শীতকাল সম্পর্কে ১০ টি বাক্য জানা মানেই বিভিন্ন রচনা প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তৃতাসহ নিজের জ্ঞানের ভান্ডারকে বিশালতা প্রদান করা। ষড়ঋতুর এই দেশের সবচেয়ে মিষ্টি ঋতু হলো এই শীতকাল। কারণ সূর্যের চিকন কিরণ রামধনুর সাত রঙের আভা চারদিকে ছড়াতে ছড়াতে এই সময় আমরা মজার পিঠা নিয়ে বসে পড়ি। মূলত পৃথিবীর নিজস্ব কক্ষপথে ঘোরার সময় অক্ষাংশ সরাসরি সূর্যের মুখোমুখি হলে এই শীতকালের সৃষ্টি হয়। এই মুখোমুখি হওয়ার বিশেষ সময়টিতে পৃথিবীর যে অংশ সূর্যের একেবারে মুখোমুখি অবস্থানে পড়ে সেই অংশেই শীতকাল দেখা দেয়। তাছাড়া একে একে পৃথিবীর চারপাশের প্রতিটি অঞ্চলই এই সূর্যের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পায়।
শীতকাল আমাদের বাঙালিদের কাছে আলাদা একটি আমেজ তৈরি করে। কিন্তু এই সুখের আমেজ তৈরি করার পাশাপাশি শীতকালের তীব্রতা জনজীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে। এর ফল হিসাবে সাধারণ মানুষকে ভুগতে হয় ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতিসহ গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলিতে। তাছাড়া অন্যান্য দেশের চাইতে বাংলাদেশের শীতকাল কিছুটা আলাদা। বিশেষ করে অন্যান্য দেশের জনগণ যেখানে মাসের পর মাস তুষারপাতের সাথে যুদ্ধ করে সেখানে আমাদের দেশের জনগণের এই ধরণের যুদ্ধে অংশ নিতে হয় না। তবে সারা বছর গরমে অতিষ্ট থাকতে থাকতে এদেশের মানুষ শীতের তীব্রতার সাথে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ আবহাওয়া ডেকে আনে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন বিপর্যয়।
শীতকাল পরিচিতি কি?
মূলত প্রোটো-জার্মানিক বিশেষ্য বা শব্দ *wintru- থেকে এসেছে winter। যাকে আমরা বাংলাতে শীতকাল হিসাবে চিনি। আর সময়ের দিকটা হিসেব করলে আমরা বলতে পারি জানুয়ারী মাসের শেষের দিকেই এই শীতকালের আয়োজন শুরু হতে থাকে। এই ঋতু কিন্তু বাঙালি মনে আলাদা করে আনন্দের সঞ্চার করে। বিশেষ করে বাংলাদেশের যেসব মানুষ শীতের রাতে অনেক সময় ধরে ভারী চাদরের নিচে একটি সুন্দর ঘুম নিশ্চিত করতে পারে তাদের মতো সুখী মানুষ হয়তো আর খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ এই সময় বেশ ভালো ঘুম হয়। তাছাড়া শীতকালের আরো একটি নেয়ামত হলো বিভিন্ন ধরণের সবজির সহজলভ্যতা। এই সময় বাংলাদেশের গ্রামগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, বেগুন, টমেটোর চাষ হয় এবং তাতে ফলনও বেশ ভালো হয়। যার কারণে কব্জি ডুবিয়ে সবজি খেতে কোনো বাঁধাই কাজ করে না। তার পাশাপাশি খেঁজুরের রসের পিঠার সাথে বিভিন্ন ধরণের পিঠা তৈরির হিড়িক পড়ে যায়। সবমিলিয়ে শীতকালকে একেবারে দস্যুকালও বলা যায় না!
শীতকাল সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় কিংবা পরীক্ষায় এগিয়ে থাকতে শীতকাল সম্পর্কে ১০ টি বাক্য জেনে নেওয়া প্রয়োজন। মূলত বাংলা বছরের ৫ম ঋতু হলো এই শীতকাল। আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে শীতকালের সময় ধরা হলেও এর নির্দিষ্ট দু’টি মাস আছে। এই বিশেষ ঋতুর কিছু খারাপ দিক থাকলেও বাংলাদেশে এর মৃদু আবহাওয়া সত্যিই নিজের ভেতরটাকে বেশ ফুড়ফুড়ে করে তোলে। নিম্নে শীতকাল সম্পর্কে দশটি বাক্য তুলে ধরা হল-
- ভ্রমণ কিংবা পিকনিকের প্রতি যাদের আগ্রহ করা রয়েছে তাদের জন্যে শীতকাল হলো সেরা সময়। কারণ শীতকালের মিষ্টি আবহাওয়াই মেজাজ ফুড়ফুড়ে করতে যথেষ্ট।
- ক্রিকেট কিংবা টেনিস খেলার সেরা মৌসুম হিসাবে শীতকাল বেশ জনপ্রিয়। ফলে বিভিন্ন স্থানে মৃদু আলোর নিচে ছেলেমেয়েদের হৈ-হুল্লোড় লক্ষ্য করা যায়।
- যেসব দুস্থ ব্যাক্তিরা ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে রাতে ঘুমাতে পারে না, প্রচন্ড পরিমাণে গরম কাপড়ের অভাববোধ করে, এই সময় তাদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি।
- শীতকালে সবসময় নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরি। কারণ এই সময় অতিরিক্ত শীতের কারণে মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
- কোনো দেশে বা অঞ্চলে ঠিক কতটুকু শীত পড়বে তা নির্ভর করবে সেই অঞ্চলে থাকা সামুদ্রিক বাতাস এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণের উপর।
- সারা পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে বেশি শীত পরিলক্ষিত হয় মূলত ঠান্ডার দেশ কানাডাতে এবং বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হারে শীত পড়র মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে।
- শীতকালে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করা অতিথি পাখিদের প্রতি বাড়তি যত্নশীল হওয়াটা জরুরি।
- শীতকালে সারা দেশে প্রচুর শাকসবজি এবং মাছের প্রাপ্যতা দেখা যায়। ফলে সকলের স্বাস্থ্য এবং মেজাজ দুটোই বেশ ভালো থাকে।
- শীতকালের শেষের দিকটা বা সময়টা কৃষকদের জন্যে বেশ আনন্দের। কারণ এই সময় তারা নতুন ধান ঘরে তোলার উৎসবে মাতে।
- শীতকালের ব্যাপ্তি বা ক’দিন বজায় থাকবে তা অনেক সময় সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বের পরিবর্তনের প্রভাবের উপরও নির্ভর করে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
শীতকাল সম্পর্কে ১০ টি বাক্য এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কিছু প্রশ্ন উঁকি দিতে পারে। তবে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরসমূহ-
শীতকালে ঠোঁট ফাটে কেন?
শীতকাল সম্পর্কে ১০ টি বাক্য এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি শীতকালে ঠোঁট ফাটার অন্যতম হলো ঠোঁটের চামড়া অতিরিক্ত পাতলা আবরণ। এই পাতলা আবরণের ফলে সারা দেহ ঠান্ডা আবহাওয়ার প্রভাব সহ্য করতে পারলে ঠোঁটের ক্ষেত্রে তা হয়ে উঠে না। ফলে এই সময় ঠোঁটের চামড়ার জলীয়বাষ্প কমে গিয়ে পাতলা আবরণটুকু ফেটে যায়।
শীতকালে কি কি ফুল ফোটে?
শীতকালে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ যে ফুলটি ফোটে সেটি হলো শীতের জেসমিন। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে এই ঋতুতে সাইক্ল্যামেন, প্যানসিস, হেলেবোরস, ক্যামেলিয়াস, স্নোড্রপস, উইচ হ্যাজেল, ক্রিসমাস রোজ নামের মিষ্টি ফুল ফোটে। আর বাংলাদেশে শীতকালে চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া এবং সূর্যমূখী ফুল সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ফুটতে দেখা যায়।
উপসংহার
মনে রাখবেন শীতকালে এর তীব্রতা থেকে বাঁচতে অনেক প্রাণী অতিরিক্ত শীত এড়াতে জনসম্মুখে চলে আসে। এই সময় আমাদের প্রত্যেককেই অকারণ প্রাণী হত্যা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি আশেপাশের গরিব দুঃখীদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান পড়তে পারেন।
‘শীতকাল সম্পর্কে ১০ টি বাক্য‘ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম আঞ্চলিক জলবায়ু অনুসারে শীতকাল কখন হয়, কতদিন থাকে এবং এই সময়টাতে বাংলাদেশে কি কি ঘটে।আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে দয়া করে কমেন্ট বক্সে লিখে দিন।