Skip to content
Home » সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান

সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান

Sights Of Saint Martin Island

সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান যে স্থানগুলো হাজারো পর্যটকের টনক নাড়িয়ে দিতে পারে সেগুলোর বিস্তারিত তথ্য পাবেন আজকের পোস্টে। সুতরাং পোস্টটি আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপটি বাংলাদেশের দক্ষিণ বঙ্গপোসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এটি কক্সবাজার জেলা টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে ও মায়ানমার এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। এই দ্বীপে প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানিয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সর্বোবৃহৎ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান সেন্টমার্টিন দ্বীপ। তাহলে চলুন এর সর্ম্পকে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিই।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান

সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এই দ্বীপে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী আসেন সৌন্দর্য অবলোকন করতে। প্রিয় বন্ধুরা সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থানগুলো ভালোভাবে দেখার পর আমাদেরকে জানিয়ে দিবেন কোন দর্শনীয় স্থানটি আপনার নজর কেড়েছে! মনে রাখবেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপটি তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। আপনি যদি কখনো সেন্টমার্টিন দ্বীপে যান তবে সেখানকার সৌন্দর্য আপনাকে অনেকটায় আনন্দ দিবে নিশ্চিত করে বলা যায়।

ছেঁড়াদ্বীপ

Cheradawip

ছেঁড়াদ্বীপ হলো সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ যা সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। ছেঁড়াদ্বীপটি তার সাদা বালুচর, নীল জলরাশি এবং প্রবাল প্রাচীরের জন্য বিখ্যাত। সেন্টমার্টিন এর জনপ্রিয় দর্শনীয় এই দ্বীপটি প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১ কিলোমিটার প্রশস্ত। মজার বিষয় কি জানেন? ছেঁড়াদ্বীপটি জোয়ারের সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। তবে, ছেঁড়াদ্বীপের প্রধান আকর্ষণ হলো এর সাদা বালুচর, নীল জলরাশি এবং প্রবাল প্রাচীর। কেননা, এই দ্বীপের বালুচর খুবই নরম এবং সাদা। সেই সাথে, ছেঁড়াদ্বীপের জলরাশি খুবই নীল এবং স্বচ্ছ। 

সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকত

Saint Martin Beach

সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতটি বাংলাদেশের অন্যতম সমুদ্র সৈকত। এই সমুদ্র সৈকতটি বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত। এটি তার দীর্ঘ ও প্রশস্ত বালুচর, নীল জলরাশি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতটি দৈর্ঘের দিক থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ্যের দিক থেকে ১ কিলোমিটার। 

প্রিয় পাঠক, একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিন, সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতটি সূর্যাস্ত দেখার জন্য একটি আদর্শ স্থান। সূর্যাস্তের সময়, সূর্যের আলো সমুদ্রের জলে প্রতিফলিত হয়ে একটি অপরূপ দৃশ্য তৈরি করে। সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতটিতে বিভিন্ন ধরনের জলক্রীড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে পর্যটকরা সাঁতার, ডাইভিং, ওয়াটার স্কিইং, ওয়াটার বায়াকিং ইত্যাদি উপভোগ করতে পারেন।

হিরোশিমা শহীদ মিনার

Hiroshima Martyr's Tower

হিরোশিমা শহীদ মিনারটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। এটি বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা শহরে বোমা বর্ষণে নিহত বাংলাদেশি নাগরিকদের স্মরণে এই মিনারটি নির্মিত হয়। হিরোশিমা শহীদ মিনার একটি বর্গাকার ভিত্তি এবং একটি সোজা, উঁচু স্তম্ভ নিয়ে গঠিত। স্তম্ভের উপরে একটি সূর্যমুখীর ভাস্কর্য রয়েছে। এই সূর্যমুখীটি শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক। 

সেন্টমার্টিন বন

Saint Martin's Forest

সেন্টমার্টিন বনটি একটি প্রাকৃতিক বন। এটি তার বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য বিখ্যাত। সেন্টমার্টিন বন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক বন। এটি একটি বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল। সেন্টমার্টিন বনটি প্রায় ১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই বনটিতে নারিকেল, কেওড়া, ঝাউ, গরান, লতা, বাঁশ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে। এছাড়াও, এই বনে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীও রয়েছে, যেমন- হরিণ, বানর, সাপ, ব্যাঙ, মাছ, পাখি ইত্যাদি। 

সেন্টমার্টিন বনটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি দ্বীপের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেন্টমার্টিন বনটি সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণকারীদের কাছে একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। কেননা, এই বনটিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

সেন্টমার্টিন বাজার

Saint Martin's Market

সেন্টমার্টিন বাজারটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রধান বাজার। এখানে বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় পণ্য ও খাবার পাওয়া যায়। সেন্টমার্টিন বাজার বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবস্থিত। এই বাজারটি দ্বীপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও খাবার পাওয়া যায়। 

এখানে স্থানীয়দের তৈরি হস্তশিল্প, শুটকি, মাছ, ফলমূল, সবজি, পোশাক, জুতা ইত্যাদি পাওয়া যায়। এছাড়াও, এখানে বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান রয়েছে, যেখানে স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাবার পাবেন। 

মিউজিক ইকো রিসোর্ট

মিউজিক ইকো রিসোর্ট বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত একটি ৫ তারকা রিসোর্ট। এই রিসোর্টটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধার জন্য বিখ্যাত। মিউজিক ইকো রিসোর্টটি টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি অবস্থিত এবং রিসোর্টটি প্রায় ১০০ একর জমির উপর অবস্থিত। 

এই রিসোর্টটিতে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যেমন- কটেজ, রেস্তোরাঁ, বার, সুইমিং পুল, স্পা, ফিটনেস সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র ইত্যাদি। মিউজিক ইকো রিসোর্টটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও বিখ্যাত। উল্লেখ্য যে, এই রিসোর্টটি কেওড়া বন, সমুদ্র সৈকত এবং পাহাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। এই রিসোর্টটি থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

লালদিয়া দ্বীপ

Laldia Island

লালদিয়া দ্বীপ বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার অন্তর্গত একটি ছোট দ্বীপ। এই দ্বীপটি তার লাল মাটির জন্য বিখ্যাত। লালদিয়া দ্বীপ সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছে অবস্থিত এবং এই দ্বীপের আয়তন প্রায় ৫ বর্গকিলোমিটার। এই দ্বীপটি সমুদ্রের নীচে থেকে উঠে এসেছে। তাই এই দ্বীপের মাটিতে লোহার অক্সাইড রয়েছে, যা মাটির লাল রং এর জন্য দ্বায়ী।

লালদিয়া দ্বীপ একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র যেখানে রয়েছে অনেকগুলি হোটেল এবং রিসোর্ট। এই দ্বীপের মূল আকর্ষণ হচ্ছে এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখা যায়। এছাড়াও প্রবাল প্রাচীর লালদিয়া দ্বীপের কাছে প্রবাল প্রাচীর রয়েছে। এখানে আপনি ডুব দিয়ে সাঁতার কাটতে পারবেন। লালদিয়া দ্বীপে ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হল শীতকাল। 

নারিকেল জিঞ্জিরা

Coconut Ginger

নারিকেল জিঞ্জিরা হল বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার অন্তর্গত বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এই দ্বীপটি তার প্রচুর নারিকেল গাছের জন্য বিখ্যাত। তাই স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরা বলা হয়। এটি বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত। এই দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার। দ্বীপটিতে প্রায় ৭০০০ জন লোক বাস করে। তার সাথে দ্বীপটিকে সমুদ্র চতুরদিকে ঘিরে রেখেছে। 

নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকানও রয়েছে। নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হলো শীতকাল। এই সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে এবং প্রবাল প্রাচীরগুলি সবচেয়ে সুন্দর দেখায়। সারি সারি নারিকেল গাছ দেখলে নিমিষেই আপনার মনটা ভাল হয়ে যাবে। সবুজ শ্যামলে ঘেরা নারিকেল জিঞ্জিরা সত্যিই দর্শক মনে অনাবিল আনন্দ দেয়।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থানগুলো আপনার কাছে নিশ্চয় ভাল লেগেছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-

সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন কত?

বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন ৮ বর্গকিলোমিটার। তবে জোয়ার-ভাটার এর হিসেব করলে  এর আয়তন ১০-১৫ কিলোমিটারের মত হয়।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ কেন বিখ্যাত?

আমরা জানি সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের মধ্যে অনেক সুন্দর দ্বীপ। আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল মিতালী ও সারি সারি নারিকেল গাছের জন্য সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিখ্যাত।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ এর অপর নাম কি?

সেন্টমার্টিন দ্বীপে অংসখ্য নারিকেল গাছ আছে। আর এই নারিকেল গাছ থাকার কারনে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অপর নাম হচ্ছে নারিকেল জিঞ্জিরা।

উপসংহার

অপরূপ সৌন্দর্যঘেরা এই বাংলাদেশের অনন্য স্থান সেন্টমার্টিন দ্বীপ হাজার হাজার মানুষের হৃদয়ে স্পন্দন তৈরী করে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে জাফলং এর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে পড়তে পারেন।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান‘ সম্পর্কে আমাদের আলোচনা প্রিয় পাঠক আপনার কেমন লাগলো বলুন তো। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না কেমন! যদি কখনো সেন্টমার্টিন যান তবে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান গুলো ভালোভাবে পরিদর্শণ করবেন। আশা করছি, আপনি মনে অনেক প্রশান্তি পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *