Skip to content
Home » হবিগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত

হবিগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত

What Is Habiganj Famous For

হবিগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত তা আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা। যারা বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের অন্তর্গত হবিগঞ্জ জেলা বিখ্যাত হওয়ার কারণ জানেন না, তারা এই পোস্টটি দয়া করে মনোযোগসহ পড়ে নিন। কেননা, এই পোস্টে আমরা হবিগঞ্জ জেলা কেন আর কিসের জন্য বিখ্যাত হলো তা বিস্তারিতরূপে ব্যাখ্যা করবো ইনশাআল্লাহ্। তাহলে সাথেই থাকুন, পড়া থামাবেন না কিন্তু!

হবিগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত

হবিগঞ্জ জেলার নানান তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের সামনে। আশা করছি, এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার পর হবিগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত তা স্পষ্টরূপে বুঝে যাবেন। এ জেলার দর্শনীয় স্থান, বিখ্যাত সব খাবার এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের তালিকা পাবেন এখানে। তাহলে চলুন দেরি না করে বরং শুরু করি।

হবিগঞ্জ জেলা সম্পর্কে কিছু তথ্য

হবিগঞ্জ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে হবিগঞ্জ বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। ১৯৮৪ সালে হবিগঞ্জকে জেলায় রূপান্তর করা হয়। এর আগে ১৮৭৪ সাল থেকে হবিগঞ্জ মহকুমা সিলেট জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। হবিগঞ্জ জেলার আয়তন ২৬৩৬.৫৮ বর্গকিলোমিটার। এর জনসংখ্যা ২০,৮৯,০০১ জন (২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী)। উপজেলা ১০টি, পৌরসভা ৬টি, ইউনিয়ন ৭৭টি, গ্রাম ১৬৮৯টি। 

হবিগঞ্জ এর বিখ্যাত খাবার

হবিগঞ্জে অনেকগুলো জনপ্রিয় খাবার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে নিচে বিখ্যাত কয়েকটি খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। 

ছিকর

এটি হবিগঞ্জ জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এটি মাটি দিয়ে তৈরি একটি খাবার। ছিকর তৈরির জন্য, মিহি মাটিকে রোদে শুকিয়ে নিয়ে এর সাথে লবন মিশিয়ে তা বেলে ছাঁচে দিয়ে পোড়ানো হয়। ছিকর সাধারণত ভাতের সাথে খাওয়া হয়।

চুনারুঘাটের ইলিশ মাছ

চুনারুঘাট উপজেলার ইলিশ মাছ খুবই বিখ্যাত। এই উপজেলার মাছগুলোর স্বাদ অতুলনীয়।

বানিয়াচংয়ের তেতুলের আচার

বানিয়াচং উপজেলার তেতুলের আচার খুবই সুস্বাদু। এই উপজেলার তেতুলের আচার সারা বাংলাদেশে বিখ্যাত।

লাউয়াছড়ার মধু

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মধু খুবই বিখ্যাত। এই উদ্যানের মধুর স্বাদ অতুলনীয়।

হবিগঞ্জের চা

হবিগঞ্জ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান চা উৎপাদনকারী জেলা। জেলার চুনারুঘাট, মাধবপুর, বানিয়াচং, নবীগঞ্জ, এবং বাহুবলের উপজেলাগুলোতে চা উৎপাদন করা হয়। এখানে, চায়ের বৈশিষ্ট্য হল এটিতে একটি চমৎকার এবং সুন্দর সুবাস রয়েছে। এছাড়াও, হবিগঞ্জের চায়ের রঙ গাঢ় এবং স্বাদ মসৃণ। এই চা উৎপাদনের ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৮৫৪ সালে ব্রিটিশরা হবিগঞ্জে প্রথম চা বাগান স্থাপন করে। এরপর, ১৮৭১ সালে আরও কয়েকটি চা বাগান স্থাপন করা হয়। বর্তমানে, হবিগঞ্জে প্রায় ২০০টি চা বাগান রয়েছে। এসব চা বাগানে প্রায় ১০,০০০ শ্রমিক কাজ করেন।

এছাড়াও, হবিগঞ্জের অন্যান্য বিখ্যাত খাবার সমূহের মধ্যে রয়েছে, বানিয়াচংয়ের লুচি, হবিগঞ্জের গরুর মাংসের কালা ভুনা, হবিগঞ্জের পোলাও, খিচুড়ি, হবিগঞ্জের ঝালমুড়ি ও ফুচকা।

হবিগঞ্জ এর দর্শনীয় স্থান সমূহ

হবিগঞ্জ বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত জেলা। এখানে রয়েছে বনাঞ্চল, হাওর, চা বাগান, ঐতিহাসিক স্থান, ধর্মীয় স্থান ইত্যাদি। হবিগঞ্জের দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গা। এ বনাঞ্চলে রয়েছে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, ৭ প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরিসৃপ, ৬০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী এবং ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। এ উদ্যানে রয়েছে নানান জাতের পাখি, বন্যপ্রাণী, ঝর্ণা, লেক ইত্যাদি। এই উদ্যানটি যেন প্রকৃতির জীবন্ত উপহার।

বিতঙ্গল আখড়া

হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার বিতঙ্গল গ্রামে অবস্থিত বিতঙ্গল আখড়াটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় নিদর্শন। এটি ষোড়শ শতাব্দীতে রামকৃষ্ণ গোস্বামী নামে এক বৈষ্ণব ধর্মগুরু প্রতিষ্ঠা করেন। বিতঙ্গল আখড়াটি একটি বিশাল আয়তনের জমিতে অবস্থিত। আখড়ার মধ্যে একটি সুন্দর মন্দির, একটি বৈষ্ণব বিদ্যালয়, একটি বৃদ্ধাশ্রম, এবং একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রয়েছে। এটি আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা রামকৃষ্ণ গোস্বামীর সমাধিস্থল। মন্দিরটিতে রামকৃষ্ণ গোস্বামীর একটি বিশাল মূর্তিও রয়েছে।

শংকরপাশা শাহী মসজিদ

শংকরপাশা শাহী মসজিদ বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার হুরগাঁও ইউনিয়নের শংকরপাশা গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত হয়। মসজিদটি একটি বর্গাকার প্ল্যাটফর্মের উপর নির্মিত। এর চারপাশে একটি বারান্দা রয়েছে। মসজিদের মূল ভবনের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ২১ ফুট ৬ ইঞ্চি। বারান্দার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ২৯ ফুট ৬ ইঞ্চি। মসজিদের মূল ভবনের ওপর একটি বড় গম্বুজ রয়েছে। বারান্দার ওপর তিনটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের তিন দিকের দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় ৫ ফুট, আর পশ্চিম দিকের দেয়ালের পুরুত্ব এর প্রায় দ্বিগুণ।

কমলারানীর সাগর দীঘি

কমলারাণীর সাগরদীঘি বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় অবস্থিত একটি বৃহদায়তনের জলাধার। ৬৬.০০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই দীঘিটি আয়তনের দিক থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাধার হিসাবে স্বীকৃত। এই দীঘিটি খনন করান স্থানীয় সামন্ত রাজা পদ্মনাভ।

মহারত্ন জমিদার বাড়ি

বানিয়াচং উপজেলার সুজাতপুর গ্রামে অবস্থিত মহারত্ন জমিদার বাড়ি। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত এ বাড়িটি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত।

গ্রীনল্যান্ড পার্ক

গ্রীনল্যান্ড পার্ক বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রানীগাওয়ের একটি বিনোদন কেন্দ্র। পার্কটি ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পার্কটিতে একটি সুন্দর লেক, একটি চিড়িয়াখানা, একটি শিশুপার্ক, এবং একটি বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে।

এছাড়াও, হবিগঞ্জের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড, খুলনাইয়া হাওর, মৌলভীবাজার পাহাড়, রঘুনন্দন পাহাড়, আলমগীর খান দীঘি, মজলিশপুর দীঘি, গোলাপবাগ জমিদার বাড়ি, ও মদনপুর জমিদার বাড়ি উল্লেখযোগ্য।

হবিগঞ্জ এর বিখ্যাত ব্যক্তি মহোদয়

  • সৈয়দ সুলতান – মধ্যযুগের প্রখ্যাত কবি।
  • বিপিন চন্দ্র পাল – তিনি হচ্ছেন, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব।
  • সৈয়দ মুজতবা আলী – সাহিত্যের রম্য সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত।
  • শাহ এ এম এস কিবরিয়া – সাবেক অর্থমন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব। সেই সাথে তিনি এসকাপের সাবেক নির্বাহী সচিবও ছিলেন।
  • সিরাজুল হোসেন খান – তিনি হচ্ছেন সাবেক তথ্য মন্ত্রী, সাবেক শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রী। সেই সাথে সাবেক মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
  • শেখ ভানু – প্রখ্যাত সাধক।
  • মেজর জেনারেল এম এ রব – তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সেনাবাহিনী প্রধান ও সাবেক সংসদ সদস্য। 
  • মেজর জেনারেল (অবঃ) সি আর দত্ত – মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেক্টর কমান্ডার।
  • দেওয়ান ফরিদ গাজী – তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রতিমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং সাবেক সংসদ সদস্য।
  • এনামুল হক মোস্তফা শহীদ – তিনি একাধারে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সাবেক সমাজকল্যান মন্ত্রী।
  • বৃন্দাবন চন্দ্র দাশ – প্রখ্যাত সমাজ সংস্কারক।
  • আবদুল মান্নান চৌধুরী – তিনি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও সেই সাথে ইংল্যান্ডে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।
  • জগৎজ্যোতি দাস – বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের দাস বাহিনীর প্রধান হলেন জগৎজৌাতি দাস।
  • ফজলে হাসান আবেদ – জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক-এর প্রতিষ্ঠাতা।
  • ড. মোহাম্মদ ফরাশউদ্দিন – তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর।
  • নাজমুল হোসেন – ইনি হচ্ছেন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন খেলোয়াড়।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

হবিগঞ্জ জেলা সম্পর্কে এতক্ষন যা জেনেছেন তাতে আপনার কোন প্রশ্ন আছে কি? থাকলে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। হবিগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-

হবিগঞ্জের অবস্থান কোথায়?

হবিগঞ্জ বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের একটি জেলা। এটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এর উত্তরে সিলেট জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা এবং পশ্চিমে ভারতের মেঘালয় রাজ্য অবস্থিত।

হবিগঞ্জের আয়তন কত?

হবিগঞ্জ জেলার আয়তন ২৬৩৬.৫৮ বর্গকিলোমিটার।

হবিগঞ্জের জনসংখ্যা কত?

এই জেলার জনসংখ্যা ২০,৮৯,০০১ জন (২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী)

উপসংহার

প্রিয় বন্ধুরা, আপনাদের জ্ঞানসীমা বাড়ানোর জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে ঠাকুরগাঁও কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।

হবিগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত ‘ পোস্ট যদি আপনাদের জ্ঞানের কিছু অংশও আমাদের পোস্ট থেকে আসে তবে আমরা পোস্ট লেখাকে স্বার্থক বলে মনে করবো। কেমন লাগলো একটু কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন কেমন! আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *