Skip to content
Home » মিরপুরের দর্শনীয় স্থান

মিরপুরের দর্শনীয় স্থান

Sights Of Mirpur

মিরপুরের দর্শনীয় স্থান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বিশাল বিশাল অট্টালিকা আর নানাবিধ দর্শনীয় স্থানের জন্য বিখ্যাত হচ্ছে মিরপুর। এছাড়াও মিরপুর এলাকা অনেক জনবহুল আর গাড়ীতে ভরপুর। বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা মিরপুরের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান। 

মিরপুরের দর্শনীয় স্থান

Sight of Mirpur

মিরপুর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যা ঢাকার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। মিরপুর শুধু দর্শনীয় স্থানের জন্যই বিখ্যাত নয়, মিরপুর একটি আবাসিক এলাকা হিসেবেও বিশেষভাবে খ্যাত। এখানে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রিয় পাঠক, মিরপুরের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। কথা না বাড়িয়ে চলুন মিরপুরের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক-

মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা

Mirpur National Zoo

মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা বাংলাদেশের বৃহত্তম চিড়িয়াখানা। এটি ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত। চিড়িয়াখানাটি ১৯৭৪ সালে হাইকোর্ট চত্বরে জীবজন্তুর প্রদর্শনশালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। চিড়িয়াখানায় ১৯১ প্রজাতির ২১৫০টি প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাঘ, সিংহ, হাতি, জিরাফ, বানর, হরিণ, ইত্যাদি। চিড়িয়াখানাটি নিয়মিতভাবে নতুন প্রাণী যুক্ত করে আসছে। চিড়িয়াখানাটি দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা।

মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন

Mirpur Botanical Garden

মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত। এটি একটি বৃহৎ উদ্ভিদ উদ্যান, যা প্রায় ৮৪ হেক্টর (২০৮ একর) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। উদ্যানটি ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। উদ্যানটিতে প্রায় ৮০০ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ফুল, ফল, ওষধি গাছ, ইত্যাদি। এছাড়াও, এখানে একটি গ্রিনহাউস রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির নান্দনিক উদ্ভিদ রয়েছে।

উদ্যানটি দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। উদ্যানটিতে বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফুলের বাগান, ফলের বাগান, ওষধি গাছের বাগান, গ্রিনহাউস, শিশুদের উদ্যান। মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন ঢাকার একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। প্রতি বছর লাখ লাখ দর্শনার্থী এটি পরিদর্শন করে।

মিরপুর কালশী জামে মসজিদ

Mirpur Kalshi Jame Masjid

মিরপুর কালশী জামে মসজিদ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটি মিরপুরের কালশী এলাকায় অবস্থিত। মসজিদটি একটি বর্গাকার আকৃতির। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ প্রায় ১০০ ফুট। মসজিদটিতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের দরজা ও জানালাগুলি কাঠের তৈরি। মসজিদটিতে একটি সুন্দর মিনারের রয়েছে। মিনারের উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট। মিনারের শীর্ষে একটি লাল রঙের চূড়া রয়েছে। মসজিদটি ঢাকার অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

মসজিদটি দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্য বিনামূল্যে। মসজিদটি সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য হলো মসজিদের নির্মাণশৈলীতে ইসলামি ও ভারতীয় স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ রয়েছে। মসজিদটিতে একটি সুন্দর মিহরাব রয়েছে। মিহরাবটি মার্বেল পাথরের তৈরি। মসজিদের ছাদে একটি সুন্দর ছাদবাতি রয়েছে। ছাদবাতিটি লোহার তৈরি। মসজিদটিতে একটি সুন্দর ইমামখানা রয়েছে। ইমামখানাটি কাঠের তৈরি। মিরপুর কালশী জামে মসজিদ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থাপনা। এটি বাংলাদেশের একটি গর্বের বিষয়ও বটে।

মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থান

Mirpur Shaheed Intellectual Graveyard

মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত একটি সমাধিস্থল, যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবিদের সমাহিত করা হয়। কবরস্থানটি ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী আল-বদর বাহিনীর হাতে নিহত বুদ্ধিজীবিদের স্মরণে নির্মিত হয়। কবরস্থানে প্রায় ৩,০০০ বুদ্ধিজীবির সমাধি রয়েছে। কবরস্থানটি ৬৫ একর জমির উপর অবস্থিত। কবরস্থানের মাঝখানে একটি সুন্দর স্মৃতিসৌধ রয়েছে। স্মৃতিসৌধটিতে বুদ্ধিজীবিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য একটি স্মরণীয় ফলক রয়েছে।

কবরস্থানটিতে শহীদ বুদ্ধিজীবিদের পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত ভিজিট করেন। কবরস্থানটিতে প্রতি বছর শহীদ বুদ্ধিজীবিদের স্মরণে একটি শোকসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। কবরস্থানটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থান বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবিদের স্মৃতিকে অমর করে রাখে। কবরস্থানটি দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্য দরকার নেই, এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

মিরপুর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

Mirpur Liberation War Museum

মিরপুর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত একটি জাদুঘর, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। জাদুঘরটি ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জাদুঘরটিতে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে, যার মধ্যে আছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ, পোশাক ও সরঞ্জাম, ছবি ও ভিডিও, দলিলপত্র ও অন্যান্য নথিপত্র। জাদুঘরটিতে বিভিন্ন প্রদর্শনী রয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে। জাদুঘরটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষামূলক কর্মসূচিও রয়েছে।

জাদুঘরটি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য একটি অনন্য জায়গা হতে পারে।

মিরপুর লেক

Mirpur Lake

মিরপুর লেক বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত একটি বিশাল লেক। এটি ঢাকার অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র। লেকটি মিরপুরের শাহ আলী এলাকায় অবস্থিত। লেকটি প্রায় ৪০০ একর জমির উপর অবস্থিত। লেকের আয়তন প্রায় ২৮০ মিলিয়ন ঘনমিটার। লেকটিতে নৌকা ভ্রমণ, সাইকেল চালানো, ইত্যাদির সুযোগ রয়েছে। লেকের চারপাশে রয়েছে একটি সুন্দর পার্ক।

পার্কটিতে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা ও ফুল রয়েছে। লেকটি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। মিরপুর লেক ঢাকার একটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঘুরতে আসে। লেকের চারপাশে রয়েছে একটি সুন্দর পার্ক। লেকটি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মিরপুর লেক ঢাকার একটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র। এখানে এসে আপনি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন এবং একই সাথে বিনোদনও নিতে পারবেন।

মিরপুর বেড়িবাঁধ

Mirpur Embankment

মিরপুর বেড়িবাঁধ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত একটি বেড়িবাঁধ যা মিরপুরের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অনত্যম। এটি তুরাগ নদীকে শাসন করার জন্য নির্মিত হয়েছিল। বেড়িবাঁধটি মিরপুরের ১ থেকে ১৪ নম্বর পর্যন্ত এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। বেড়িবাঁধের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ কিলোমিটার। এই বাঁধের উপর দিয়ে একটি রাস্তা রয়েছে। এই রাস্তাটি দিয়ে রিকশা, মোটরসাইকেল, ইত্যাদি দিয়ে চলাচল করা যায়। 

বেড়িবাঁধের দুই পাশে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা। আপনি চাইলেই, বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে হাঁটাচলা করতে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। 

মিরপুর জাতীয় স্টেডিয়াম

Mirpur National Stadium

মিরপুর জাতীয় স্টেডিয়াম হল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এটি ২০০৬ সালে নির্মিত হয় এবং বর্তমানে এটি বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের হোম ভেন্যু। স্টেডিয়ামটি মিরপুরের ৬ নং সেক্টরে অবস্থিত এবং এর ধারণক্ষমতা ২৫,৪১৬। স্টেডিয়ামটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয় ১০০ কোটি টাকা। এটি নির্মাণের জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যৌথভাবে কাজ করে। স্টেডিয়ামটি নির্মাণের পর থেকে এটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছে।

মিরপুর জাতীয় স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের উত্থানের সাক্ষী। স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ জিতেছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। মিরপুর জাতীয় স্টেডিয়ামটি শুধুমাত্র ক্রিকেট ম্যাচের জন্যই ব্যবহৃত হয় না। এটি অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্যও ব্যবহৃত হয়, যেমন কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি। মিরপুর জাতীয় স্টেডিয়াম বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের কাছে একটি প্রিয় স্থান। এটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতীকও বটে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

জনবহুল শহর ঢাকার অন্যতম একটি অঞ্চল হচ্ছে মিরপুর যেখানে আপনি অনেক দর্শনীয় স্থান দেখে থাকবেন। মিরপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো একেকটি একেক বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিনোদন দিয়ে যাচ্ছে বাংলার মানুষকে। 

মিরপুর কেন নামকরণ হয়?

মোঘল আমলের অনেক অভিজাত লোকের নামের আগে মীর শব্দটি ব্যবহার হতো আর মীরের ভূ-সম্পত্তির মধ্যে ছিল এলাকাটি তাই পরে এর নামকরণ হয় মিরপুর।

মিরপুর কেন বিখ্যাত?

মিরপুরে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান তার মধ্যে জাতীয় চিড়িয়াখানা হচ্ছে অন্যতম। এছাড়াও শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি।

উপসংহার

আমাদের আলোচনা আপনার কেমন লেগেছে বলুন তো? নিশ্চয় ভালো লেগেছে! তাহলে শেয়ার করতে দোষ কি বলুন! এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে উত্তরবঙ্গের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে পড়তে পারেন।

আমরা এতক্ষণ জানলাম ‘মিরপুরের দর্শনীয় স্থান‘ সম্পর্কে। প্রিয় পাঠক আপনি কি মিরপুর সম্পর্কে এমন কিছু জানেন যা আমরা উল্লেখ করি নাই। তাহলে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন আপনার মূল্যবান মতামত। আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামণা করে বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ্ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *