বান্দরবান দর্শনীয় স্থান সমূহ দেখার জন্য প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় জমায়। আপনিও কি একজন ভ্রমণ পিয়াসী? তাহলে চলে যান বান্দরবান, দেখুন এখানকার দর্শনীয় স্থান আর নিজের জ্ঞানকে এগিয়ে নিন আরো এক ধাপ। দর্শনীয় স্থান মানুষের মনকে সতেজ করে তোলে। সুতরাং আমাদের উচিত, সম্ভব হলে বান্দরবারেন দর্শনীয় স্থানগুলো দেখা। কি আমি ঠিক বলছি তো!
দর্শনীয় স্থান কি?
দর্শনীয় স্থান হল এমন একটি স্থান যা দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। এটি হতে পারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন, বা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। দর্শনীয় স্থানগুলি মানুষের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং প্রকৃতির বিস্ময় সম্পর্কে জানার জন্য একটি অনন্য উপায়।
বান্দরবান দর্শনীয় স্থান সমূহ
বান্দরবান বাংলাদেশের একটি পার্বত্য জেলা। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। বান্দরবান দর্শনীয় স্থান সমূহ এর পাশাপাশি এখানে রয়েছে অসংখ্য পাহাড়, নদী, জঙ্গল, এবং ঝর্ণা।
মহামুনি পাহাড়

বান্দরবান জেলার একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হলো মহামুনি পাহাড়। এটি বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মহামুনি পাহাড়ের চূড়া থেকে বান্দরবান শহর এবং এর আশেপাশের পাহাড়-নদী-জঙ্গলের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। মহামুনি পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ১,০০০ ফুট। পাহাড়ের চূড়ায় একটি মন্দির রয়েছে। মন্দিরটি মহামুনি বুদ্ধের নামে নামকরণ করা হয়েছে। মহামুনি পাহাড় ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাস। এই সময় আবহাওয়া অনেক মনোরম থাকে।
নীলাচল পাহাড়

সবচেয়ে উঁচু পাহাড় নীলাচল পাহাড় যা বান্দরবান জেলায় অবস্থিত। এটি বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে থানচি উপজেলায় অবস্থিত। নীলাচল পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ২,৮৫০ ফুট। নীলাচল পাহাড়ের চূড়া থেকে বান্দরবান শহর এবং এর আশেপাশের পাহাড়-নদী-জঙ্গলের দৃশ্য দেখতে সত্যিই অসাধারণ। দূর থেকে মনে হয় যেন সবুজ গাছপালা দিয়ে ঢাকা পাহাড়ের উপর মেঘের রাজ্য। নীলাচল পাহাড়ে পৌঁছানোর জন্য বান্দরবান শহর থেকে জিপ বা মিনিবাসে করে থানচি উপজেলায় যেতে হয়। থানচি উপজেলা থেকে নীলাচল পাহাড়ের চূড়ায় যাওয়ার জন্য রয়েছে একটি পায়ে হেঁটে যাওয়ার রাস্তা। পাহাড়ের চূড়ায় যাওয়ার জন্য প্রায় দুই ঘন্টা সময় লাগে। নীলাচল পাহাড় ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাস
মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র

মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র বান্দরবান জেলার একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে রয়েছে একটি ঝর্ণা, একটি হ্রদ, এবং একটি জাদুঘর। মেঘলা ঝর্ণা, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। ঝর্ণাটি প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে নেমে আসে। ঝর্ণার চারপাশে সবুজ গাছপালা দিয়ে ঘেরা। মেঘলা হ্রদ, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের আরেকটি আকর্ষণীয় স্থান। হ্রদটি প্রায় ১০ একর আয়তনের। হ্রদের চারপাশে পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের রাজ্য দেখা যায়। মেঘলা জাদুঘর হচ্ছে, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে অবস্থিত একটি জাদুঘর। জাদুঘরটিতে বান্দরবান জেলার ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্য নিয়ে বিভিন্ন প্রদর্শনী রয়েছে।
মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য বান্দরবান শহর থেকে জিপ বা মিনিবাসে করে যেতে হয়। পর্যটন কেন্দ্রে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি রিসোর্ট এবং হোটেল। মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাস। এই সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে।
সুবলং ঝর্ণা

সুবলং ঝর্ণা বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত ঝর্ণা। এটি বান্দরবান জেলার বরকল উপজেলায় অবস্থিত। সুবলং ঝর্ণা থেকে নেমে আসা জলধারা প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে ছিটকে পড়ে। এই ঝর্ণা কাপ্তাই হ্রদের কাছে অবস্থিত। ঝর্ণার চারপাশে সবুজ গাছপালা দিয়ে ঘেরা। ঝর্ণার কাছেই রয়েছে একটি ছোট্ট বাজার। সুবলং ঝর্ণায় পৌঁছানোর জন্য বান্দরবান শহর থেকে জিপ বা মিনিবাসে করে বরকল উপজেলায় যেতে হয়। বরকল উপজেলা থেকে ঝর্ণায় যেতে হয় নৌকায় করে।
সুবলং ঝর্ণা ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাস। এই সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে। সুবলং ঝর্ণার কিছু আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে, উঁচু থেকে নেমে আসা জলধারা সেই সাথে, পাহাড়-নদী-জঙ্গলের দৃশ্য উপভোগ করা যায়, স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা যায়। সুতরাং বলায় যেতে পারে, সুবলং ঝর্ণা একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান।
থানচি নদী

থানচি নদী বান্দরবান জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০ কিলোমিটার। থানচি নদীর উৎপত্তি থানচি উপজেলার থানচি পাহাড় থেকে। নদীটি থানচি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিম্বুক পাহাড়ের কাছে মেঘনা নদীতে মিশে যায়।
থানচি নদীর তীরে অবস্থিত বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, নাফাখুম জলপ্রপাত, থানচি রেমাক্রি ঝর্ণা, থানচি বনবিহার, থানচি বাজার ইত্যাদি। থানচি নদী একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। নদীতে নৌকা ভ্রমণ, ট্রেকিং, এবং ক্যাম্পিং এর মতো বিভিন্ন রকমের বিনোদনমূলক কার্যক্রম করা যায়। থানচি নদীতে ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাস। এই সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে। থানচি নদী একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান।
নাফাখুম

নাফাখুম বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম জলপ্রপাত। নাফাখুম জলপ্রপাত থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে অবস্থিত। রেমাক্রি থেকে নাফাখুম জলপ্রপাতের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। নাফাখুম জলপ্রপাত রেমাক্রি খালের পানি থেকে উৎপন্ন হয়। আবার, রেমাক্রি খাল থানচি নদীর একটি উপনদীও বটে।
নাফাখুম জলপ্রপাতের উচ্চতা প্রায় ২৫০ ফুট। নাফাখুম জলপ্রপাতের জলধারা প্রায় ১০০ ফুট প্রশস্ত। এই জলপ্রপাতের চারপাশ সবুজ গাছপালা দিয়ে ঘেরা। নাফাখুম জলপ্রপাতের কাছেই রয়েছে একটি ছোট ঝর্ণা। জলপ্রপাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক নাফাখুমে আসেন।
চিম্বুক পাহাড়

বান্দরবান জেলার খাগড়াছড়ি উপজেলায় অবস্থিত চিম্বুক পাহাড়। এটি বান্দরবানের একটি অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। চিম্বুক পাহাড়ের চূড়া থেকে বান্দরবান শহর এবং এর আশেপাশের পাহাড়-নদী-জঙ্গল দেখতে অসাধারণ লাগে। এটি সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ২৫০০ ফুট উঁচু পাহাড়। সৌন্দর্য এর দিক থেকে এই পাহাড় অনন্য। এটি বান্দরবান উপজেলার অন্যতম পাহাড় ও দেশের তৃতীয় বৃহত্তম পাহাড় এবং ঐতিহাসিক স্থান।
নীলগিরি পাহাড়

নীলগিরি পাহাড় বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার একটি পাহাড়ী শৃঙ্গ। এটি বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নীলগিরি পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ২২০০ ফুট। এই পাহাড়ের চূড়া থেকে বান্দরবান শহর এবং এর আশেপাশের সবকিছুই যেন আলাদা এক অনুভূতি তৈরী করে।
নীলগিরি পাহাড়ে পৌঁছানোর জন্য বান্দরবান শহর থেকে জিপ বা মিনিবাসে করে থানচি উপজেলায় যেতে হয়। থানচি উপজেলা থেকে নীলাচল পাহাড়ের চূড়ায় যাওয়ার জন্য রয়েছে একটি পায়ে হেঁটে যাওয়ার রাস্তা। পাহাড়ের চূড়ায় যাওয়ার জন্য প্রায় দুই ঘন্টা সময় লাগে। আবহাওয়া মনোরম থাকায় নীলগিরি পাহাড় ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাস। নীলগিরি পাহাড়ের আকর্ষণীয় দিক হল এখান থেকে আপনি মেঘের রাজ্য দেখতে পাবেন।
আলুটিলা পাহাড়

আলুটিলা পাহাড় বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত একটি পাহাড়ী শৃঙ্গ। এটি বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আলুটিলা পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ২,০০০ ফুট। আলুটিলা পাহাড় ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাস। আলুটিলা পাহাড়ের কিছু আকর্ষণীয় দিক হল মেঘের রাজ্য দেখা যায় এবং পাহাড়-নদী-জঙ্গলের দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
বান্দরবান দর্শনীয় স্থান সমূহ নিশ্চয় আপনার মন কেড়েছে। কি বলেন? ঐতিহ্য ঘেরা বান্দরবান জেলা বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের জন্য বাংলাদেশের বুকে মাথা উঁচু করে আছে। বান্দরবান দর্শনীয় স্থান সমূহ জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
বান্দরবান কিসের জন্য বিখ্যাত?
বান্দরবানে দর্শনীয় স্থানগুলো আমিয়াখুম জলপ্রপাত, কিয়াচলং লেক, ঋজুক জলপ্রপাত, কেওক্রাডং, চিম্বুক পাহাড়, পাহাড়ি গ্রাম, চিংড়ি ঝর্ণা , জাদিপাই ঝর্ণা, জীবননগর ও আরো অনেক ।
দর্শনীয় স্থানের জন্য বান্দরবান কেন সেরা?
বান্দরবান বাংলাদেশের একটি পার্বত্য জেলা। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও অ্যাডভেঞ্চার।
উপসংহার
বাংলাদেশের বুকে বিভিন্ন জেলায় হাজারো দর্শনীয় স্থানের মধ্যে বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলো কেন জানি দর্শক মনে আলাদা এক অনুভূতি তৈরী করে। অবশ্য ব্যক্তি বিশেষ এটি আলাদা হতে পারে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ১০টি দেশ সম্পর্কে পড়তে পারেন।
‘বান্দরবান দর্শনীয় স্থান সমূহ‘ এর মধ্যে কোনটি আপনার সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে দয়া করে কমেন্ট করে জানিযে দিবেন। প্রিয় পাঠক, আপনাদের সকলের সুসাস্থ্য কামণা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ্ হাফেজ।