আপনি যদি কখনো রাঙামাটি জেলায় গিয়ে রাঙামাটি দর্শনীয় স্থানগুলো উপভোগ করতে চান তবে আপনি নিচের তথ্যগুলো জেনে রাখুন। হয়তো এগুলো আপনার খুবই উপকারে আসবে। এছাড়াও জ্ঞান-পিপাসু হিসেবে পর্যাপ্ত জ্ঞান লাভের জন্য পড়তে থাকুন…
রাঙামাটি দর্শনীয় স্থান
রাঙামাটি বাংলাদেশের একটি পার্বত্য জেলা। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। রাঙামাটিতে রয়েছে সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থান, এবং সেই সাথে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। আমরা এখানে রাঙামাটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরছি। সুতরাং পড়া চালিয়ে যান…
কাপ্তাই হ্রদ

কাপ্তাই হ্রদ বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম জলাধার। এটি রাঙামাটি দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে একটি এবং এটি রাঙামাটির সদর উপজেলায় অবস্থিত। কাপ্তাই হ্রদটি তার মনোরম সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে নৌকা ভ্রমণ, মাছ ধরা, এবং অন্যান্য জলক্রীড়া উপভোগ করা যায়। কাপ্তাই হ্রদটি ১৯৬২ সালে কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য খনন করা হয়েছিল। এই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র। কাপ্তাই হ্রদের আয়তন প্রায় ৩৪ বর্গকিলোমিটার। এই হ্রদের গভীরতা প্রায় ৯০ মিটার। এই হ্রদে প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। কাপ্তাই হ্রদটি রাঙামাটির একটি অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কাপ্তাই হ্রদ পরিদর্শন করে থাকেন।
ঝুলন্ত সেতু

কাপ্তাই হ্রদে অবস্থিত ঝুলন্ত সেতুটি একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু। এটি রাঙামাটির একটি অন্যতম আইকনিক স্থাপনা। আপনি নিশ্চয় আইকনিক স্থাপনা সম্পর্কে জানেন? ঝুলন্ত সেতুটি থেকে কাপ্তাই হ্রদের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এই ঝুলন্ত সেতুটি ১৯৬২ সালে কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সময় নির্মাণ করা হয়েছিল। আর এই সেতুটি কাপ্তাই হ্রদের দুটি পাড়কে সংযুক্ত করে।
ঝুলন্ত সেতুটি ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ এবং ১০ ফুট প্রশস্ত। এই সেতুটিতে দুটি স্তম্ভ রয়েছে, যার প্রত্যেকটির উচ্চতা ১৪০ ফুট। ঝুলন্ত সেতুটি একটি বহুরঙা সেতু। এই সেতুর স্তম্ভগুলি লাল এবং সাদা রঙে আঁকা। সেতুর ডেকটি সবুজ রঙে আঁকা। অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মতই ঝুলন্ত সেতুটি রাঙামাটির একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই সেতুটি পরিদর্শন করতে আসেন।
রাজবন বিহার

রাজবন বিহার রাঙামাটি সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি বৌদ্ধ মন্দির। এটি ১৫ শতকে নির্মিত হয়েছিল। রাজবন বিহারটি তার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত। এটি ভারতের উত্তরপ্রদেশের কানপুর জেলার একটি বৌদ্ধ বিহার। আর এই মন্দিরটি কানপুর শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে রাজবন গ্রামে অবস্থিত। বিহারটি ৭ম-৮ম শতাব্দীতে নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি একটি বড় বিহার, যার আয়তন প্রায় ১০০,০০০ বর্গমিটার। মন্দিরটিতে একটি উঁচু বৌদ্ধ স্তূপ রয়েছে, যা ৮ম শতাব্দীর। এই মন্দিরটির আর একটি আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মন্দিরটির দেয়ালে বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন দৃশ্য খোদাই করা আছে।
রাজবন বিহার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ তীর্থস্থান। এটি ভারতের অন্যতম প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। বিহারটি প্রতি বছর হাজার হাজার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। রাজবন বিহারের ইতিহাস সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায় না। ধারণা করা হয় যে, বিহারটি সম্ভবত রাজবংশী রাজাদের দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছিল। বিহারটি ১৯০০ সালের দিকে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এরপর থেকে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। রাজবন বিহারের কাছে আরও কয়েকটি বৌদ্ধ স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজবন বৌদ্ধ মন্দির, রাজবন বৌদ্ধ স্তূপ এবং রাজবন বৌদ্ধ পাহাড়।
শুভলং ঝর্ণা

রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত শুভলং ঝর্ণাটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু ঝর্ণা। এটি প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু। শুভলং ঝর্ণাটি তার মনোরম সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এই ঝর্ণা বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পাহাড়ি ঝর্ণা। এটি কাপ্তাই হ্রদের কোল ঘেঁষে কর্ণফুলী নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। নৌ-পথে শুভলং বাজার যাওয়ার আগে এই ঝর্ণাটির দেখা মিলে।
এখানে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটে। শুভলং ঝর্ণার উচ্চতা প্রায় ৩০০ ফুট। বর্ষা মৌসুমে ঝর্ণার জলধারা প্রচণ্ড বেগে নিচে আছড়ে পড়ে। যা দেখতে সত্যিই অপূর্ব লাগে। ঝর্ণার পাশেই রয়েছে একটি সুন্দর উদ্যান। উদ্যানটিতে নানা রকম ফুল ও গাছপালা রয়েছে। আপনি যদি শুভলং ঝর্ণা দেখতে চান তবে তার জন্য রাঙ্গামাটি শহর থেকে নৌকা ভাড়া করে যেতে পারেন। নৌকা ভাড়া প্রতি ঘন্টায় ১০০০-১৫০০ টাকা। নৌকা দিয়ে শুভলং ঝর্ণা পর্যন্ত যেতে প্রায় দেড় ঘণ্টা খানেক সময় লাগে।
আর্যপুর ধর্মোজ্জল বনবিহার
রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত আর্যপুর ধর্মোজ্জল বনবিহারটি একটি বৌদ্ধ মন্দির। এটি ১৭ শতকে নির্মাণ করা হয়েছিল। আর্যপুর ধর্মোজ্জল বনবিহারটি তার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত। এই বনবিহার বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার আর্যপুর গ্রামে অবস্থিত একটি প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপনা। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান এবং পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় জায়গা।
মন্দিরটি একটি চৌকোকৃতির কাঠামো যাতে একটি বড় মূর্তি রয়েছে। স্তূপটি একটি গোলাকার কাঠামো যা বুদ্ধের অস্থি এবং অন্যান্য পবিত্র জিনিস ধারণ করে। বিহারটি একটি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের বাসস্থান। পুকুরটি একটি জলাধার যা পানি সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে এখানে আসেন। সুতরাং বলা যেতে পারে, এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সম্পদ।
কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র

রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি ১৯৬২ সালে নির্মাণ করা হয়। এই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। রাঙামাটি দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে এটি অন্যতম একটি। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং সর্বাধিক উৎপাদনক্ষম বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি কর্ণফুলি নদীর উপর নির্মিত কাপ্তাই বাঁধের সাথে সংযুক্ত। বাঁধের মাধ্যমে নদীর পানিকে কাপ্তাই হ্রদে জমা করে রাখা হয়। হ্রদের পানি থেকে পাওয়া জলচাপের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রে মোট পাঁচটি ইউনিট রয়েছে।
প্রতিটি ইউনিটের ক্ষমতা ৪৬ মেগাওয়াট। মোট উৎপাদনক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট। কেন্দ্রটি প্রতি বছর প্রায় ১০০০ কোটি কিলোওয়াট-ঘন্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ২০% সরবরাহ করে। এছাড়াও, এটি দেশের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। এটি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি অনন্য নিদর্শন। কাপ্তাই হ্রদ ও কাপ্তাই বাঁধের পাশাপাশি, এটি পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
উপজাতীয় জাদুঘর

রাঙামাটি দর্শনীয় স্থান এর রাঙামাটি শহরে অবস্থিত উপজাতীয় জাদুঘরটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জাদুঘর। এটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজাতির সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের উপর প্রদর্শনী রয়েছে। চাইলে আপনি রাঙামাটি গিয়ে জনপ্রিয় এই দর্শনীয় স্থানটি দেখতে পারেন। উপজাতীয় জাদুঘর বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি শহরের ভেদভেদি নামক স্থানে অবস্থিত। এটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের অভ্যন্তরে অবস্থিত। জাদুঘরটি ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
জাদুঘরে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজাতিদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে রয়েছে পোশাক, গয়না, অস্ত্রশস্ত্র, বাদ্যযন্ত্র, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, প্রাচীন মুদ্রা, সঙ্গীতের জন্য ব্যবহার করা যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। জাদুঘরটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি মাত্র ২৫ টাকা।
চাইবাসা

রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত চাইবাসাটি একটি সুন্দর গ্রাম। এটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
চাইবাসা হল ঝাড়খন্ড রাজ্যের পশ্চিম সিংভূম জেলার একটি পৌর শহর। শহরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কেন্দ্র এবং টাটা গ্রুপের একটি বিশাল ইস্পাত কারখানা এখানে অবস্থিত। চাইবাসার ইতিহাস ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হয়। ব্রিটিশরা এই অঞ্চলে কয়লা খনি খনন শুরু করে এবং চাইবাসাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে।
১৯১৬ সালে টাটা গ্রুপ এখানে একটি ইস্পাত কারখানা স্থাপন করে। চাইবাসা একটি জনবহুল শহর। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুসারে শহরের জনসংখ্যা ছিল ৬৩,৪৬৮। শহরের প্রধান ভাষা হল হিন্দি। চাইবাসা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কেন্দ্র। এখানে টাটা ইস্পাত কারখানা ছাড়াও আরও অনেক ছোট-বড় শিল্প কারখানা রয়েছে। শহরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশনও বটে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
জনপ্রিয় পর্যটন স্থান রাঙ্গামাটিতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ভ্রমণ করে থাকেন। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য ভিড় জমায় তারা। রাঙামাটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
রাঙ্গামাটি কিসের জন্য বিখ্যাত?
রাঙ্গামাটি বাংলাদেশের একটি পার্বত্য জেলা। এটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য বিখ্যাত।
রাঙ্গামাটির বিখ্যাত ব্যক্তি কে বা কারা?
রাঙামাটির কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তি হচ্ছেন, অংসুই প্রু চৌধুরী, জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, মদন মোহন সেন, নুরুল ইসলাম এবং শেখ আব্দুল হামিদ।
উপসংহার
রাঙামাটির আবহাওয়া সারা বছরই মনোরম থাকে। তবে শীতকালে তাপমাত্রা কমে যেতে পারে, তাই গরম কাপড় সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। রাঙামাটি একটি পাহাড়ি এলাকা, তাই হাইকিং বুট সঙ্গে নেওয়া উচিত। সেই সাথে রাঙামাটিতে অনেক চা বাগান রয়েছে। তাই, চা বাগান ভ্রমণের সময় পরিষ্কার জুতা পড়ুন। রাঙামাটিতে রাস্তার পাশে চা বিক্রি হয়। তাই, সুস্বাদু চা পান করে রাঙামাটি ভ্রমণ উপভোগ করুন। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে বান্দরবান দর্শনীয় স্থান সমূহ পড়তে পারেন।
‘রাঙামাটি দর্শনীয় স্থান‘ অবলোকনের জন্য আপনি অনায়াসেই সেখানে পাড়ি জমাতে পারেন। পোস্টটি কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনার মূল্যবান মতামত।