজন ভারতীয় বাঙালি অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক। তিনি ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণদারিদ্রের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে গবেষণা এবং উদারনৈতিক রাজনীতিতে অবদান রাখার জন্য এই পুরস্কার লাভ করেন।

শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদ

রফিক উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন বাংলাদেশী ভাষা আন্দোলনকর্মী যিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতির দাবিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সৃষ্ট বাংলা ভাষা আন্দোলনে ১৯৫২ সালে নিহত হন। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে শহিদ হিসেবে ভূষিত করা হয়।

বিচারপতি এ. কে. এম নূরুল ইসলাম

বিচারপতি এ. কে. এম নূরুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট আইনজীবী ও বিচারপতি। তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিচারপতি এ. কে. এম নূরুল ইসলাম ছিলেন একজন দক্ষ ও সৎ বিচারপতি। তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম চৌধুরী

ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম চৌধুরী ছিলেন একজন বাংলাদেশী সামরিক কর্মকর্তা। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বীর বিক্রম খেতাব লাভ করেন। তাঁর সাহসিকতা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।

হীরালাল সেন

হীরালাল সেন ছিলেন একজন বাঙালি চিত্রগ্রাহক, যাঁকে সাধারণত ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন বলে গণ্য করা হয়। এছাড়া, তাঁকে ভারতের সর্বপ্রথম বিজ্ঞাপন বিষয়ক চলচ্চিত্রের নির্মাতা বলেও গণ্য করা হয়। হীরালাল সেনের নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্রটির নাম ছিল “Tilak Bathing at the Ganges”। এই চলচ্চিত্রটি ১৯০১ সালে মুক্তি পায়।

কন্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম

মমতাজ বেগম হলেন বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় লোকগানের সংগীত শিল্পী এবং জাতীয় সংসদের সদস্য। বাংলাদেশের সুর সম্রাজ্ঞী বলে খ্যাত মমতাজ তার চার দশকের কর্মজীবনে ৭০০-এর অধিক গান রেকর্ড করেছেন। 

কিশোরীলাল রায় চৌধুরী

কিশোরীলাল রায় চৌধুরী ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী জমিদার। তিনি মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি জমিদার পরিবারের প্রখ্যাত পশ্চিম বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোরীলাল রায় চৌধুরী ছিলেন একজন সমাজসেবক ও দানবীর। তিনি তাঁর অর্থ ও সম্পদ দেশের উন্নয়নে ব্যয় করেছেন।

মানিকগঞ্জের দর্শনীয় স্থান

মানিকগঞ্জ একটি ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত জেলা। এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। মানিকগঞ্জে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:

মানিকগঞ্জ জমিদার বাড়ি

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় অবস্থিত জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই জমিদার বাড়িটি ১৮ শতকে নির্মিত হয়েছিল।

শিবালয় রাজবাড়ি

শিবালয় রাজবাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং ১৮ শতকে নির্মাণ করা হয়।

সাটুরিয়া জমিদার বাড়ি

সাটুরিয়া জমিদার বাড়ি সাটুরিয়া উপজেলায় অবস্থিত। শিবালয় রাজবাড়ির মত এটিও বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই জমিদার বাড়িটি ১৯ শতকে নির্মাণ করা হয়।

সিংগাইর জমিদার বাড়ি

মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলায় অবস্থিত সিংগাইর জমিদার বাড়িটি বহুপ্রাচিন। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই রাজবাড়িটি দেখার জন্য আসেন। 

মানিকগঞ্জ জাদুঘর

মানিকগঞ্জ জাদুঘরটি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জাদুঘরগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। এই জাদুঘরে মানিকগঞ্জের ইতিহাস ও সংস্কৃতির উপর অনেক জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে। চাইলে সেখানে গিয়ে দেখে আসতে পারেন। 

চিড়িয়াখানা

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় অবস্থিত চিড়িয়াখানা বাংলাদেশের একটি ছোটখাটো চিড়িয়াখানা হলেও দেখতে অনেক চমৎকার। এই চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন ধরনের প্রাণী রয়েছে।

মানিকগঞ্জ ক্যাসেল

মানিকগঞ্জের অন্যতম জনপ্রিয় নিদর্শন মানিকগঞ্জ ক্যাসেল। এই ক্যাসেলটি ১৯ শতকে নির্মিত হয়েছিল।

স্মৃতিসৌধ

অনন্য জেলা মানিকগঞ্জ এ থাকা স্মৃতিসৌধটি বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই স্মৃতিসৌধটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

প্রিয় পাঠক, মানিকগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত সেই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি, আপনি জেনে গেছেন মানিকগঞ্জের অনেক জানা-অজানা তথ্য। মানিকগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-

মানিকগঞ্জ জেলার অর্থনীতি মূলত কী নির্ভর?

মানিকগঞ্জ জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। এখানে ধান, গম, পাট, আখ, ভুট্টা, শাকসবজি ও ফলমূলের চাষ হয়।

মানিকগঞ্জ জেলার অবস্থান কোথায়?

মানিকগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। এটি ঢাকা বিভাগের একটি অংশ। মানিকগঞ্জের উত্তরে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলা, দক্ষিণে ফরিদপুর, রাজবাড়ি ও ঢাকা জেলা, পশ্চিমে পাবনা ও রাজবাড়ী জেলা এবং পূর্বে ঢাকা জেলা অবস্থিত।

মানিকগঞ্জ জেলার প্রধান নদীগুলি কী কী?

মানিকগঞ্জ জেলার প্রধান নদীগুলি হলো পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গা ও ইছামতি।

উপসংহার

মানিকগঞ্জ জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, দর্শনীয় স্থানগুলো সর্বদায় অসংখ্য মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। আশা করি মানিকগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত তা নিয়ে লিখা পোস্টটি আপনার কাছে তথ্যবহুল মনে হয়েছে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে চাঁদপুর কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।

মানিকগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত‘ পোস্টটি যদি ভাল লাগে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন প্লিজ! এরই সাথে পোস্টটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন নেট দুনিয়ায়! আজকে বিদায় নিচ্ছি, দেখা হবে নতুন কোনো পোস্টে। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *