আগরতলা দর্শনীয় স্থান ভারতের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অনন্য। এখানের দর্শনীয় স্থানগুলোর সৌন্দর্য আপনাকে সত্যিই অবাক করবে। সুতরাং, আপনি যদি আগরতলায় ভ্রমণ করার চিন্তা করে থাকেন তবে এই পোস্টটি আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে বরং মূল কথায় ফিরে আসি।
আগরতলা দর্শনীয় স্থান
আগরতলা, ত্রিপুরার রাজধানী যা সুন্দর আর একইসাথে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আগরতলা দর্শনীয় স্থান যা আমাদের বিনোদনের অন্যতম একটি উৎস। এখানকার জনপ্রিয় স্থানগুলো পর্যটক মনে অত্যন্ত খুঁশির বার্তা দিয়ে থাকে।
উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ

উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় অবস্থিত একটি প্রাসাদ। এটি ত্রিপুরার পূর্ববর্তী রাজবংশ, মাণিক্য রাজবংশের প্রাক্তন প্রাসাদ। প্রাসাদটি ১৮৯৯ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে মহারাজা রাধা কিশোর মাণিক্য দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি ত্রিপুরার ইতিহাস এবং সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা। উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ একটি বিশাল দ্বিতল ভবন যা ইউরোপীয় এবং মুঘল স্থাপত্যের মিশ্রণ। এটি তিনটি উচ্চ গম্বুজ দ্বারা সজ্জিত।
ভিতরে, প্রাসাদটি বিভিন্ন কক্ষ এবং হল দ্বারা গঠিত। প্রধান হলটিতে একটি সুন্দর ঝুলন্ত ঝাড়বাতি রয়েছে যা ৮০০০ কেজি ওজনের। প্রাসাদের অন্যান্য কক্ষগুলিতে রাজকীয় আসবাবপত্র, শিল্পকর্ম এবং প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে। উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ বর্তমানে একটি জাদুঘর। এখানে ত্রিপুরার ইতিহাস এবং সংস্কৃতির উপর একটি বিস্তৃত প্রদর্শনী রয়েছে। প্রাসাদটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। সুতরাং, উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ ত্রিপুরার একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র।
নীরমহল

নীরমহল, যার অর্থ “জলের উপরের প্রাসাদ”, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে ৫৩ কিলোমিটার দূরে মেলাঘরে অবস্থিত একটি প্রাসাদ। এটি ত্রিপুরার রাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর দ্বারা ১৯৩০ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি ভারতের বৃহত্তম এবং একমাত্র জল প্রাসাদ। নীরমহল হ্রদের মাঝখানে অবস্থিত যার নাম রুদ্রসাগর। এটি একটি দ্বিতল ভবন যা হিন্দু এবং মুসলিম স্থাপত্যের মিশ্রণ। প্রাসাদটিতে মোট ২৪ টি কক্ষ রয়েছে। আগরতলা দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে এটি অন্যতম।
অন্দর মহল রাজকীয় পরিবারের জন্য ব্যবহৃত হত, যখন বাইরের কক্ষগুলি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হত। প্রাসাদের কেন্দ্রে একটি সুন্দর ঝুলন্ত ঝাড়বাতি রয়েছে। নীরমহল ত্রিপুরার সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য। এটি একটি সুন্দর এবং অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন যা প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে।
গড়িয়া মন্দির

গড়িয়া মন্দির ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে গড়িয়া গ্রামে অবস্থিত একটি হিন্দু মন্দির। এটি ত্রিপুরার একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। গড়িয়া মন্দির সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। এটি হিন্দু দেবী গড়িয়ার প্রতি উৎসর্গীকৃত মন্দির। আপনি কি জানেন দেবী গড়িয়া কে? দেবী গড়িয়া হলেন ত্রিপুরার ঐতিহ্যবাহী দেবী।
তিনি ত্রিপুরা রাজ্যের সমৃদ্ধি এবং মঙ্গল কামনা করেন। গড়িয়া মন্দির একটি সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন যা দ্বিতল ভবন যা বাঁশ এবং মাটির তৈরি। মন্দিরের দেয়ালে বিভিন্ন হিন্দু দেবতা এবং দেবীর চিত্র রয়েছে। গড়িয়া মন্দির প্রতি বছর হাজার হাজার হিন্দু ভক্ত দ্বারা পরিদর্শন করা হয়। বিশেষ করে বৈশাখ মাসে, গড়িয়া পূজা উপলক্ষে এখানে একটি বিশাল মেলা বসে।
খারচি মন্দির

খারচি মন্দির আগরতলা থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে চৌদো দেবতা বাড়িতে অবস্থিত একটি হিন্দু মন্দির। এটি ত্রিপুরার গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। খারচি মন্দির ৮ম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। এটি হিন্দু দেবতা শিবের প্রতি উৎসর্গীকৃত। দেবতা শিব হলেন ত্রিপুরার ঐতিহ্যবাহী দেবতা। তিনি ত্রিপুরা রাজ্যের সমৃদ্ধি এবং মঙ্গল কামনা করেন। খারচি মন্দির একটি সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন। মন্দিরের দেয়ালে বিভিন্ন হিন্দু দেবতা এবং দেবীর চিত্র রয়েছে।
খারচি মন্দির প্রতি বছর হাজার হাজার হিন্দু ভক্ত দ্বারা পরিদর্শন করা হয়। বিশেষ করে আষাঢ় মাসে, খারচি পূজা উপলক্ষে এখানে একটি বিশাল মেলা বসে। খারচি পূজা হল ত্রিপুরার একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় উৎসব। এটি প্রতি বছর আষাঢ় মাসে (জুন-জুলাই) পালিত হয়। এই উৎসবে, ত্রিপুরার রাজ পরিবার এবং হাজার হাজার হিন্দু ভক্ত খারচি মন্দির পরিদর্শন করে থাকেন।
ত্রিপুরা কালচারাল সেন্টার

ত্রিপুরা কালচারাল সেন্টার আগরতলায় অবস্থিত একটি জনপ্রিয় সংস্কৃতি কেন্দ্র। এটি ত্রিপুরার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটায়। এখানে একটি জাদুঘর, একটি চিত্রশালা এবং একটি মঞ্চ রয়েছে। ত্রিপুরা কালচারাল সেন্টারটি ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ত্রিপুরার সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। ত্রিপুরা কালচারাল সেন্টারের জাদুঘরে ত্রিপুরার ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং শিল্পকলার একটি বিস্তৃত সংগ্রহ প্রদর্শন করা হয়। এখানে গেলে আপনি ত্রিপুরার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পোশাক, অলঙ্কার, আসবাবপত্র, এবং শিল্পকর্ম দেখতে পাবেন যা আপনার মনকে প্রশান্ত করতে পারে।
ত্রিপুরা কালচারাল সেন্টারের চিত্রশালায় ত্রিপুরার শিল্পীদের দ্বারা আঁকা বিভিন্ন চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এখানে ত্রিপুরার প্রাকৃতিক দৃশ্য, ঐতিহ্যবাহী জীবনযাত্রা, এবং আধুনিক জীবনের চিত্র রয়েছে। ত্রিপুরা কালচারাল সেন্টারের মঞ্চে নাটক, নৃত্য, এবং সঙ্গীতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আর সেই সাথে, ত্রিপুরার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকশিল্পীরা তাদের পারফরম্যান্স পরিবেশন করেন।
ত্রিপুরা মিউজিয়াম

ত্রিপুরা মিউজিয়াম একটি জাদুঘর যা ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি ত্রিপুরার ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং শিল্পকলার একটি বিস্তৃত সংগ্রহ প্রদর্শন করে। ত্রিপুরা মিউজিয়াম ত্রিপুরার প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম জাদুঘর। এটি ত্রিপুরার রাজপরিবারের প্রাক্তন বাসভবন, উজ্জয়ন্ত প্রাসাদে অবস্থিত। প্রাসাদটি ১৮৯৯ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি একটি সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন। ত্রিপুরা মিউজিয়ামের সংগ্রহে ত্রিপুরার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পোশাক, অলঙ্কার, আসবাবপত্র, এবং শিল্পকর্ম আপনাকে পুলকিত করবে নিশ্চিত। এছাড়াও, এখানে ত্রিপুরার ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে তথ্য প্রদানকারী বিভিন্ন প্রদর্শনী রয়েছে।
ত্রিপুরা মিউজিয়ামের বিভিন্ন গ্যালারির মধ্যে রয়েছে প্রবেশ গ্যালারি, প্রাক-ঐতিহাসিক গ্যালারি, ঐতিহাসিক গ্যালারি, শিল্প ও সংস্কৃতি গ্যালারি, প্রকৃতি ও পরিবেশ গ্যালারি। প্রবেশ গ্যালারিতে ত্রিপুরার ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া হয়। প্রাক-ঐতিহাসিক গ্যালারিতে ত্রিপুরার প্রাচীনতম নিদর্শনগুলি প্রদর্শন করা হয়। ঐতিহাসিক গ্যালারিতে ত্রিপুরার মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগের ইতিহাস সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা হয়। শিল্প ও সংস্কৃতি গ্যালারিতে ত্রিপুরার ঐতিহ্যবাহী পোশাক, অলঙ্কার, আসবাবপত্র, এবং শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়। প্রকৃতি ও পরিবেশ গ্যালারিতে ত্রিপুরার প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা হয়।
ত্রিপুরা ন্যাশনাল পার্ক

ত্রিপুরা ন্যাশনাল পার্ক ১৯৮৬ সালে স্থাপিত হয় এবং এটি ত্রিপুরার বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান। এই পার্কটি ত্রিপুরা রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। পার্কটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে অবস্থিত। পার্কটি মূলত পাহাড়ী অঞ্চল, তবে এখানে সমতল অঞ্চলও রয়েছে। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ এবং প্রাণী দেখতে পাবেন।
ত্রিপুরা ন্যাশনাল পার্কের উদ্ভিদবৈচিত্র্য খুবই সমৃদ্ধ। পার্কে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ওক, মহুয়া, বাবলা, এবং বট। সেই সাথে, পার্কে বিভিন্ন ধরনের ফুলও ফোটে, যার মধ্যে রয়েছে অরকিড, গোলাপ, এবং লিলি। ত্রিপুরা ন্যাশনাল পার্কের প্রাণীবৈচিত্র্যও খুবই সমৃদ্ধ। পার্কে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হাতি, বাঘ, গণ্ডার, কুমির, এবং অজগর। পার্কে বিভিন্ন ধরনের পাখিও রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ময়ূর, রাজহাঁস, এবং টুপিধারী ঈগল।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
পৃথিবীর মাঝে হাজার নয়, লক্ষ লক্ষ দর্শনীয় স্থান রয়েছে যেগুলো মনের কোণে প্রশান্তির এক কল্লোল তৈরী করে। আগরতলা দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
আগরতলা কোথায় অবস্থিত?
ভারতের ছোট্ট শহর আগরতলা ত্রিপুরা রাজ্যের একটি জনপ্রিয় রাজধানী। এখানে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান।
আগরতলা কিসের জন্য বিখ্যাত?
আগরতলা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী। এটি একটি ছোট শহর, তবে এর রয়েছে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থাপনা। আগরতলাকে তার মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত বলা হয়।
উপসংহার
যে স্থানগুলো আমাদের মনে প্রশান্তি বয়ে আনে সাধারণত সেগুলো দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। সুন্দর আর মনোরম দৃশ্য কে না ভালোবাসে বলুন। এমন অনেক দর্শনীয় স্থান দেখতে পাবেন ভারতের জনপ্রিয় রাজ্য ত্রিপুরার আগরতলায়। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে মিরসরাই দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে পড়তে পারেন।
‘আগরতলা দর্শনীয় স্থান‘ সম্পর্কে এখানে বর্ণিত তথ্যগুলো আপনার কেমন লেগেছে তার একটি জরিপ হয়ে যাক। একটু কমেন্ট করে জানিয়ে দিন তো! ভালো থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।