Skip to content
Home » নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত

নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত

What Is Noakhali Famous For

নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত সেই বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই অতি মনোযোগ সহকারে আজকের এই পোস্টটি পড়তে হবে। নোয়াখালী জেলা নামে, সৌন্দর্যের দিক দিয়ে, বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ আর দর্শনীয় স্থানের দিক দিয়েও বাংলাদেশের অন্যতম জেলা। তাহলে প্রিয় পাঠক চলুন জেনে নিই নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত তার বিস্তর আলোচনা।

নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত

নোয়াখালী জেলা বাংলাদেশের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধিকারী। এছাড়াও বাংলাদেশের স্বনামধন্য জেলা হচ্ছে নোয়াখালী যে জেলাটি তার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। প্রিয় বন্ধুরা, চলুন নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত তার সবকিছু আজকের পোস্টে বিশদভাবে জানার চেষ্টা করি।

নোয়াখালী জেলার নামকরণ ও ইতিহাস

নোয়াখালী জেলার প্রাচীন নাম ছিল ভুলুয়া। ১৮২১ সালে ভুলুয়া নামে স্বতন্ত্র জেলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ অঞ্চলকে ত্রিপুরা (বর্তমান কুমিল্লা) জেলা হতে আলাদা করা হয়। ১৮৬৮ সালে ভুলুয়া জেলাকে নোয়াখালী জেলা নামকরণ করা হয়।

নামকরণ

নোয়াখালী জেলার নামকরণের পেছনে দুটি ধারণা রয়েছে। একটি ধারণা হল, ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নোয়াখালীর উত্তর-পূর্বাঞ্চল ডাকাতিয়া নদীর পানিতে ভয়াবহভাবে প্লাবিত হয়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য ১৬৬০ সালে একটি বিশাল খাল খনন করা হয়। এই খালটি নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় “নোয়া খাল” নামে পরিচিত ছিল। এই খালের কারণে অঞ্চলটি “নোয়াখালী” নামে পরিচিতি লাভ করে। অন্য ধারণা হল, নোয়াখালী জেলার নামকরণ হয় “নওহের খাল” থেকে। নওহের খাল ছিল একটি প্রাচীন খাল যা মেঘনা নদী থেকে নোয়াখালীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হত। এই খালটি বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

ইতিহাস

নোয়াখালী জেলার ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকেই বিস্তৃত। এই অঞ্চলে প্রাচীনকালে বৌদ্ধ ও হিন্দু রাজবংশের শাসন ছিল। ষোড়শ শতকে মোগলদের আগমনের পর নোয়াখালীর শাসনভার মুগলদের হাতে চলে যায়। ব্রিটিশদের আগমনের পর নোয়াখালী ব্রিটিশ শাসনাধীনে আসে। ১৮৬৮ সালে ভুলুয়া জেলাকে নোয়াখালী জেলা নামকরণ করা হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর নোয়াখালী পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর নোয়াখালী বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই জেলায় রয়েছে অনেক প্রাচীন নিদর্শন, যেমন: ভুলুয়ার জমিদার বাড়ি, নোয়াখালী রাজবাড়ি, নোয়াখালী জাদুঘর, সুধারাম মঠ, নোয়াখালী শহীদ মিনার।

নোয়াখালী জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

নোয়াখালী জেলার উন্নয়নে বহু ব্যক্তি ভূমিকা রেখেছেন। এই জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-

বদরুল হায়দার চৌধুরী

তিনি ছিলেন স্বাধীন এই বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। তিনি জীবনে অনেক ভাল কাজের সাথে সংযুক্ত ছিলেন।

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।

ওবায়দুল কাদের

তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিখ্যাত রাজনীতিবিদ। আর তিনি বাংলাদেশের বর্তমান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।

শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত। শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের জন্য শহীদ হন।

আবদুল মালেক উকিল

বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। তিনি সর্বদায় ন্যায়ের জন্য রাজনীতি করতেন।

রফিক উল্যা চৌধুরী

বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ও বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব। তিনি বঙ্গবন্ধুকে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সহযোগীতা করতেন।

নোয়াখালী জেলার এই বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তারা বাংলাদেশের জনগণের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস।

নোয়াখালী জেলার দর্শনীয় স্থান

বহু দর্শনীয় স্থান সম্বলিত জেলা নোয়াখালী যেখানে রয়েছে অনেক প্রাচীন নিদর্শন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। নোয়াখালী জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হলো-

ভুলুয়ার জমিদার বাড়ি 

নোয়াখালী জেলার ভুলুয়া উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। এই জমিদার বাড়িটি ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত হয়েছিল।

নোয়াখালী রাজবাড়ি

নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক রাজবাড়ি। এই রাজবাড়িটি ১৭ শতকের শেষের দিকে নির্মিত হয়েছিল।

নোয়াখালী জাদুঘর

নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি জাদুঘর। এই জাদুঘরে নোয়াখালী জেলার ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে।

সুধারাম মঠ

নোয়াখালী জেলার সুধারাম উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মঠ। এই মঠটি ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত হয়েছিল।

নোয়াখালী শহীদ মিনার

নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি শহীদ মিনার। এই শহীদ মিনারটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছিল।

বজরা শাহী মসজিদ

নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এই মসজিটি ১৬ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত হয়েছিল।

গান্ধী আশ্রম

নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক আশ্রম। এই আশ্রমটি মহাত্মা গান্ধী ১৯৪৬ সালের ১৪ ডিসেম্বরে পরিদর্শন করেছিলেন।

নোয়াখালী জেলার এই দর্শনীয় স্থানগুলি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই স্থানগুলিতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন।

নোয়াখালী জেলার বিখ্যাত খাবার

অনেক জনপ্রিয় খাবার এর সন্ধান মেলে জনপ্রিয় জেলা নোয়াখালীতে। এ জেলার মানুষ বাংলা ভাষাকে মজার উপায়ে বলতে পারে। আপনি যদি অন্য কোন জেলা থেকে এখানে কখনো ভ্রমণ করে থাকেন তবে দেখবেন তাদের ভাষাগুলো অনেকটা বুঝতেই পারছেন না। এই জেলার মানুষের খাদ্যাভ্যাসও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। চলুন দেখবেন নোয়াখালী জেলার কিছু বিখ্যাত খাবার হল-

মরিচ খোলা

নোয়াখালী জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই খাবারটি মূলত মাছ, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, ও লেবু দিয়ে তৈরি হয়।

নারিকেল নাড়ু

নোয়াখালী জেলার একটি জনপ্রিয় মিষ্টি। এই মিষ্টিটি মূলত নারিকেল, চিনি, ও ময়দা দিয়ে তৈরি হয়।

ম্যারা পিঠা

নোয়াখালী জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী পিঠা। এই পিঠাটি মূলত চালের গুঁড়া, চিনি, ও দুধ দিয়ে তৈরি হয়।

ছাইন্না পিঠা

নোয়াখালী জেলার একটি জনপ্রিয় পিঠা। এই পিঠাটি মূলত চালের গুঁড়া, চিনি, ও মালাই দিয়ে তৈরি হয়।

কলা পাতার মরিচ গুলা

নোয়াখালী জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই খাবারটি মূলত কলাপাতায় মোড়ানো মাছ, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, ও লেবু দিয়ে তৈরি হয়। নোয়াখালী জেলার এই খাবারগুলি তাদের অনন্য স্বাদের জন্য বিখ্যাত। এই খাবারগুলি নোয়াখালী জেলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নোয়াখালী জেলার কিছু অন্যান্য বিখ্যাত খাবার হল: কলাপাতার চিংড়ি, কলাপাতার ইলিশ, কলাপাতার গরুর মাংস, কাঁচা মরিচের চপ, ময়দার চপ, মিষ্টি দই, রসমালাই, ছানামুখী। নোয়াখালী জেলার এই খাবারগুলি বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও জনপ্রিয়।

নোয়াখালী জেলার দ্বীপসমূহ

নোয়াখালী জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি সমুদ্র উপকূলীয় জেলা। এই জেলার উপকূলে অনেক দ্বীপ রয়েছে। নোয়াখালী জেলার দ্বীপগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

সোনাইমুড়ী দ্বীপ 

নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলায় অবস্থিত একটি দ্বীপ। এই দ্বীপটি তার ম্যানগ্রোভ বন ও জলচর প্রাণীর জন্য বিখ্যাত।

হলিয়া দ্বীপ

নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলায় অবস্থিত একটি দ্বীপ। এই দ্বীপটি তার ম্যানগ্রোভ বন ও জলচর প্রাণীর জন্য বিখ্যাত।

মাইজদী দ্বীপ

নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি দ্বীপ। এই দ্বীপটি তার কৃষিজমি ও মৎস্য সম্পদের জন্য বিখ্যাত।

রামগতি দ্বীপ

নোয়াখালী জেলার রামগতি উপজেলায় অবস্থিত একটি দ্বীপ। এই দ্বীপটি তার ম্যানগ্রোভ বন ও জলচর প্রাণীর জন্য বিখ্যাত।

নিঝুম দ্বীপ

নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি জনমানবহীন দ্বীপ। এই দ্বীপটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। নোয়াখালী জেলার দ্বীপগুলি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই দ্বীপগুলিতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। নোয়াখালী জেলার দ্বীপগুলির মধ্যে নিঝুম দ্বীপ সবচেয়ে বিখ্যাত। এই দ্বীপটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। নিঝুম দ্বীপটি একটি জনমানবহীন দ্বীপ। এই দ্বীপে কোন জনবসতি নেই। এই দ্বীপে শুধুমাত্র কিছু সামুদ্রিক পাখি ও জলচর প্রাণী বাস করে। নিঝুম দ্বীপটিতে একটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এই পর্যটন কেন্দ্র থেকে পর্যটকরা দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

বাংলাদেশের অন্যতম নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত তা ইতোমধ্যে পোস্ট থেকে জানতে পেরেছেন। নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-

নোয়াখালী জেলার অবস্থান কোথায়?

নোয়াখালী জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক জেলা। নোয়াখালী জেলার উত্তরে কুমিল্লা জেলা, উত্তর-পূর্বে চট্টগ্রাম জেলা, পূর্বে কক্সবাজার জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে ফেনী জেলা অবস্থিত।

নোয়াখালী জেলার প্রধান নদী কোনটি?

নোয়াখালী জেলার প্রধান নদী হল মেঘনা নদী। আর আমরা জানি মেঘনা নদী বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম নদী।

নোয়াখালী জেলার পূর্ব নাম কি

নোয়াখালী জেলার পূর্ব বা প্রাচীন নাম ছিল ভুলুয়া। আর নোয়াখালী সদর উপজেলার নাম ছিল সুধারাম।

উপসংহার

প্রিয় বন্ধুরা, নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত এই সম্পর্কিত পোস্টটি পড়ে আশা করি অনেক ভাল লেগেছে। নোয়াখালী জেলার অপরুপ সৌন্দর্য আর বিখ্যাত সবকিছু নিশ্চয় আপনার মনে দোলা দিয়েছে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে চট্টগ্রাম কিসের জন্য বিখ্যাত সম্পর্কে পড়তে পারেন।

নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত‘ পোস্টটি আপনার কাছে যদি ভাল লাগে তবে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে জানিয়ে দিন নোয়াখালী জেলার বিষয়ে আপনার মূল্যবান মতামত। আজকে এই পর্যন্তই ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *