জাফলং এর দর্শনীয় স্থান প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য যেন স্বর্গরাজ্যের মত মনে হয়। প্রতি বছর তাই লক্ষ লক্ষ পর্যটক জনপ্রিয় এই দর্শনীয় স্থান দেখার জন্য পাড়ি জমান। প্রিয় পাঠক, যদি আপনার মনেও এমন ইচ্ছা থাকে যে জাফলং এর জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো কাছ থেকে দেখবেন তবে আপনি উপযুক্ত জায়গায় এসেছেন। বিস্তারিত তথ্যের জন্য এই পোস্টটি অত্যন্ত গুরুত্বসহ পড়ে নিন।
জাফলং এর দর্শনীয় স্থান

জাফলং, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত একটি পর্যটন স্থান। এটি তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। পিয়াইন নদী, ঝুলন্ত ব্রীজ, মেঘের রাজ্য, খাসিয়া পুঞ্জি, চা বাগান, ঝর্ণা, পাহাড় ও জলপ্রপাত ইত্যাদি হচ্ছে জাফলং এর দর্শনীয় স্থান। জাফলং ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে অক্টোবর থেকে মার্চ মাস।
জাফলং জিরো পয়েন্ট

জাফলং জিরো পয়েন্ট বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত একটি পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র। এটি বাংলাদেশ এবং ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তের কাছে অবস্থিত। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে মেঘালয় পাহাড়ের দৃশ্য দেখতে সত্যিই অসাধারণ লাগে। এখানে দাঁড়িয়ে মনে হবে যেন মেঘের উপর হেঁটে বেড়াচ্ছেন। সবচেয়ে মজার বিষয় কি জানেন? জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার দৃশ্যও আপনি এখান থেকে দেখতে পাবেন অনায়াসেই।
আবার, জাফলং জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্যও কিন্তু অসাধারণ বলে মনে হবে। সূর্যের আলো মেঘের সাথে মিশে এক অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি করে যা পর্যটকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। আর তাই, প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক জাফলং জিরো পয়েন্ট পরিদর্শন করেন। সুতরাং এটা বলা যায় যে, এটি সিলেট বিভাগের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান।
মায়াবী ঝর্ণা

মায়াবী ঝর্ণা বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত একটি জনপ্রিয় ঝর্ণা। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে এখানে হেঁটে যেতে মোটেই মাত্র ১৫-২০ মিনিটের প্রয়োজন হতে পারে। তবে এই মায়াবী ঝর্ণা একটি ছোট্ট ঝর্ণা যার সৌন্দর্য পর্যটক মনে আলাদা এক অনুভূতির জন্ম দেয়। মায়াবী এই ঝর্ণার অন্যতম একটি আকর্ষণ হচ্ছে এর পানি দুগ্ধ সাদা। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসে ঝর্ণার পানি একটি পাহাড়ের গভীরে মিলিত হয়। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক মায়াবী ঝর্ণা পরিদর্শন করেন। মায়াবী ঝর্ণা জাফলং জিরো পয়েন্টের পাশাপাশি একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ।
আলী আমজদের ঘড়ি

বাংলাদেশের সিলেট শহরের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা আলী আমজদের ঘড়ি সিলেটের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার আলী আহমদ খান, তার ছেলে আলী আমজদের নামে নির্মাণ করেন। আলী আমজদের ঘড়ি ১৮৭৪ সালে নির্মিত হয়। এটি সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত। ঘড়িটির ডায়ামিটার আড়াই ফুট এবং ঘড়ির কাঁটা দুই ফুট লম্বা। ঘড়িটি লোহার খুঁটির উপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির স্থাপত্যশৈলীর উপর দন্ডায়মান। ঘড়িঘরটি তখন থেকেই আলী আমজদের ঘড়ি নামে পরিচিতি লাভ করে। আলী আমজদের ঘড়ি সিলেটের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
জাফলং চা বাগান

জাফলং চা বাগান বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং-রাধানগরে অবস্থিত একটি চা বাগান। এটি একটি বৃহৎ চা বাগান যেখানে প্রায় ৩০০০ একর জমিতে চা চাষ করা হয়। জাফলং চা বাগানে বিভিন্ন ধরনের চা চাষ করা হয়। এখানে রয়েছে অনেক উচ্চমানের চা যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করা হয়।
জাফলং চা বাগানটি পর্যটকদের জন্য একটি মনোরম দৃশ্যের প্রতিচ্ছবি। এখানে চা গাছগুলো সারি সারি সাজানো রয়েছে। চা গাছের মাঝে মাঝে ছোট ছোট ঝর্ণা রয়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন জাফলং চা বাগানটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র। কেননা, প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক জাফলং চা বাগান পরিদর্শন করেন। আর তাই, জাফলং চা বাগানটি বাংলাদেশের চা শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং একইসাথে, এটি সিলেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানও বটে।
রাতারগুল জলাবন

জলাবনের নাম শুনেছেন কখনো? রাতারগুল জলাবন বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত একটি জলাবন। এটি বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। রাতারগুল জলাবনটি ৩,৩২৫.৬১ একর আয়তনের একটি বড় জলাবন। এটি গোয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত। জলাবনটিতে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা, ফুল, ফল, এবং প্রাণী রয়েছে।
রাতারগুল জলাবনটিতে সবচেয়ে বেশি জন্মায় করচ গাছ (বৈজ্ঞানিক নাম: Millettia pinnata)। এছাড়াও এখানে রয়েছে হিজল, বরুণ, পিঠালি, অর্জুন, ছাতিম, গুটি জাম, এবং বট গাছ। রাতারগুল জলাবনে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী রয়েছে। এখানে রয়েছে সাপ, বানর, গুঁইসাপ, সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল এবং বাজপাখি। জনপ্রিয় এই পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্রটিতে তাই প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখতে আসেন। এই জলাবনটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা যা সিলেট বিভাগের জাফলং এর অন্যান্য জনপ্রিয় স্থানের মতই গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান।
নোয়াগাও জলপ্রপাত

জাফলং এর নিকটে অবস্থিত নোয়াগাও জলপ্রপাত বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি জনপ্রিয় জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাতটি একটি ছোট্ট জলপ্রপাত। তবে এর সৌন্দর্য অসাধারণ। তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত এই জলপ্রপাতটি ২৫ ফুট উঁচু। জলপ্রপাতের পানি ঝর্ণা বেয়ে নিচে নেমে এসে তিস্তা নদীতে মিলিত হয়। জনপ্রিয় এই স্থানটি হাজার হাজার পর্যটকদের দ্বারা প্রতি বছর নতুন রূপে যেন বিকাশ লাভ করে।
আখ্তা ঝর্ণা জাফলং

অপ্রচলিত পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আখ্তা ঝর্ণা অন্যতম। এটি জাফলং থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আখ্তা ঝর্ণাটি অনেক ছোট্ট ঝর্ণা হলেও এর সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারণ। এই ঝর্ণাটি তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত। এই ঝর্ণার পানিও ঝর্ণা বেয়ে নিচে নেমে এসে তিস্তা নদীতে মিলিত হয়। এখানে সবুজ পাহাড়ের কোলে ঝর্ণার পানি ঝরে পড়া দেখতে অসাধারণ লাগে। আবার, এর সৌন্দর্য দেখে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হন
পিয়াইন নদী

পিয়াইন নদী বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি সিলেট বিভাগের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। পিয়াইন নদীটি ভারতের হিমালয় পর্বতমালার গহীন থেকে উৎপন্ন হয়ে সিলেট বিভাগের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদীটি ব্রহ্মপুত্র নদের একটি প্রধান উপনদীও বটে।
এখানে সবুজ পাহাড়, ঘন জঙ্গল, এবং সুন্দর ঝর্ণা রয়েছে। পিয়াইন নদীর তীরে রয়েছে রাতারগুল জলাবন, সাদা পাথরের চূড়া, এবং নোয়াগাও জলপ্রপাতের মতো জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ স্থান। সুতরাং পিয়াইন নদী বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই নদীর পানি দিয়ে সেচ, পানি সরবরাহ, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
জাফলং ডাউকি নদী

ডাউকি নদী জাফলং এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়া জনপ্রিয় নদী যার প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। ডাউকি নদী কিন্তু তিস্তা নদীর একটি উপনদী। তাহলে বুঝতেই পারছেন, জাফলং এবং ডাউকি নদীর মধ্যে সম্পর্ক হল জাফলংয়ের মধ্য দিয়ে ডাউকি নদী প্রবাহিত হয়েছে। আমরা জানি জাফলং একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র এবং ডাউকি নদীটি এই পর্যটন আকর্ষণেরই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সুতরাং বলায় যা, ডাউকি নদীর মনোরম দৃশ্য জাফলংয়ের সৌন্দর্যকে আরও অনেকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম জাফলং এবং জাফলং এর দর্শনীয় স্থান নিশ্চয় আপনার মনে নাড়া দিয়েছে? জাফলং এর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
জাফলং কিসের জন্য বিখ্যাত?
জাফলং তার মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। কেননা এখানে রয়েছে পাহাড়, নদী, ঝর্ণা, চা বাগান, সবুজ বনভূমি ইত্যাদি।
জাফলং কোথায় অবস্থিত?
জাফলং বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। এটি সিলেট শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। জাফলং ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত।
উপসংহার
অপরূপ আর নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট এর জনপ্রিয় স্থান জাফলং যার দর্শনীয় স্থান হাজারো মনে প্রশান্তির বার্তা বয়ে আনে। প্রিয় পাঠক, পুরো পোস্টটি পড়ার পর নিশ্চয় আপনার ভালো লেগেছে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে উত্তরবঙ্গের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে পড়তে পারেন।
‘জাফলং এর দর্শনীয় স্থান‘ গুলোর মধ্যে কোনটি আপনার সবথেকে ভালো লেগেছে দয়া করে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনার মূল্যবান মতামত। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন আল্লাহ্ হাফেজ।