খুলনার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন তো? উপযুক্ত কোন সোর্স পাচ্ছেন না? থাক, আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না। সঠিক আর উপযুক্ত তথ্য নিয়ে আমরা এখানে খুলনার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরছি। সুতরাং খুলনার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে সঠিক আর তথ্যবহুল জ্ঞান অর্জনের জন্য পুরো পোস্টটি মনোযোগসহ পড়ে নিন।
খুলনার দর্শনীয় স্থান
খুলনা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। আর খুলনা জেলার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং বহু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। খুলনার কিছু বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সেরা কয়েকটি নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। পুরো পোস্টটি পড়লে খুলনার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ্।
সুন্দরবন

সুন্দরবন এর কথা কেই না জানে বলুন? এটি হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। সুন্দরবন বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অবস্থিত। খুলনার মধ্যে যতগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে তাদের মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম। এর মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার (৬৬%) রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ (৩৪%) রয়েছে ভারতের মধ্যে। সুন্দরবনটি গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা নদীর বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত। আবার সুন্দরবন হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুসংস্থান। সুন্দরবনে প্রায় ২৭০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৫০ প্রজাতির পাখি, ১২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ১০ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ডলফিন, হাতি, হরিণ, এবং বিভিন্ন ধরনের পাখি রয়েছে।
পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সুন্দরবন এর জুড়ি মেলা ভার। এখানে নৌকা ভ্রমণ, পাখি দেখা, এবং বন্যপ্রাণী দেখার মতো বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক কিছু করতে পারেন। সেই সাথে, সুন্দরবন একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত সম্পদ। এটি বৈচিত্র্যপূর্ণ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর আবাসস্থল এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সুতরাং বলা যেতে পারে, সুন্দরবন একটি অমূল্য সম্পদ। এটি রক্ষা করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। সুন্দরবন ট্যুর প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে ও অল্প খরচে সুন্দরবন ভ্রমন করতে যোগাযোগ করুন বিডিস্টল ডট কম এর ওয়েবসাইটে।
করমজল

করমজল হল বাংলাদেশের খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলায় অবস্থিত একটি ম্যানগ্রোভ অভয়ারণ্য। এটি সুন্দরবনের একটি অংশ। করমজল সুন্দরবনের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। করমজলের আয়তন প্রায় ৩০ হেক্টর। এটি পশুর নদীর তীরে অবস্থিত। করমজলে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ এবং প্রাণী রয়েছে। এখানে রয়েছে ম্যানগ্রোভ গাছ, বন্যপ্রাণী, এবং নানান ধরণের পাখি। সেই সাথে করমজলে রয়েছে কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র। আবার এখানে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হাতি, হরিণ, এবং বিভিন্ন ধরনের পাখি।
করমজলে নৌকা ভ্রমণ, পাখি দেখা, এবং বন্যপ্রাণী দেখার মতো বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক কাজে নিজের প্রশান্তি বাড়াতে পারেন নিশ্চিন্তে। করমজলে একটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে যেই কেন্দ্রে আকর্ষণীয় একটি রেস্তোরাঁ, একটি ক্যাফে, এবং একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। করমজল পর্যটন কেন্দ্রটি খুলনা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। কেননা, প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে অবগাহনের লক্ষ্যে এখানে আসেন।
খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর

খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর খুলনা বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ জাদুঘর। এটি খুলনা জেলার খুলনা সদর উপজেলায় অবস্থিত। জাদুঘরটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জাদুঘরটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। এছাড়াও জাদুঘরটিতে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক নিদর্শন রয়েছে। খুলনা বিভাগীয় জাদুঘরের সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ১০,০০০টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
এগুলির মধ্যে রয়েছে ব্রোঞ্জ যুগের মূর্তি, পোড়ামাটির ফলকচিত্র, পোড়ামাটির পাত্র, মুদ্রা, এবং অন্যান্য নিদর্শন। জাদুঘরটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক নিদর্শন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাচীন বাংলার মুদ্রা, পোশাক, অলংকার, এবং অন্যান্য নিদর্শন। খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। জাদুঘরটিতে প্রবেশের জন্য কোনো ফি নেই। এই জাদুঘরটি খুলনার ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন ধরনের নিদর্শন প্রদর্শন করে থাকে। আপনি যদি কখনো খুলনা ভ্রমণে যান তবে খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর যেতে ভুলবেন না কেমন! কেননা, এখানে গেলে জীবন ও প্রকৃতির অনেক নতুন তথ্য জানতে পারবেন।
খান জাহান আলী সেতু খুলনা

খান জাহান আলী সেতু খুলনা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। এটি রূপসা নদীর উপর নির্মিত যা রূপসা সেতু নামেও পরিচিত। এই সেতুটি খুলনা শহরের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলির বিশেষত মংলা সমুদ্র বন্দরের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে। খান জাহান আলী সেতুটি ২০০৫ সালে উদ্বোধন করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৬০ কিলোমিটার এবং এর প্রস্থ ১৬.৪৮ মিটার। সেতুটিতে পথচারী ও অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য বিশেষ লেন রয়েছে।
খান জাহান আলী সেতুটি খুলনার একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী সেতুটি পরিদর্শন করতে আসেন। খান জাহান আলী সেতুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি খুলনা শহরের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলির সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে। সেই সাথে এটি একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান যাকে খুলনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরালয়

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরালয় হল বাংলাদেশের খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি গ্রামে অবস্থিত। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পত্নী মৃণালিনী দেবীর পিতা-মাতা জগন্নাথ মুখোপাধ্যায় ও সারদা দেবীর বাড়ি। দক্ষিণডিহি ঠাকুরবাড়ি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি ১৮৯০ সালে নির্মাণ করা হয়। বাড়িটি দুইতলা বিশিষ্ট। বাড়িটির সামনে রয়েছে একটি সুন্দর বাগান। বাড়ির ভিতরে রয়েছে একটি বড় হলঘর। এই হলঘরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেকবার এসেছেন।
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি বাংলাদেশের খুলনা জেলার রূপসা নদীর পূর্বপাশে বাগমারা গ্রামে অবস্থিত। তিনি ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর খুলনায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের ছোড়া বোমায় দগ্ধ হয়ে শহীদ হন। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধিটি একটি সুন্দর ও মনোরম স্থান যার চারপাশে রয়েছে একটি সুন্দর বাগান। সমাধির সামনে রয়েছে একটি মসজিদ। মসজিদটিতে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি পবিত্র কুরআন রাখা আছে।
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধিটি প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ পরিদর্শন করেন। সমাধিটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এটি বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের স্মৃতিকে ধরে রাখে। খুলনার দর্শনীয় স্থানগুলি প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক আকর্ষণ করে। খুলনা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
তো প্রিয় পাঠক, খুলনার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। এই প্রসঙ্গে আপনার মনে কি কোন প্রশ্ন তৈরী হয়েছে? তাহলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না কিন্তু!
খুলনার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
খুলনার বিখ্যাত ব্যক্তি কে বা কারা?
খুলনার কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তি হচ্ছেন, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ফকির লালন শাহ, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন এবং মঈন ইউ আহমেদ।
খুলনা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত?
বৈচিত্র্যময় এই বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী খুলনা জেলা তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক স্থাপনার জন্য বিখ্যাত। সেই সাথে এখানে রয়েছে মনোমুগ্ধকর জাতীয় জাদুঘর, খুলনা ক্যাথিড্রাল ও দামোদর নদীসহ অনেক দর্শনীয় স্থান।
উপসংহার
বাংলাদেশের প্রকৃতি কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে প্রশান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে। আর প্রশান্তির মাত্রাকে বাড়াতে খুলনার দর্শনীয় স্থান যেন আলাদা এক যোগসূত্র স্থাপন করেছে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে মুন্সিগঞ্জের দর্শনীয় স্থান পড়তে পারেন।
‘খুলনার দর্শনীয় স্থান‘ সম্পর্কে আমাদের এই পোস্টটি আপনার কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। প্রিয় বন্ধুরা, আপনি যদি এ বিষয়ে নতুন কোন তথ্য জেনে থাকেন তবে আমাদেরকেও জানিয়ে দিন আপনার মূল্যবান মতামত। আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামণা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।