Skip to content
Home » মুন্সিগঞ্জের দর্শনীয় স্থান

মুন্সিগঞ্জের দর্শনীয় স্থান

Sightseeing Places In Munshiganj

মুন্সিগঞ্জের দর্শনীয় স্থান হাজারো দর্শনার্থীর মন জয় করার অনন্য স্থান। এই দর্শনীয় স্থানগুলো প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শক দিয়ে ভরপুর থাকে। প্রিয় পাঠক, মুন্সিগঞ্জের জনপ্রিয় দর্শনীয় জায়গা সর্ম্পকে বিস্তারিত তথ্যের আলোকে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। কেমন আছেন বলুন তো! আপনাদের মনের হাজারো প্রশ্নের অবসান ঘটাতে আমরা নিয়ে এসেছি মুন্সিগঞ্জের মুন্সিগঞ্জের দর্শনীয় স্থানের একটি তালিকা। চলুন তো কথা না বাড়িয়ে আসল কথায় আসা যাক-

মুন্সিগঞ্জের দর্শনীয় স্থান

মুন্সিগঞ্জ বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি জেলা। মুন্সিগঞ্জের প্রাচীন নাম বিক্রমপুর। মুন্সিগঞ্জ জেলার অনেক দর্শনীয় স্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। এগুলি বাংলাদেশের বিভিন্ন যুগের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। মুন্সিগঞ্জ জেলার অনেক দর্শনীয় স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে। এগুলি পর্যটকদের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়। মুন্সিগঞ্জের দর্শনীয় স্থানগুলোর সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে। এগুলি বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে।

ইদ্রাকপুর কেল্লা

Idrakpur Fort

ইদ্রাকপুর কেল্লা বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি মোঘল আমলের ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সুবাদার মীর জুমলা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। ইদ্রাকপুর কেল্লাটি একটি বর্গাকৃতির কেল্লা, যার দৈর্ঘ্য ৮২ মিটার এবং প্রস্থ ৭২ মিটার। কেল্লাটির চারপাশে রয়েছে প্রায় ১০ ফুট উঁচু প্রাচীর। কেল্লাটির ভেতরে রয়েছে বেশ কয়েকটি ভবন, যার মধ্যে রয়েছে একটি মসজিদ, একটি মন্দির, এবং একটি আবাসিক ভবন।

ইদ্রাকপুর কেল্লাটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল মগ জলদস্যু ও পর্তুগিজ আক্রমণ থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ সমগ্র এলাকাকে রক্ষা করাকেল্লাটি নির্মাণের জন্য ইছামতী নদীর তীরে ইদ্রাকপুর নামক স্থানে একটি উঁচু স্থান বেছে নেওয়া হয়েছিল। কেল্লাটি নির্মাণে ইট, চুন, সুরকি, এবং বাঁশের ব্যবহার করা হয়েছিল। ইদ্রাকপুর কেল্লাটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাক্ষ্য বহন করে। ইদ্রাকপুর কেল্লাটি বর্তমানে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। ইদ্রাকপুর কেল্লার প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বের কারণে ১৯৭৯ সালে এটিকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে।

ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি

Bhagyakul Zamindar's House

ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। বাড়িটি একটি বর্গাকৃতির ভবন, যার চারপাশে রয়েছে একটি প্রশস্ত বাগান। বাড়ির ভেতরে রয়েছে বেশ কয়েকটি ভবন, যার মধ্যে রয়েছে একটি মসজিদ, মন্দির, এবং একটি আবাসিক ভবন। ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন যদুনাথ সাহা। যদুনাথ সাহা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। মুন্সিগঞ্জের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে এটি অন্যতম একটি স্থাপনা। তিনি বরিশাল থেকে লবণ, সুপারি, শাড়ি ইত্যাদি পণ্য আমদানি করে মুর্শিদাবাদে রপ্তানি করতেন। যদুনাথ সাহা প্রচুর সম্পদের মালিক ছিলেন। তিনি তার সম্পদের একটি অংশ দিয়ে ভাগ্যকুল জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন।

ভাগ্যকুল জমিদার বাড়িটি গ্রীক স্থাপত্যের আদলে নির্মিত। বাড়িটির ভেতরে রয়েছে সুন্দর কারুকার্য। বাড়ির চারপাশের বাগানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা। বাগানে একটি পুকুরও রয়েছে। ভাগ্যকুল জমিদার বাড়িটি বর্তমানে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে প্রতিদিন অনেক পর্যটক আসেন। ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ির প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বের কারণে ১৯৮৭ সালে এটিকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে।

আড়িয়াল বিল

Arial Bill

আড়িয়াল বিল বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত একটি বিশাল জলাভূমি। আড়িয়াল বিলটি বাংলাদেশের বৃহত্তম বিলগুলির মধ্যে একটি। আড়িয়াল বিলের আয়তন প্রায় ১৩৬ বর্গকিলোমিটার। আড়িয়াল বিলটি একটি প্রাকৃতিক জলাভূমি। এটি পদ্মা নদীর পলি দ্বারা গঠিত হয়েছে। আড়িয়াল বিলে বিভিন্ন ধরনের মাছ, পাখি, এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী রয়েছে। আড়িয়াল বিলটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজননক্ষেত্র।

আড়িয়াল বিলটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে প্রতিদিন অনেক পর্যটক আসেন। আড়িয়াল বিলে নৌকা ভ্রমণ, মাছ ধরা, এবং পাখি দেখার মতো বিভিন্ন রকম বিনোদনমূলক কার্যকলাপ করা যায়। আড়িয়াল বিলের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বের কারণে ১৯৮৯ সালে এটিকে বাংলাদেশ সরকার একটি সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে।

পদ্মা রিসোর্ট

Padma Resort

পদ্মা রিসোর্ট হল ঢাকার বাইরে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলায় অবস্থিত। পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত এই রিসোর্টটিতে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। পদ্মা রিসোর্টে বিভিন্ন ধরনের কটেজ রয়েছে। কটেজগুলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সজ্জিত। রিসোর্টে একটি সুন্দর রেস্তোরাঁ রয়েছে যেখানে বাংলা এবং আন্তর্জাতিক খাবার পরিবেশন করা হয়। এছাড়াও, রিসোর্টে একটি সুইমিং পুল, একটি খেলার মাঠ, এবং একটি বার রয়েছে।

পদ্মা রিসোর্টে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায়। এখানে বিবাহ, জন্মদিন, বার্ষিকী, ইত্যাদির অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। পদ্মা রিসোর্টে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে লৌহজং যেতে হবে। লৌহজং থেকে রিসোর্টে যেতে রিকশা বা অটোরিকশা পাওয়া যায়। পদ্মা রিসোর্টের কটেজ ভাড়া প্রতি রাতে ২৩০০ থেকে ৩৪৫০ টাকা। তবে খাবারের জন্য খরচ আলাদা বহন করতে হয়। আবহাওয়া অত্যন্ত মনোরম থাকার কারণে, পদ্মা রিসোর্টে ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাস।

মাওয়া ফেরি ঘাট

Mawa Ferry Ghat

মাওয়া ফেরি ঘাট বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার মাওয়া উপজেলায় অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফেরি ঘাট। এটি পদ্মা নদীর ওপর অবস্থিত। মাওয়া ফেরি ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও যানবাহন পদ্মা নদী পার হন। মাওয়া ফেরি ঘাটটি ১৯৮৬ সালে স্থাপন করা হয়। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম ফেরি ঘাটগুলির মধ্যে একটি। মাওয়া ফেরি ঘাট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০,০০০ যানবাহন এবং প্রায় ১০০,০০০ মানুষ পদ্মা নদী পার হন।

মাওয়া ফেরি ঘাটটিতে বেশ কয়েকটি ফেরি রয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে ছোট, মাঝারি, এবং বড় আকারের ফেরি। মাওয়া ফেরি ঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জ জেলার মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা, টঙ্গিবাড়ী উপজেলা, এবং মাওয়া উপজেলার পাশাপাশি ঢাকা বিভাগের শরিয়তপুর জেলা এবং বরিশাল বিভাগের শরীয়তপুর জেলার কিছু অংশে যাওয়া যায়। মাওয়া ফেরি ঘাটটি একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ কেন্দ্র। এটি পদ্মা নদীর দুই তীরের মানুষের যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

কোর্ট জামে মসজিদ মুন্সিগঞ্জ

Court Jame Masjid Munshiganj

কোর্ট জামে মসজিদ বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার  সদর উপজেলার জুবিলী রোডে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ আমলে নির্মাণ করা হয়েছিল। মসজিদটি একটি বর্গাকৃতির ভবন, যার আয়তন প্রায় ১০০০ বর্গফুট। মসজিদটির চারপাশে রয়েছে একটি প্রশস্ত বারান্দা। মসজিদটির ভেতরে রয়েছে একটি বড় হল, যার মধ্যে রয়েছে ৪টি মিহরাব। মসজিদটির ছাদটি টিনের তৈরি

কোর্ট জামে মসজিদটি মুন্সিগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি মুন্সিগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মসজিদটি বর্তমানে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব হিসেবে ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দ্বারা সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করা হয়।

ডিসি পার্ক মুন্সিগঞ্জ

DC Park Munchiganj

ডিসি পার্ক হল মুন্সিগঞ্জ জেলার একটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র। এটি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পুরাতন কাচারি এলাকায় অবস্থিত। পার্কটি ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছিল। ডিসি পার্কটি প্রায় ১০ একর জমির উপর অবস্থিত। পার্কটিতে রয়েছে একটি বড় খেলার মাঠ, একটি পুকুর, একটি শিশুদের খেলার মাঠ, একটি প্রশস্ত বাগান, এবং একটি মুক্ত মঞ্চ। পার্কটিতে প্রতিদিন অনেক মানুষ ঘুরতে আসেন।

ডিসি পার্কটিতে বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক কার্যকলাপ করা যায়। এখানে খেলাধুলা করা যায়, পুকুরে নৌকা ভ্রমণ করা যায়, শিশুদের খেলাধুলা করা যায়, বাগানে হাঁটাচলা করা যায় এবং মুক্ত মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করা যায়। ডিসি পার্কটি মুন্সিগঞ্জ জেলার মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনোদন কেন্দ্র। এটি মুন্সিগঞ্জবাসীর অবসর সময় কাটানোর জন্য একটি আদর্শ জায়গা। এছাড়াও, মুন্সিগঞ্জ জেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক মসজিদ, মন্দির এবং অন্যান্য স্থাপনা।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো সত্যিই অনেক মনোমুগ্ধকর। আপনি যখন প্রত্যক্ষ সেখানে যাবেন তখন বুঝতে পারবেন প্রকৃতি কত সাজ নিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করে। প্রকৃতির সৌন্দর্যে অবগাহন করে নিজেকে প্রশান্তির মায়ায় জড়িয়ে নিন।

মুন্সিগঞ্জের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-

মুন্সিগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত?

মুন্সিগঞ্জ জেলার কথা মনে হলেই প্রথমেই একটা জিনিস ভেসে আসে তা হলো মুন্সিগঞ্জের বিখ্যাত আলু। কেননা বাংলাদেশের মধ্যে সবচাইতে বেশি আলু হয় মুন্সিগঞ্জ জেলাতে। আর এরই ভিত্তিতে মুন্সিগঞ্জ জেলাকে বিখ্যাত বলা হয়।

মুন্সিগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তি কে বা কারা?

স্যার জগদীশ চন্দ্রবসু, অতীশ দীপঙ্কর, হুমায়ুন আজাদ সহ আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির আবাসস্থল ছিল মুন্সিগঞ্জ জেলা।

উপসংহার 

মুন্সিগঞ্জের দর্শনীয় স্থানগুলোর একটি রিভিউ আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো মাত্র। পুরো পোস্ট মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে নারায়ণগঞ্জের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে পড়তে পারেন।

মুন্সিগঞ্জের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান‘ সম্পর্কে নিশ্চয় বিস্তর ধারণা পেয়েছেন। উপরের কোন স্থানটি আপনার সবথেকে ভালো লেগেছে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনার সু-চিন্তিত মতামত। আপনার কমেন্ট এর প্রতিক্ষায় আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ্ হাফেজ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *