Skip to content
Home » উত্তরবঙ্গের দর্শনীয় স্থান

উত্তরবঙ্গের দর্শনীয় স্থান

Places To Visit In North Bengal

উত্তরবঙ্গের দর্শনীয় স্থান হাজার হাজার দর্শনার্থীর জন্য যেন স্বর্গরাজ্য। কেন, তা বিস্তারিত জানতে পড়তে থাকুন। চা বাগান, জমিদারবাড়ী, ষাট গম্বুজ মসজিদ, কান্তজিউ মন্দির, মহাস্থানগড় আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে উত্তরবঙ্গে। প্রিয় পাঠক, আপনি যদি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান আহরণ করতে চান তবে আজকের পোস্টটি স্পেশালি আপনার জন্য।

উত্তরবঙ্গের দর্শনীয় স্থান

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে রয়েছে পাহাড়, নদী, জলাশয়, বনভূমি, এবং ঐতিহাসিক স্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উত্তরবঙ্গকে করেছে অনন্য। আর তাই, বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য উত্তরবঙ্গ একটি আদর্শ গন্তব্য স্থান।

দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির

দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির বাংলাদেশের একটি অন্যতম বিখ্যাত হিন্দু মন্দির। এটি নবরত্ন মন্দির নামেও পরিচিত। মন্দিরটি ১৭শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। কান্তজিউ মন্দির দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কাহারোল উপজেলায় অবস্থিত। মন্দিরটি ঢেপা নদীর তীরে অবস্থিত। কান্তজিউ মন্দির একটি সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন এবং মন্দিরটি বর্গাকার বেদির উপরে নির্মিত। মন্দিরটির প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ১৬ মিটার। মন্দিরটিতে তিনটি তলা রয়েছে এবং এর নয়টি চূড়া রয়েছে।

কান্তজিউ মন্দিরটিতে কান্তজিউর বিশাল মূর্তি রয়েছে। কান্তজিউ হলেন কৃষ্ণের একটি রূপ। মন্দিরটিতে রামায়ণ, মহাভারত, এবং মুঘল আমলের বাংলার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কান্তজিউ মন্দিরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কেন্দ্রও বটে। প্রতি বছর হাজার হাজার হিন্দু ভক্ত এই মন্দিরটিতে পুজো দিতে আসেন এবং মন্দিরটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এটি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

ঠাকুরগাঁওয়ের গজনী অবকাশ

ঠাকুরগাঁওয়ের গজনী অবকাশ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। এটি ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে গজনীপুর উপজেলায় অবস্থিত। গজনী অবকাশ একটি সুন্দর এবং জনপ্রিয় প্রাকৃতিক এলাকা। এখানে রয়েছে পাহাড়, নদী, জলাশয়, বনভূমি, এবং বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী। গজনী অবকাশে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দর্শনীয় স্থান যেমন: গজনী দুর্গ, গজনী মসজিদ, গজনী জলপ্রপাত। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক গজনী অবকাশ পরিদর্শন করেন। পাশাপাশি, গজনী অবকাশ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক এবং প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের অংশও বটে।

রংপুরের তাজহাট জমিদারবাড়ি

রংপুরের তাজহাট জমিদারবাড়ি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। এটি রংপুর শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ৬ কিলোমিটার দূরে তাজহাটে অবস্থিত। তাজহাট জমিদারবাড়িটি ১৯শ শতাব্দীতে মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায় নির্মাণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন রংপুরের একজন ধনী জমিদার। তাজহাট জমিদারবাড়ি একটি সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন। বাড়িটির প্রধান ভবনটি চারতলা বিশিষ্ট এবং এটিতে একটি বিশাল গম্বুজ রয়েছে। বাড়িটির অন্যান্য ভবনগুলিও সুন্দরভাবে নির্মিত।

তাজহাট জমিদারবাড়িতে রয়েছে একটি জাদুঘর। জাদুঘরটিতে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে যেমন: প্রাচীন মুদ্রা, প্রাচীন অস্ত্র-শস্ত্র, প্রাচীন চিত্রকর্ম, প্রাচীন আসবাবপত্র। তাজহাট জমিদারবাড়ি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক তাজহাট জমিদারবাড়ি পরিদর্শন করেন।

নীলফামারীর নীলসাগর

নীলফামারীর নীলসাগর বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নীলফামারী জেলায় অবস্থিত একটি বিখ্যাত দিঘি। এটি নীলফামারী জেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে গোড়গ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত। নীলসাগরের আয়তন ৫৩.৯ একর। দিঘিটির পানি খুবই স্বচ্ছ এবং গভীর। দিঘির পাড়ে রয়েছে নারকেল, বনবাবুল, আকাশমণি, মেহগনি, শিশুসহ অজানা-অচেনা হরেকরকম ফুল ও ফলের সারি সারি বৃক্ষরাজি। নীলসাগরের নামকরণ নিয়ে বেশ কিছু মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, বিরাট রাজা এই দিঘিটি খনন করেছিলেন গবাদি পশুর জন্য। তাই এটি বিরাট দিঘি নামে পরিচিত ছিল। 

কালক্রমে এটি বিরাণী দীঘি এবং বিন্ন দিঘি নামে পরিচিতি পায়। স্বাধীনতার পর নীলফামারী জেলার নামানুসারে নামকরণ করা হয় নীলসাগর। নীলসাগর একটি মনোরম পর্যটন কেন্দ্র। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক নীলসাগর পরিদর্শন করেন। দিঘির পাড়ে রয়েছে একটি সুন্দর পার্ক। এখানে রয়েছে একটি মসজিদ, একটি দরবেশের আস্তানা, এবং একটি রেস্টহাউজ। নীলসাগর বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান।

ষাট গম্বুজ মসজিদ

ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মসজিদ। এটি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ে অবস্থিত। ষাট গম্বুজ মসজিদটি ১৫ শতকে নির্মিত হয়েছিল। এটি খান-ই-জাহান উলুগ মুহাম্মদ শাহ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন সুলতান নসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৪৩৫-৫৯) একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। 

ষাট গম্বুজ মসজিদটি একটি সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন। এটি একটি বর্গাকার ভিত্তি উপরে নির্মিত। মসজিদটির বাইরের দিকে ৬০টি ছোট ছোট গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটির ভিতরে একটি বড় গম্বুজ রয়েছে। ষাট গম্বুজ মসজিদটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মধ্যে একটি। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এই মসজিদটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।

শিলা দেবীর ঘাট

শিলা দেবীর ঘাট বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। এটি মহাস্থানগড়ের পূর্ব দিকের বাহির দুর্গের ভেতরে অবস্থিত। শিলা দেবীর ঘাটটি একটি প্রাচীন স্নানঘাট। এটি ৮ম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। এই স্নানঘাটটি শিলা দেবীর নামে নামকরণ করা হয়েছে। 

শিলা দেবী ছিলেন পাল সম্রাট রামপালের স্ত্রী। শিলা দেবীর ঘাটটি একটি সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন। এটি একটি বর্গাকার ভিত্তি উপরে নির্মিত। ঘাটটির চারপাশে রয়েছে চারটি স্তম্ভ। স্তম্ভগুলির উপরে রয়েছে একটি ছাদ। ঘাটটির মাঝখানে রয়েছে একটি পাথরের স্তম্ভ। এই স্তম্ভটি শিলা দেবীর প্রতিনিধিত্ব করে। 

পঞ্চগড়ের চা বাগান

পঞ্চগড় বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলা। এই জেলাটি চা-চাষের জন্য বিখ্যাত। পঞ্চগড়ে রয়েছে অসংখ্য চা বাগান। এই চা বাগানগুলি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্চগড়ের চা বাগানগুলির মধ্যে রয়েছে  ডুয়ার্স চা বাগান, আলুটিলা চা বাগান, তুরাগ চা বাগান, আলিনগর চা বাগান। 

এই চা বাগানটি অনেক উঁচু অবস্থানে যা সত্যিই দেখতে চমৎকার লাগে! পঞ্চগড়ের চা বাগানগুলিতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। চা বাগানগুলিতে চা উৎপাদনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও, চা বাগানগুলির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে।

মহাস্থানগড় দুর্গ

মহাস্থানগড় দুর্গ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বগুড়া জেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন দুর্গ। এটি করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত। মহাস্থানগড় দুর্গটি খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে মৌর্য সম্রাট অশোক দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। এই দুর্গটি প্রাচীন বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ ছিল। এই দুর্গটি থেকেই বাংলার ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সূচনা হয়েছিল। মহাস্থানগড় দুর্গটি একটি বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। দুর্গটির চারপাশে একটি সুউচ্চ প্রাচীর রয়েছে। প্রাচীরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ কিলোমিটার।  প্রাচীরের মধ্যে রয়েছে অনেকগুলি ঢিবি, ধাপ এবং স্থাপত্য নিদর্শন।

মহাস্থানগড় দুর্গের উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিদর্শনগুলির মধ্যে রয়েছে গোবিন্দ ভিটা, লখিন্দরের মেধ, মানকালীর ধাপ, পরশুরামের বাসগৃহ। মহাস্থানগড় দুর্গটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। এটি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। মহাস্থানগড় দুর্গের পূর্ব নাম ছিল পুণ্ড্রনগর। এটি খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে মৌর্য সম্রাট অশোক দ্বারা পুণ্ড্রনগর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর এটি বিভিন্ন রাজবংশের দ্বারা শাসন করা হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে গুপ্ত, পাল, সেন এবং মুঘল।

স্বপ্নপুরী

দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ নামক অঞ্চলে রয়েছে সৌন্দর্যময় ও ঐতিহ্যবাহী স্থান স্বপ্নপুরী। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শক পাড়ি জমায় এখানে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের রস আস্বাদন করতে স্বপ্নপুরি যেন যোগ করেছে আলাদা এক অনুভূতি। 

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের উত্তরবঙ্গের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নিশ্চয় আপনার মনে ভ্রমণের চিন্তা এসেছে। উত্তরবঙ্গের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে কয়টি জেলা আছে?

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে জেলাগুলো হলো বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, রংপুর।

উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় জেলা কোনটি?

দিনাজপুর জেলা আয়তনের দিক দিয়ে উত্তরবঙ্গের সব জেলার চেয়ে বড় জেলা।  উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার মধ্যে বৃহত্তম জেলায় হলো দিনাজপুর।

উপসংহার

শত শত দর্শনীয় স্থানে ভরা আমাদের এই বাংলাদেশ যেন স্বর্গরাজ্যের একটি অংশ। এখানে থাকা হাজারো দর্শনীয় স্থান দর্শনার্থীদের জন্য যেন প্রশান্তির খোরাক!এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে সুনামগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত সম্পর্কে পড়তে পারেন।

প্রিয় পাঠক, ‘উত্তরবঙ্গের দর্শনীয় স্থান‘ গুলো নিশ্চয় আপনার নজর কেড়েছে? কোন অঞ্চলটি আপনার সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে বলুন তো! সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *