Skip to content
Home » জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত

জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত

What Is Jamalpur Famous For

জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত তা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা যদিও বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এটা জানা আমাদের দায়িত্ব। আজকের পোস্টটি মূলত তাদের উদ্দেশ্যেই লেখা। এই পোস্ট থেকে আপনি জামালপুর জেলা বিখ্যাত হওয়ার বিশদ তথ্য পাবেন ইনশাআল্লাহ্। সমৃদ্ধ এই জেলার রয়েছে বিস্তর ইতিহাস, রয়েছে শত শত দর্শনীয় স্থান যা হাজারো দর্শকের মনে প্রশান্তি বয়ে আনে। 

জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য ও ভূ-প্রাকৃতিক সম্পদের অংশ রয়েছে জনপ্রিয় এই জেলা জামালপুর-এ। জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত তার পুরো তথ্যই পাবেন এখানে। সুতরাং পড়া থামিয়ে দিলেন তো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস করলেন! প্রিয় পাঠক, আপনি যদি কখনো জামালপুর যান তবে অবশ্যই সেখানে থাকা দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে ভুলবেন না। কেননা, এগুলো মিস করা মানে আপনি আনন্দঘন মুহুর্ত থেকে নিজেকে বিরত রাখছেন। এখানে ভ্রমণ করলে, প্রকৃতি যে আমাদের জন্য কত বিচিত্র কিছু রেখেছেন তা বুঝতে পারবেন। 

জামালপুর জেলার নামকরণ ও ইতিহাস

জামালপুর জেলার নামকরণ করা হয়েছে প্রখ্যাত সুফি সাধক হযরত শাহ জামাল (রহ.)-এর নামানুসারে। তিনি ১৬শ শতকে ইয়েমেন থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য এ অঞ্চলে এসেছিলেন। তাঁর মাজার জামালপুর শহরে অবস্থিত। জামালপুর জেলার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে এ অঞ্চল মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে এটি পাল, সেন, মোগল ও ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। ব্রিটিশ আমলে, ১৮৪৫ সালে জামালপুরকে ময়মনসিংহ জেলার একটি মহকুমা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৮ সালে জামালপুরকে স্বাধীন বাংলাদেশের ২০তম জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জামালপুর জেলার ভৌগোলিক অবস্থান উত্তরে শেরপুর ও কুড়িগ্রাম, দক্ষিণে টাঙ্গাইল, পূর্বে ময়মনসিংহ ও পশ্চিমে যমুনা নদী দ্বারা বেষ্টিত। জামালপুর জেলার আয়তন ২০৩১.৯৮ বর্গ কিলোমিটার। জামালপুর জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। এখানে ধান, গম, পাট, আলু, ইক্ষু, শাকসবজি ইত্যাদির চাষ হয়। জামালপুর জেলায় নীলকুঠি, শোলাকিয়া মসজিদ, ইসলামপুরের কাসা শিল্প, সরিষাবাড়ী স্থলবন্দর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। প্রায় ২৩ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে এখানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মালম্বীরা বসবাস করেন।

জামালপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

আমরা এখানে জামালপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের একটি তালিকা তৈরী করেছি। দেখুন হয়তো এগুলো আপনার অনেক উপকারে আসতে পারে।

  • আবুল হোসেন – জামালপুরের জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ
  • আলমাস হোসেন
  • আব্দুল কাইয়ুম
  • এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত
  • নজরুল ইসলাম খান
  • এ কে এম ময়নুল হক
  • করিমুজ্জামান তালুকদার
  • নাদেরুজ্জামান খান

এছাড়াও জামালপুর জেলায় অনেক স্বনামধন্য লেখক, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন।

জামালপুর জেলার বিখ্যাত খাবার

জামালপুর জেলায় আপনি অনেক জনপ্রিয় খাবার দেখে থাকবেন। এগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু খাবার সম্পর্কে আমরা এবার আলোকপাত করতে চলেছি। সাথেই থাকুন…

খাজা

জামালপুরের সবচেয়ে বিখ্যাত খাবার হল খাজা। এটি একটি মিষ্টি খাবার যা বাদাম, চিনি, ময়দা এবং অন্যান্য উপাদান দিয়ে তৈরি। খাজা জামালপুরের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়, তবে সবচেয়ে বিখ্যাত খাজা হল বক্সীগঞ্জের খাজা।

বোল্ডা

বোল্ডা হল আরেকটি বিখ্যাত জামালপুরী খাবার। এটি একটি ঝাল খাবার যা মাছ, ডাল, আলু এবং অন্যান্য উপাদান দিয়ে তৈরি। বোল্ডা সাধারণত ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়।

মিল্লি

মিল্লি হল একটি মিষ্টি খাবার যা বাদাম, চিনি, ময়দা এবং অন্যান্য উপাদান দিয়ে তৈরি। মিল্লি সাধারণত ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার সময় পরিবেশন করা হয়।

ঝালমুড়ি

ঝালমুড়ি হল একটি জনপ্রিয় খাবার যা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। জামালপুরেও ঝালমুড়ি বেশ জনপ্রিয়।

মিষ্টি দই

জামালপুরের মিষ্টি দই বেশ বিখ্যাত। এটি সাধারণত গরুর দুধ দিয়ে তৈরি করা হয় এবং এতে বিভিন্ন ধরনের মশলা যোগ করা হয়। এছাড়াও, জামালপুরে আরও অনেক বিখ্যাত খাবার রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: ঝাল রসগোল্লা, কাঁচা রসগোল্লা, রসমালাই, ছানাপোড়া, চমচম, সন্দেশ, পায়েস, খিচুড়ি, মাছ ইত্যাদি। জামালপুরের খাবারগুলোর স্বাদ সত্যিই অতুলনীয়। ভাববেন না যে আমি সেখানে গিয়েছি। পরিচিত অনেকের কাছেই এ বিষয়ে তথ্য পেয়েছি মাত্র। 

জামালপুর জেলার দর্শনীয় স্থান

বাংলাদেশের অন্যতম জেলা জামালপুরের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে জানতে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল করুন-

লাউচাপড়া পিকনিক স্পট

বকশীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত লাউচাপড়া পিকনিক স্পটটি জামালপুর জেলার অন্যতম জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এটি গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি সুন্দর পিকনিক স্পট। এখানে রয়েছে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, ঝর্ণা, নদী, লেক, এবং বন।

দয়াময়ী মন্দির

জামালপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত দয়াময়ী মন্দিরটি একটি প্রাচীন মন্দির। এটি ১৭৯৩ সালে নির্মিত হয়েছিল। মন্দিরটিতে রয়েছে দয়াময়ী দেবীর বিগ্রহ।

যমুনা সার কারখানা

সরিষাবাড়ি উপজেলায় অবস্থিত যমুনা সার কারখানাটি বাংলাদেশের বৃহত্তম সার কারখানা। এটি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কারখানাটি দেখতে প্রতিদিন অনেক পর্যটক ভিড় করেন।

লুইস ভিলেজ রিসোর্ট ও পার্ক

জামালপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত লুইস ভিলেজ রিসোর্ট ও পার্কটি একটি আধুনিক রিসোর্ট। এটিতে রয়েছে সুন্দর সুইমিং পুল, রেস্তোরাঁ, এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক সুযোগ-সুবিধা।

হযরত শাহ জামাল (র.)-এর মাজার

জামালপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত হযরত শাহ জামাল (র.)-এর মাজারটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। সবচেয়ে মজার বিষয় কি জানেন? বিশেষভাবে খ্যাত এই মহামানবের নামেই কিন্তু জামালপুর নামকরণ করা হয়েছে।

মালঞ্চ মসজিদ

মেলান্দহ উপজেলায় অবস্থিত মালঞ্চ মসজিদটি একটি অষ্টভুজাকৃতির মসজিদ। এটি ১৫ শতকে নির্মিত হয়েছিল।

দেওয়ানগঞ্জের সুগার মিলস

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত দেওয়ানগঞ্জের সুগার মিলসটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ চিনি কল। 

জামালপুর জেলার বিখ্যাত হাওড়

জামালপুর জেলা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় হাওড় এলাকা। জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীর শাখা-প্রশাখাগুলোর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য হাওড়। জামালপুর জেলার বিখ্যাত হাওড়গুলো হচ্ছে-

মেঘনা হাওড়

মেঘনা হাওড় বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওড়। এটি জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলায় অবস্থিত। মেঘনা হাওড়ের আয়তন প্রায় ২৫০ বর্গ কিলোমিটার।

বিল বালাখালি

বিল বালাখালি জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি বিশাল হাওড় যা প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

গড়চুনা বিল 

বিল গড়চুনা জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি বিশাল হাওড় যা প্রায় ৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

বিল মিরপুর

বিল মিরপুর জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি বিশাল হাওড় যা প্রায় ২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

রামপাশা বিল 

বিল রামপাশা জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি বিশাল হাওড় যা প্রায় ২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

এছাড়াও, জামালপুর জেলায় আরও অনেক ছোট-বড় হাওড় রয়েছে। এই হাওড়গুলো বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য ও ভূ-প্রাকৃতিক সম্পদের অংশ।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমহ

এতক্ষনে নিশ্চয় জামালপুর জেলার সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। সেই সাথে, জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত তার একটি স্পষ্ট ধারণাও পেয়েছেন। জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-

জামালপুর জেলার অবস্থান কোথায়?

উত্তর: জামালপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এটি ময়মনসিংহ বিভাগের একটি জেলা। 

জামালপুর জেলার আয়তন কত?

উত্তর: জামালপুর জেলার আয়তন ,০৩১.৯৮ বর্গকিমি।

জামালপুর জেলার জনসংখ্যা কত?

উত্তর: জামালপুর জেলার জনসংখ্যা ২০১১ সালের আদমশুমারী রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ২৩,৮৪,৮১০ জন।

জামালপুর জেলার প্রধান নদী কোনটি?

উত্তর: জামালপুর জেলার প্রধান নদী হল যমুনা নদী।

জামালপুর জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল কোনগুলো?

উত্তর: জামালপুর জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল হল ধান, পাট, গম, আখ, সরিষা, এবং আলু।

জামালপুর জেলার প্রধান শিল্প কোনগুলো?

উত্তর: জামালপুর জেলার প্রধান শিল্পগুলো হল খাদ্য শিল্প, পাট শিল্প, এবং কৃষি যন্ত্রপাতি শিল্প।

জামালপুর জেলার প্রধান উৎসব কোনগুলো?

উত্তর: জামালপুর জেলার প্রধান উৎসবগুলো হল-

  • পহেলা বৈশাখ
  • ঈদুল ফিতর
  • ঈদুল আজহা
  • শবে বরাত
  • শবে কদর
  • ঈদুল মিলাদুন্নবী
  • পূজা

উপসংহার

ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্গত বহু ঐতিহ্যে ভরপুর জেলা জামালপুরে থাকা শত শত দর্শনীয় স্থান এ দেশের হাজারো পর্যটকদের নতুন তথ্য আহরণ এবং একইসাথে বিনোদনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।

জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত‘ একটু হলেও আঁচ করতে পেরেছেন নিশ্চয়। প্রিয় পাঠক, আপনি যদি কখনো জামালপুর যাওয়ার চিন্তা করেন তবে সেখানে থাকা দর্শনীয় স্থান, হাওড়, প্রখ্যাত সাধক হযরত শাহ জামাল (রহ.) এর মাজার দেখতে ভুলবেন না কেমন! কেমন লাগলো আমাদের আজকের আয়োজন? ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনার মূল্যবান মতামত। আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *