সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহ দেখতে কেমন এবং কতটা ঐতিহ্য-সম্পন্ন তার সম্পর্কে আজকের পোস্টে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ্। সুতরাং আপনি যদি ভ্রমণ প্রিয় হয়ে থাকেন এবং সিলেটের ঐতিহ্যবাহী স্থান তথা দর্শনীয় স্থান দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তবে এই পোস্টটি আপনার জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে বলে আশা করছি। তাহলে সাথেই থাকুন…
সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহ
সিলেট বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি বিভাগীয় শহর। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত। সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহ যে কারোরই মন জয় করবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। সিলেটে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আমরা এখানে তুলে ধরছি।
জাফলং

সিলেটের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটন স্থান হচ্ছে জাফলং। এটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি পাহাড়ি এলাকা। জাফলং-এ রয়েছে সুউচ্চ পাহাড়, সবুজ বন, ঝর্ণা ও নদী। এটি বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত একটি পর্যটন কেন্দ্র। জাফলং-এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোরম। এখানে পাহাড়ের গায়ে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ দেখতে অসাধারণ লাগে। পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানিতে প্রতিফলিত হয় পাহাড়ের গাছের সবুজ ছায়া। তবে, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় জাফলং-এর সৌন্দর্য আরও বেশি মনোরম হয়ে ওঠে।
লালাখাল

জাফলং থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লালাখাল। এটি একটি লালচে পাথুরে জলাভূমি। এটি সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি পর্যটন কেন্দ্র। এটি একটি লালচে পাথুরে জলাভূমি। লালাখালে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও জলজ প্রাণী। লালাখালের অবস্থান ভারতের চেরাপুঞ্জি পাহাড়ের ঠিক নিচে।
চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন সারি গোয়াইন নদী লালাখালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই নদীর পানি পাহাড়ের লালচে মাটি থেকে রঙিন হয়ে যায়। আর সেই সাথে বলা যায়, লালাখালের সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোরম। নদীর পানিতে প্রতিফলিত হয় পাহাড়ের গাছের সবুজ ছায়া। যা পর্যটক মনে এক অনাবিল শান্তির আভাস তৈরী করে।
রাতারগুল

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত একটি জলাবন। রাতারগুল একটি ম্যানগ্রোভ বন, যেখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও প্রাণী। রাতারগুল একটি মিঠাপানির জলাবন। এই জলাবনে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা জন্মে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হিজল, করচ, বরুণ, পিঠালি, অর্জুন, ছাতিম, গুটি জাম, বট ইত্যাদি। এই জলাবনে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীও বাস করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সাঁপ, বানর, গুইসাপ, সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, টিকটিকি, ব্যাঙ ইত্যাদি। রাতারগুল জলাবনের সৌন্দর্য সত্যিকার অর্থেই অত্যন্ত মনোরম। এখানে জলের উপর ভেসে থাকা গাছপালা এক আলাদা অনুভূতি তৈরী করে যা অসাধারণ। বর্ষাকালে এই জলাবন পানিতে ডুবে যায়। তখন ছোট ছোট খাল ও বিল তৈরি হয়। এই খাল ও বিলে নৌকা ভ্রমণ করা বেশ জনপ্রিয়।
ভোলাগঞ্জ

আমাদের দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারির অংশ কোথায় জানেন? এই ভোলাগঞ্জ যা, জাফলং থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহ এর মধ্যে অন্যতম একটি। ভোলাগঞ্জ বাংলাদেশের সিলেট জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি পর্যটন কেন্দ্র। এটি একটি নদীর উৎসমুখ। এই স্থানটি সাদা পাথরের জন্য বিখ্যাত। সেই সাথে, ভোলাগঞ্জ ধলাই নদের উৎসমুখও বটে। ধলাই নদী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়।
ভোলাগঞ্জে ধলাই নদের পানি সাদা পাথরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই সাদা পাথরগুলো ধলাই নদের স্রোতে ভেসে এসে এই স্থানে জমা হয়েছে। তাই, ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোরম। নদের পানিতে সাদা পাথরের স্তূপ পর্যটকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। নদীর পানিতে প্রতিফলিত হয় আকাশের নীল রঙ। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্য কেমন জানি এক সৌন্দর্যের প্রতিফলন ঘটায় যা মনকে শীতল করে দেয়। এ সময় পরিবেশ আরও বেশি মনোরম হয়ে ওঠে।
তামাবিল

তামাবিল বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত একটি স্থলবন্দর। এটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডাউকী বাজারের সাথে সংযুক্ত। তামাবিল স্থলবন্দর বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থলবন্দর। এটি দিয়ে ভারত থেকে কয়লা, সাদা পাথর, ইস্পাত, রাসায়নিক দ্রব্য, ঔষধপত্র, খাদ্যপণ্য, গাড়ি, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রনিকস পণ্য ইত্যাদি আমদানি করা হয়।
তামাবিল স্থলবন্দরটি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত হয়। তামাবিল স্থলবন্দর ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হলো শীতকাল। এ সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে। তামাবিল স্থলবন্দরে যেতে হলে ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন, অথবা বিমানে সিলেট যেতে হবে। সিলেট থেকে বাস, সিএনজি, অথবা মাইক্রোবাসে তামাবিল যাওয়া যায়।
ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা

ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা বাংলাদেশের সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি সার কারখানা। আপনি কি জানেন বাংলাদেশের প্রথম এবং বৃহত্তম সার কারখানার নাম কি? এই ফেঞ্চুগঞ্জ সারখানায় হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম এবং বৃহত্তম সার কারখানা যা ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে ইউরিয়া সার উৎপাদন করে। কারখানাটি প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করে।
হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (র.) এর মাজার

সিলেটের হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহপরান (র.) এর মাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত মাজার। এই মাজারে প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত দর্শনার্থী আসেন। হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (র.) এর মাজার বাংলাদেশের সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান। সেই সাথে, এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ইসলামি তীর্থস্থান। হযরত শাহজালাল (র.) ছিলেন একজন বিখ্যাত সুফি দরবেশ ও ইসলাম প্রচারক। তিনি ১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে ৩২ বছর বয়সে সিলেটে এসে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় সিলেট অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করে। হযরত শাহজালালের সাহচর্যে ছিলেন তাঁর শিষ্য হযরত শাহপরান (র.)। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত তাপস ও আধ্যাত্মিক সাধক। তিনিও সিলেটে ইসলাম ধর্ম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (র.) দুজনেরই সমাধি সিলেট শহরের দরগাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থিত। মাজারের মূল দরজাটি পূর্ব দিকে মুখ করে আছে। দরজাটি লোহার তৈরি এবং এর উপরে রয়েছে সুন্দর কারুকাজ। মাজারের ভিতরে রয়েছে একটি বড় কক্ষ। কক্ষের মাঝখানে রয়েছে দুটি সমাধি। সমাধি দুটিতে হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (র.) এর দেহাবশেষ রয়েছে। মাজারের চারপাশে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা, পুকুর, কূপ, ইত্যাদি। মসজিদটি দরগাহ মসজিদ নামে পরিচিত। এটি একটি প্রাচীন মসজিদ এবং এটি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা। হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (র.) এর মাজার প্রতিদিন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সমাগম হয়। তারা মাজারে এসে দোয়া ও প্রার্থনা করে থাকেন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
আশা করছি, সিলেট নগরীর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য ইতোমধ্যেই জানতে পেরেছেন। এখানের দর্শনীয় স্থানগুলো ব্যক্তিমনে আলাদা এক অনুভূতির জন্ম দেয়। সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
সিলেট পর্যটন পার্ক এর নাম কি?
সিলেট পর্যটন পার্কের নাম খাদিমনগর ন্যাশনাল পার্ক। এটি সিলেট শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে খাদিমনগরে অবস্থিত।
জাফলং কি?
জাফলং বাংলাদেশের সিলেট জেলায় অবস্থিত একটি পর্যটন কেন্দ্র। এটি সিলেট শহর থেকে প্রায় ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত।
উপসংহার
সিলেটের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে রায়েরগাঁও হাওর, লক্ষনছড়া টিলাগড় ইকোপার্ক, ডিবির হাওর, খাদিমনগর ন্যাশনাল পার্ক, জৈন্তাপুর জাতীয় উদ্যান ও হাকালুকি হাওর। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে টাঙ্গাইলের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে পড়তে পারেন।
‘সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহ‘ দেখেছেন নিশ্চয়?সিলেট ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হল শীতকাল। এই সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে এবং দর্শনীয় স্থানগুলিতে ভিড় অনেকটায় কম থাকে। আপনি যদি কখনো সিলেট গিয়ে থাকেন তবে আপনার অনুভূতি কেমন ছিল দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন।