নারায়ণগঞ্জের দর্শনীয় স্থান আপনার মনে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে তা বোঝার জন্য আমাদের এই পোস্টটি আপনার অত্যন্ত উপকারে আসতে পারে। সুতরাং নারায়ণগঞ্জের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অন্বেষণ এর জন্য পোস্টটি অত্যন্ত মনোযোগসহ পড়ে নিন। মনে রাখবেন, নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক জেলা। এখানে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান যেখানে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায় প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য।
নারায়ণগঞ্জের দর্শনীয় স্থান

ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তো? চলুন এবার নারায়ণগঞ্জের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। মনে রাখবেন প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্যে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে। আর তার অপরূপ সাজ যেন আমাদের মত ভ্রমণ প্রিয়দের জন্যই।
সোনারগাঁও

প্রথমেই আসি ঐতিহাসিক সোনারগাঁও এর কথায়। এটি বাংলাদেশের একটি প্রাচীন রাজধানী। সোনারগাঁওয়ে অসংখ্য প্রাচীন স্থাপত্য রয়েছে, যেমন- ষাট গম্বুজ মসজিদ, ইমামবাড়া, খান জাহান আলী মসজিদ, সীতাকোট রাজবাড়ী, পানাম নগর ইত্যাদি। সোনারগাঁও এর নামকরণের ইতিহাস জানতে চান তো? সোনারগাঁওয়ের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। কারো কারো মতে, এটি সুবর্ণগ্রাম থেকে সোনারগাঁও নামকরণ করা হয়েছে। আবার কারো কারো মতে, বারো ভূঁইয়া প্রধান ঈশা খাঁর স্ত্রী সোনাবিবির নামে সোনারগাঁও নামকরণ করা হয়েছে। এটা সন্দেহজনক অবস্থায় এখনো রয়েছে।
তবে একসময় সোনারগাঁও বাংলার মুসলিম শাসকদের অধীনে পূর্ববঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল। এ সময় সোনারগাঁওতে অনেক মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, রাজবাড়ী, দুর্গ ইত্যাদি নির্মিত হয়। প্রিয় পাঠক,আপনি জেনে হয়তো খুশি হবেন যে, ষাট গম্বুজ মসজিদ সোনারগাঁওয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপত্য। এটি ১৪৯৩ সালে মতান্তরে ১৫০০ শতাব্দিতে খান-ই-জাহান আলী নির্মাণ করেন। ষাট গম্বুজ মসজিদটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ও সুন্দর মসজিদ।
পানাম নগর

পানাম নগর বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক শহর। এটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় অবস্থিত। যতদূর জানা গেছে, পানাম নগরটি ১৫ শতকে ব্রিটিশদের দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে অনেকের মতে ঈঁশা খাঁ এর গোড়াপত্তন করেন। পানাম নগর বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক শহর। এটি ১৫ শতকে ব্রিটিশদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। পানাম নগরের অনেক স্থাপত্য এখনও টিকে আছে, যেমন- ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য কেন্দ্র, ব্রিটিশদের নির্মিত বাড়িঘর, মসজিদ, মন্দির ইত্যাদি।
পানাম নগরের ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। বাংলায় ব্রিটিশদের আগমনের পর এখানে একটি ছোট্ট বাজার গড়ে ওঠে। এরপর তারা এখানে একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র স্থাপন করে। এই বাণিজ্য কেন্দ্রের চারপাশে ধীরে ধীরে একটি শহর গড়ে ওঠে, যা পানাম নগর নামে পরিচিতি লাভ করে। পানাম নগরের স্থাপত্যশৈলী খুবই সুন্দর। এখানে ব্রিটিশদের নির্মিত অনেক বাড়িঘর রয়েছে, যা ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে নির্মিত। এছাড়াও এখানে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য কেন্দ্র, একটি মসজিদ ও একটি মন্দির রয়েছে। আপনি যদি কখনো ঐতিহ্যবাহী পানাম নগরে যান তবে সুন্দর সুন্দর দৃশ্য সহজেই উপভোগ করতে পারেন।
লোক ও কারু শিল্প জাদুঘর

লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর বাংলাদেশের একটি জাতীয় জাদুঘর যা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য প্রতিষ্ঠিত। এই জাদুঘরটি ঢাকা থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে অবস্থিত। জাদুঘরটি ১৯৭৫ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়িতে অবস্থিত, যার নাম “সর্দারবাড়ি”। জাদুঘরের প্রধান ভবনের পাশাপাশি এখানে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, কারুপল্লী ও একটি বিশাল লেক রয়েছে।
জাদুঘরের প্রদর্শনীগুলিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকশিল্পের নিদর্শন রয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে কাঠের শিল্প, ধাতুশিল্প, মৃৎশিল্প, কাপড়ের শিল্প, নকশিকাঁথা, বাদ্যযন্ত্র, লোকজ অলংকার ইত্যাদি। জাদুঘরের গ্রন্থাগারে বাংলাদেশের লোকশিল্প ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত বই ও সামগ্রী রয়েছে। লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের গৌরবময় দিক তুলে ধরে। সুতরাং বুঝতে পারছেন নিশ্চয় এটি দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান।
নান্দাইল জমিদার বাড়ি

নান্দাইল জমিদার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় অবস্থিত যা ১৯ শতকে নির্মাণ করা হয়েছিল। এই বাড়িটির স্থাপত্যশৈলী খুবই চমৎকার। নান্দাইল জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। এটি নান্দাইল উপজেলার মাইজবাড়ী ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামে অবস্থিত। এটি নান্দাইল উপজেলার অন্যতম প্রাচীন ও সুন্দর জমিদার বাড়ি। এই জমিদার বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন রামচন্দ্র সাহা। তিনি ছিলেন একজন ধনী ও প্রভাবশালী জমিদার। নান্দাইল জমিদার বাড়িটি একটি বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এই জমিদার বাড়িতে একটি দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ, একটি সুন্দর বাগান, একটি মন্দির, একটি পুকুর এবং একটি দীঘি রয়েছে। নান্দাইল জমিদার বাড়ির প্রাসাদটি একটি দ্বিতল ভবন।
এই প্রাসাদের সামনে একটি বিশাল দরজা রয়েছে। দরজার দুই পাশে দুটি বড় বড় সুন্দর স্তম্ভ রয়েছে। প্রাসাদের অভ্যন্তরে রয়েছে একটি সুন্দর হলঘর, একটি অন্দরমহল, একটি দরবার হল এবং একটি গোসলখানা। নান্দাইল জমিদার বাড়ির বাগানটি অত্যন্ত সুন্দর। এই বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফুল, ফল এবং গাছপালা রয়েছে। বাগানের মাঝখানে একটি সুন্দর পুকুর রয়েছে। পুকুরের মাঝখানে একটি ছোট্ট দ্বীপ রয়েছে। দ্বীপে একটি সুন্দর মন্দির রয়েছে। নান্দাইল জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অমূল্য সম্পদ।নান্দাইল জমিদার বাড়িটি প্রতিদিন সকাল ৮:০০ থেকে সন্ধ্যা ৬:০০ পর্যন্ত খোলা থাকে।
আড়াইহাজার জমিদার বাড়ি

আড়াইহাজার জমিদার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় অবস্থিত। এই বাড়িটি ১৯ শতকে নির্মিত হয়েছিল। এই বাড়িটির স্থাপত্যশৈলী খুবই সুন্দর। আড়াইহাজার জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। এটি আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী ইউনিয়নের সদাসদী গ্রামে অবস্থিত। আড়াইহাজার জমিদার বাড়িটি ১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে নির্মিত হয়েছিল। এটি আড়াইহাজার উপজেলার অন্যতম প্রাচীন ও সুন্দর জমিদার বাড়ি। এই জমিদার বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন শ্রী প্রসন্ন কুমার সর্দার। তিনি ছিলেন একজন ধনী ও প্রভাবশালী জমিদার। আড়াইহাজার জমিদার বাড়িটি একটি বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থিত।
এই জমিদার বাড়িতে একটি দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ, একটি সুন্দর বাগান, একটি মন্দির, একটি পুকুর এবং একটি দীঘি রয়েছে। আড়াইহাজার জমিদার বাড়ির প্রাসাদটি একটি দ্বিতল ভবন। এই প্রাসাদের সামনে একটি বিশাল দরজা রয়েছে। দরজার দুই পাশে দুটি বড় বড় সুন্দর স্তম্ভ রয়েছে। প্রাসাদের অভ্যন্তরে রয়েছে একটি সুন্দর হলঘর, একটি অন্দরমহল, একটি দরবার হল এবং একটি গোসলখানা। আড়াইহাজার জমিদার বাড়ির বাগানটি অত্যন্ত সুন্দর। এই বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফুল, ফল এবং গাছপালা রয়েছে। বাগানের মাঝখানে একটি সুন্দর পুকুর রয়েছে। পুকুরের মাঝখানে একটি ছোট্ট দ্বীপ রয়েছে। দ্বীপে একটি সুন্দর মন্দির রয়েছে। আড়াইহাজার জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অমূল্য সম্পদ। আড়াইহাজার জমিদার বাড়িটি প্রতিদিন সকাল ৮:০০ থেকে সন্ধ্যা ৬:০০ পর্যন্ত খোলা থাকে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
নারায়ণগঞ্জের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান তথা নারায়ণগঞ্জের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে সোনারগাঁও তাজমহল, বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ী, মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ী, বাঘেরবাজার মসজিদ, সৈয়দপুর মসজিদ, আড়াইহাজার মসজিদ, ফতুল্লা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ইনার সার্কুলার রোড ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর বিশেষভাবে স্বরণীয়।
নারায়ণগঞ্জের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
নারায়ণগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত?
পাট শিল্পের জন্য নারায়ণগঞ্জ বিখ্যাত। এখানের প্রখ্যাত পাটকল আদমজী পাটকল অনন্য একটি যার বর্তমান নাম আদমজী ইপিজেড।
নারায়ণগঞ্জ এর পূর্ব নাম কি?
নারায়ণগঞ্জ জেলার পূর্বনাম ছিল সোনারগাঁ। আপনি কি কখনো এই জেলায় গিয়েছেন? বহু দর্শনীয় স্থানে ভরপুর এই জেলা।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে নিশ্চয় নারায়ণগঞ্জের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে অনেক কিছু বুঝতে পারছেন। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি সেতু সম্পর্কে পড়তে পারেন।
‘নারায়ণগঞ্জের দর্শনীয় স্থান‘ সম্পর্কে আপনার কি কোন মতামত আছে? দয়া করে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনার মূল্যবান মতামত। পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না কেমন! চলুন আজ তবে বিদায় নেওয়া যাক।