বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ১০টি দেশ সম্পর্কে ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করলে আপনি বিভিন্ন তথ্য পাবেন। তবে কি সব তথ্যেই সঠিক? আপনার প্রশ্নের উত্তর এই পোস্টের মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে। এই বিশ্বে ২ শতাধিক দেশ রয়েছে। তার মধ্যে আমরা আজকে সবথেকে ছোট ১০টি দেশ সম্পর্কে আলোকপাত করবো। সুতরাং আপনি যদি এই দেশগুলো সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে থাকেন তবে তো আলহামদুলিল্লাহ্, আর যদি না জেনে থাকেন তবে পোস্টটি গুরুত্বসহ পড়ে নিন।
বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ১০টি দেশ
প্রিয় পাঠক, আপনি কি জানেন ২-৩ টি গ্রাম একত্র করলে একটি দেশের সমান আয়তন হতে পারে? জি, এমনও কিছু দেশ রয়েছে যেই দেশের আয়তন ১ বর্গ কি.মি. এর চেয়েও কম। চলুন জানা অজানা অনেক তথ্য নিয়ে সাজানো বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ১০টি দেশ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আজকের পোস্ট থেকে জেনে আসি।
১. ভ্যাটিকান সিটি (০.৪৪ বর্গ কিলোমিটার)

ভ্যাটিকান সিটি হল বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ। এটি ইতালির রোমে অবস্থিত এবং এর আয়তন মাত্র ০.৪৪ বর্গ কিলোমিটার। মাত্র .৪৪ বর্গ কি.মি তাও আবার একটি দেশের আয়তন, ভাবা যায়! সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি লক্ষ্য করা যায় তা হলো এটি একটি স্বাধীন ধর্মীয় রাষ্ট্র এবং এর জনসংখ্যা মাত্র ৮০০ জন। আমার তো মনে হয় একটি গ্রামেও এর থেকে বেশি জনগন বাস করে। কি আমি ঠিক বলছি তো? বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ১০টি দেশ এর মধ্যে একমাত্র ভ্যাটিকান সিটিই সবচেয়ে ছোট। এই দেশটি হল রোমান ক্যাথলিক চার্চের কেন্দ্র এবং এখানে পোপের বাসভবন অবস্থিত। ভ্যাটিকান সিটিতে পোপের প্রাসাদ, সেন্ট পিটারের গির্জা, ভ্যাটিকান গ্রন্থাগার এবং ভ্যাটিকান জাদুঘর অবস্থিত। এতটুকু একটি দেশের মধ্যে কত কিছুই না রয়েছে। ভ্যাটিকান সিটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এবং প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন।
২. মোনাকো (১.৯৫ বর্গ কিলোমিটার)

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দ্বিতীয় দেশ হল মোনাকো। এটি ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি ছোট্ট দেশ। মোনাকোর আয়তন মাত্র ১.৯৫ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা মাত্র ৩৬,৬৭৩ জন প্রায়। অনেকের মতে ছোট দেশ হলে কি হবে বিশ্বে ধনী দেশগুলোর মধ্যে শ্বীর্ষে এই দেশ।
৩. নাউরু (২১.৩ বর্গ কিলোমিটার)

নাউরু বিশ্বের তৃতীয় ছোট স্বাধীন দেশ। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের মাইক্রোনেশিয়া অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। নাউরুর আয়তন মাত্র ২১.৩ বর্গ কিলোমিটার (৮ বর্গ মাইল) এবং জনসংখ্যা ১০,৬৪৭ জন (২০২৩ আনুমানিক)। নাউরু একটি রিপাবলিক এবং এর রাজধানী হল ইয়ারেন।
নাউরু একটি মালভূমি দ্বীপ যা প্রায় ৬০ মিটার (২০০ ফুট) উঁচু। এর সমুদ্র সৈকত বা প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। নাউরুর অর্থনীতি খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে ফার্নালাইট। ১৯৮৯ সালে ফার্নালাইট খনিগুলি বন্ধ হয়ে গেলে নাউরুর অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে নাউরুর অর্থনীতি আন্তর্জাতিক সাহায্য এবং কর্মসংস্থানের জন্য অভিবাসনের উপর নির্ভরশীল।
৪. টুভালু (২৬ বর্গ কিলোমিটার)

টুভালু একটি স্বাধীন দ্বীপ রাষ্ট্র যা পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের মাল্টিনেশিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। এটি চারটি মূল দ্বীপ এবং তিনটি ছোট দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৪.৬ মিটার (১৫ ফুট) উপরে অবস্থিত। টুভালুর রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হল ফুয়াফুয়া।
টুভালুর আয়তন মাত্র ২৬ বর্গ কিলোমিটার (১০.১ বর্গ মাইল) এবং জনসংখ্যা ১১,০০০ জন (২০২২ আনুমানিক)। টুভালুর অর্থনীতি মূলত মাছ ধরা এবং কৃষির উপর নির্ভরশীল। টুভালুর কোন প্রাকৃতিক সম্পদ নেই এবং এটি আন্তর্জাতিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল।
৫. স্যান মারিনো (৬১ বর্গ কিলোমিটার)

স্যান মারিনো একটি ইউরোপীয় দেশ, যা ইতালির উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এটি ইউরোপের সবচেয়ে ছোট স্বাধীন দেশ, যার আয়তন ৬১ বর্গকিলোমিটার (২৩ বর্গমাইল) এবং জনসংখ্যা ৩৩,৫৮৬ (২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী)। সান মারিনো ইউরোপের প্রাচীনতম স্বাধীন দেশ, যা ৩০১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
সান মারিনো একটি প্রজাতন্ত্র, যার সরকার প্রধান একজন প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্টকে ছয়জন ক্যাপ্টেনের দ্বারা নির্বাচিত করা হয়, যারা প্রতি দুই বছর পর পর নির্বাচিত হন। সান মারিনোতে একটি একক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ রয়েছে, যাকে গ্র্যান্ড কাউন্সিল বলা হয়। গ্র্যান্ড কাউন্সিল ৬০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত, যারা চার বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হন। সান মারিনো ইতালির সাথে অর্থনৈতিকভাবে জড়িত। সান মারিনো ইতালির মুদ্রা ইউরো ব্যবহার করে। সেই সাথে সান মারিনো একটি পর্যটন কেন্দ্র, প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক সান মারিনোতে ঘুরতে আসেন। সান মারিনো একটি ধর্মীয় দেশ, ৯৫% জনসংখ্যা রোমান ক্যাথলিক। সান মারিনোতে একটি ক্যাথলিক চার্চ রয়েছে, যাকে সান মারিনো ক্যাথেড্রাল বলা হয়। সান মারিনো ইউরোপের সবচেয়ে ছোট স্বাধীন দেশ হলেও কিন্তু এটি একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ দেশ।
৬. লিচেনস্টাইন (৬২ বর্গমাইল)

বিশ্বের ষষ্ঠ ক্ষুদ্রতম দেশ হল লিচেনস্টাইন। এটি ইউরোপের একটি landlocked দেশ, যা সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রিয়া দ্বারা বেষ্টিত। লিচেনস্টাইন এর আয়তন ১৬০ বর্গকিলোমিটার (৬২ বর্গমাইল) এবং জনসংখ্যা ৩৮,০০০ (২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী)। লিচেনস্টাইন একটি প্রজাতন্ত্র, যার সরকার প্রধান একজন প্রিন্স। প্রিন্সকে ৪০ জন সদস্যের একটি সংসদ দ্বারা নির্বাচিত করা হয়। লিচেনস্টাইন একটি সমৃদ্ধ দেশ, যার জিডিপি প্রতি মাথাপিছু ৮৭,০০০ ইউরো (২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী)। লিচেনস্টাইন একটি কর-মুক্ত দেশ, তাই এটি একটি জনপ্রিয় আর্থিক কেন্দ্র। আবার, লিচেনস্টাইন একটি পর্যটন কেন্দ্র, প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক লিচেনস্টাইনতে ঘুরতে আসেন।
৭. মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ (১৮১ বর্গ কিলোমিটার)

মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, যা মাইলেকিটেয়াল নামেও পরিচিত, একটি দ্বীপ রাষ্ট্র যা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের মালাকোনাসে অবস্থিত। এটি ১৯টি প্রবাল দ্বীপ এবং ৫টি এটল নিয়ে গঠিত, যা ২,৯০০ বর্গ কিলোমিটার (১,১০০ বর্গ মাইল) জলের উপর ছড়িয়ে আছে। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের মোট আয়তন মাত্র ১৮১ বর্গ কিলোমিটার (৭০ বর্গ মাইল), যা এটিকে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম প্রজাতন্ত্রগুলির মধ্যে একটি করে তোলে।
মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হল মাজুরো। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের জনসংখ্যা প্রায় ৫৩,০০০। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের অর্থনীতি মূলত মাছ ধরা এবং পর্যটন নির্ভর। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ একটি সাবেক মার্কিন থ্রাস্ট অঞ্চল, যা ১৯৮৬ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্রতিরক্ষার জন্য দায়ী। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ একটি সুন্দর এবং সমৃদ্ধ দ্বীপ দেশ। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং এটি একটি শান্ত এবং নিরাপদ জায়গা।
৮. মালদ্বীপ (২৯৮ বর্গ কিলোমিটার)

বিশ্বের অষ্টম ক্ষুদ্রতম দেশ হল মালদ্বীপ। এটি ভারত মহাসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপ দেশ। মালদ্বীপের আয়তন ২৯৮ বর্গ কিলোমিটার (১১৫ বর্গ মাইল) এবং জনসংখ্যা ৫৪৪,০০০ (২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী)। মালদ্বীপ একটি প্রজাতন্ত্র, যার সরকার প্রধান একজন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতিকে ৫ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত করা হয়। মালদ্বীপের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হল মালে। মালদ্বীপের সরকারি ভাষা মালদীভী। মালদ্বীপের অর্থনীতি পর্যটন নির্ভর। মালদ্বীপ একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং এটি একটি শান্ত এবং নিরাপদ জায়গা। মালদ্বীপ একটি সমুদ্র সৈকতের দেশ এবং এটি বিশ্বের সেরা সমুদ্র সৈকতগুলির মধ্যে একটি রয়েছে। মালদ্বীপ একটি সুন্দর দেশ এবং এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য।
৯. সেন্ট কিটস ও নেভিস (২৬১ বর্গ কিলোমিটার)

সেন্ট কিটস এবং নেভিস এর আয়তন ২৬১ বর্গকিলোমিটার বা ১০১ বর্গমাইল। এর জনসংখ্যা ৫৩,১৪৯ জন। দেশটি ক্যারিবীয় অঞ্চলের লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জের একটি অংশ। এটি উত্তর আমেরিকার দক্ষিণে অবস্থিত। এর রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হলো বাস্টার।
১০. সেন্ট ভিনসেন্ট ও দ্য গ্রেনাডিন্স (৩৮৯ বর্গ কিলোমিটার)

সেন্ট ভিনসেন্ট ও দ্য গ্রেনাডিন্স একটি দ্বীপরাষ্ট্র যা ক্যারিবীয় সাগরের ক্ষুদ্রতর অ্যান্টিল দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত। এর আয়তন ৩৮৯ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১১০,০০০। দেশটি অতীতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। বর্তমানে এটি কমনওয়েল্থ অফ নেশন্স এবং ক্যারিবীয় সম্প্রদায়ের সদস্য।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
অপরূপ সৌন্দর্যের আঁধার এই বিশ্ব। এখানে রয়েছে বড় দেশ আবার রয়েছে ছোট দেশ। দেশগুলো আয়তনের দিক থেকে একটি অন্যটি হতে বড় অথবা জনসংখ্যার দিক থেকে একটি অন্যটির চেয়ে ছোট। আমাদের আজকের আলোচনায় বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ১০টি দেশ সম্পর্কে আপনার কেমন অভিমত তা কমেন্ট করে জানাবেন কিন্তু।
বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ১০টি দেশ এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কিছু প্রশ্ন উঁকি দিতে পারে। তবে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরসমূহ-
জনসংখ্যায় বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশ কোনটি?
জনসংখ্যায় বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশ হল ভ্যাটিকান সিটি। এটি একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র যা ইতালির রোমে অবস্থিত। ভ্যাটিকান সিটির আয়তন মাত্র ০.৪৪ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ৮০০।
ভ্রমণের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর রাষ্ট্য কোনটি?
ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে সুন্দর রাষ্ট্য হচ্ছে স্কটল্যান্ড। আবার কার্বন নেগেটিভ দেশ হিসেবে ভূটান হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশ। এটা ব্যক্তি বিশেষ এ আলাদা হয়ে থাকে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, এসব বিষয়ে আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে কমেন্ট করতে ভুলবেন না কেমন! আমাদের দেওয়া তথ্যের মধ্যে কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদেরকে জানিয়ে দিবেন। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে ১০ টি রং এর নাম পড়তে পারেন।
‘বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ১০টি দেশ‘ সম্পর্কে এতক্ষনে নিশ্চয় ব্যাপক ধারণা পেয়েছেন। আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য কামণা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ্ হাফেজ।