Skip to content
Home » ধানমন্ডি দর্শনীয় স্থান

ধানমন্ডি দর্শনীয় স্থান

Dhanmondi Is A Place To Visit

ধানমন্ডি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য জানতে এই পোস্টটি গুরুত্বসহ পড়ে নিন। কেননা, এখানে আমরা ধানমন্ডি এর জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলোর একটি জরিপ চালাবো। প্রিয় পাঠক, আপনি পড়ার জন্য প্রস্তুত আছেন তো? চলুন শুরু করা যাক-

ধানমন্ডি দর্শনীয় স্থান

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি আবাসিক এলাকা ধানমন্ডি যেখানে আপনি অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান অর্থাৎ, ধানমন্ডি দর্শনীয় স্থান দেখে থাকবেন যা আপনার বিনোদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এগুলোর মধ্যে রবীন্দ্র সরোবর, ধানমন্ডি আর্ট গ্যালারি এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর উল্লেখযোগ্য।

ধানমন্ডি লেক

Dhanmondi Lake

ধানমন্ডি লেক ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত একটি হ্রদ। এটি একটি কৃত্রিম হ্রদ। লেকটি প্রাথমিকভাবে কাওরান বাজার নদীর একটি পরিত্যক্ত খাল ছিল যা তুরাগ নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। আবার, লেকটি আংশিকভাবে বেগুনবাড়ি খালের সাথেও মিলিত হয়েছে। ধানমন্ডি লেকের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোমিটার, প্রস্থ ৩৫ থেকে ১০০ মিটার এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ৪.৭৭ মিটার। 

লেকের চারপাশে একটি চক্রাকার পাকা ফুটপাত রয়েছে। এই ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পর্যটকরা লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। ধানমন্ডি লেক একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পটও বটে। এখানে অনেকগুলো রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে রয়েছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, পর্যটকরা লেকের পারে বসে মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে পারেন। এই লেকে নৌকা চালানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। সুতরাং, পর্যটকরা চাইলে লেকে নৌকায় চড়ার মাধ্যমেও এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

রবীন্দ্র সরোবর

Rabindra Sarovar

রবীন্দ্র সরোবর ঢাকার ধানমন্ডি লেকের পাশেই অবস্থিত একটি মুক্তমঞ্চ। এটি ১৯৬১ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। রবীন্দ্র সরোবরের নামকরণ করা হয়েছে বাংলাদেশের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামানুসারে। রবীন্দ্র সরোবর একটি জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এখানে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেমন: সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক, কবিতা আবৃত্তি এর আয়োজন করা হয়। রবীন্দ্র সরোবরের চারপাশে রয়েছে অনেকগুলো গাছপালা।

এখানে বসে দর্শকরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারেন। রবীন্দ্র সরোবর ঢাকার একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য একটি আদর্শ জায়গা হচ্ছে রবীন্দ্র সরোবর। এই সরোবরের কিছু বৈশিষ্ট্য এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এখানে থাকা একটি মুক্তমঞ্চ যা ধানমন্ডি লেকের পাশেই অবস্থিত। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘর

Bangabandhu Sheikh Mujib Memorial Museum

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘর বা সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি বিশেষ জাদুঘর যা বাঙালি জাতির অন্যতম নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি সংরক্ষণার্থে স্থাপন করা হয়েছে। জাদুঘরটি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সেই বাড়িতে অবস্থিত যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছেন, স্বাধিকারের সংগ্রামে জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট নিহত হন। জাদুঘরে প্রদর্শিত হয় এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের ছবি, চিত্রকর্ম, এবং ভাস্কর্য। 

বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, যেমন তাঁর পোশাক, জুতা, ঘড়ি, এবং অন্যান্য আসবাবপত্র। এছাড়া রয়েছে  বঙ্গবন্ধুর লেখা বিভিন্ন বই, প্রবন্ধ, এবং চিঠিপত্র ও বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর লেখা বিভিন্ন বই এবং প্রকাশনা। জাদুঘরটি সোমবার থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রবিবার বন্ধ থাকে। জাদুঘরে প্রবেশের জন্য প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। ছাত্র, বৃদ্ধ, এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ২৫ টাকা। জাদুঘরটি বাংলাদেশ সরকারের বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত হয়।

মসজিদ উত তাকওয়া

Masjid-Ut-Taqwa

মসজিদ-উত-তাকওয়া ঢাকা শহরের ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। মসজিদটি বাংলাদেশের জাতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। মসজিদ-উত-তাকওয়ার নকশাটি তৈরি করেছিলেন স্থপতি আব্দুল রহিম। মসজিদটি একটি বর্গাকার ভবন। মসজিদের চারটি দেয়ালে চারটি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের সামনে একটি বড় বারান্দা রয়েছে। বারান্দায় সারি সারি স্তম্ভ রয়েছে। 

মসজিদ-উত-তাকওয়ার অভ্যন্তরভাগটি খুব সুন্দর। মসজিদের মেঝে মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি। মসজিদের দেয়াল ও গম্বুজগুলিতে কুরআনের আয়াত ও ইসলামিক নকশা খোদাই করা হয়েছে। মসজিদ-উত-তাকওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি বাংলাদেশের ইসলামী সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। মসজিদ-উত-তাকওয়া প্রতিদিন সকালে, বিকেলে, এবং রাতে মুসল্লিদের জন্য খোলা থাকে।

জাহাজ বাড়ি

Ship Home

জাহাজ বাড়ি ছিল ঢাকার ধানমন্ডি লেকের পাশে অবস্থিত একটি বিলাসবহুল বাড়ি। এটি একটি কৃত্রিম জাহাজের আদলে নির্মিত হয়। জাহাজ বাড়িটি ১৯৯৩ সালে শের-ই-খাজা নামে এক ব্যক্তি নির্মাণ করেছিলেন। এই বাড়িটি তিনতলা বিশিষ্ট। প্রথম তলায় একটি বড় হল, একটি ডাইনিং রুম, একটি লাইব্রেরি এবং একটি অফিস। দ্বিতীয় তলায় কয়েকটি শয়নকক্ষ, একটি বাথরুম এবং একটি বারান্দা রয়েছে। আবার, তৃতীয় তলায় একটি ছাদ বারান্দা দেখতে পাবেন। জাহাজ বাড়িটি তার অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং আকর্ষণীয় নকশার জন্য বিখ্যাত। এখানে একটি অত্যাধুনিক এসি সিস্টেম, একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং একটি ইনডোর পুল।

জাহাজ বাড়ির নকশাটি ছিল এমনভাবে করা যেন এটি একটি আসল জাহাজের মতো দেখায়। জাহাজ বাড়িটি ঢাকার একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান যেখানে দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক আসতেন। ২০১৬ সালে, জাহাজ বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়। এটি ভেঙে ফেলার কারণ ছিল এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে বিবেচিত হওয়া। 

ধানমন্ডি আর্ট গ্যালারি

Dhanmondi Art Gallery

ধানমন্ডি আর্ট গ্যালারি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং বিখ্যাত শিল্প জাদুঘর। এটি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গ্যালারিটি ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত। ধানমন্ডি আর্ট গ্যালারিতে বাংলাদেশের বিখ্যাত শিল্পীদের চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য, ছাপচিত্র, কাঠের কাজ, ধাতুনির্মিত শিল্পকর্ম, কাগজের কাজ, এবং অন্যান্য শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়। গ্যালারিটি প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী আয়োজন করে।

এছাড়াও, গ্যালারিটিতে শিল্পকলার উপর বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা এবং সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ধানমন্ডি আর্ট গ্যালারি বাংলাদেশের শিল্পকলার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি বাংলাদেশের শিল্পীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। গ্যালারিটি বাংলাদেশের শিল্পকলার সাথে পরিচিত হতে বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।

ধানমন্ডি ঈদগাহ

Dhanmondi Eidgah

ধানমন্ডি ঈদগাহ ঢাকার একটি ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা যা ঢাকার ধানমন্ডি থানায় অবস্থিত। ঈদগাহটি ১৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সুবাদার সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজার প্রধান অমাত্য মীর আবুল কাসেম কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। ঈদগাহটি একটি বিশাল উন্মুক্ত মাঠ। মাঠটি ৪০০ ফুট দীর্ঘ এবং ৩০০ ফুট প্রশস্ত। মাঠের মাঝখানে একটি বড় মঞ্চ রয়েছে।

মঞ্চের চারপাশে একটি প্রশস্ত বারান্দা রয়েছে। ঈদগাহটিতে একটি মিনারও রয়েছে। ঈদগাহটি বর্তমানেও ঈদের নামাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, এখানে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ধানমন্ডি ঈদগাহ ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং এটি ঢাকার মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থানও বটে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

ধানমন্ডি এলাকায় অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সবুজ শ্যামল দৃশ্য রয়েছে যা দর্শক মনে প্রশান্তি বয়ে আনে। এছাড়াও এখানে, সুন্দর উদ্যান এবং অবসর সময় কাটানোর জন্য বিনোদনমূলক পার্ক রয়েছে। 

ধানমন্ডি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-

কীভাবে ধানমন্ডি নামকরণ হয়?

অনেকেই মনে করেন এখানে অনেক পরিমাণে ধান উৎপন্ন হয় বলেই ধানমন্ডি নামকরণ করা হয়েছে। আসলে এটি সঠিক নয়। সঠিক তথ্য হচ্ছে যে, এখানে ধান এবং অন্যান্য শস্যের বীজের হাট বসতো আর হাট এবং বাজারকে ফার্সি আর উর্দু ভাষায় মন্ডি বলা হয়। এ থেকেই ধানমন্ডি নামকরণ হয়েছে। 

ধানমন্ডি কিসের জন্য বিখ্যাত?

ধানমন্ডি ঢাকার একটি অভিজাত এলাকা। এটি রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থল। ধানমন্ডি বিখ্যাত তার সুন্দর পরিবেশ, দর্শনীয় স্থান এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য।

উপসংহার

ধানমন্ডি দর্শনীয় স্থান গুলো তার ঐতিহাসিকতার জন্য বিশেষভাব খ্যাত। বন্ধুরা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর, ধানমন্ডি লেক, ধানমন্ডি শিশু পার্ক, ধানমন্ডি গ্যাস্ট্রোলি পার্ক, ধানমন্ডি হিন্দু মন্দির, ধানমন্ডি মসজিদসহ বেশ কিছু দর্শনীয় স্থানের আঁধার হচ্ছে ধানমন্ডি। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে সাতক্ষীরা কিসের জন্য বিখ্যাত সম্পর্কে পড়তে পারেন।

ধানমন্ডি দর্শনীয় স্থান‘ সম্পর্কিত আমাদের এই পোস্টটি বন্ধুরা আপনাদের কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন আপনাদের মূল্যবান মতামত।এছাড়াও এখানে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা, যেমন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বঙ্গবন্ধুর বাসভবন, ধানমন্ডি ১৭ নম্বর রোডের রাষ্ট্রপতির বাসভবন, এবং ধানমন্ডি ২৯ নম্বর রোডের বিচারপতিদের বাসভবন অন্যতম। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *