তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার যা আমাদের জীবনকে করেছে সহজ, সরল আর একই সাথে প্রাণবন্ত। আর তাই আজকে আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বিস্তারিতরূপে জানবো ইনশাআল্লাহ। সাথেই থাকুন আর ICT এর দশটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিন। আশা করছি পোস্টটি আপনার অত্যন্ত উপকারে আসবে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে বরং শুরু করা যাক। তবে মূল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে আমরা একটু দেখে নেব তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আসলে কি?
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি?
বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত বিষয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) হলো, তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, যোগাযোগ এবং প্রচারকে সহজতর করার জন্য ব্যবহৃত এক ধরনের প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা উন্নতির চরম শিখায় পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছি। শুধু কি তাই? আজকে আমরা ঘরে বসে দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারছি শুধুমাত্র তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে। বুঝতে পারছেন তো ICT কি। এবার চলুন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির দশটি ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে জেনে নেই।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার
আমাদের আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে আমাদের জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার তুলে ধরবো। আপনি যদি এ বিষয়ে না জেনে থাকেন তবে অত্যন্ত মনোযোগসহ পুরো পোস্টটি পড়ে নিন।
১. যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার

ICT এর কারণে মানুষ এখন একে অপরের সাথে যেকোনো সময় এবং যেকোনো জায়গা থেকে সহজেই যোগাযোগ করতে পারছে। আর এই যোগাযোগ সম্পাদিত হচ্ছে ই-মেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে। বলতে গেলে ব্যক্তিগত জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার তথা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আইসিটি এর কারণে গোটা বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। আমরা দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে এমনকি সারা বিশ্বে কোথাও কিছু ঘটলে তা ঘরে বসেই দেখতে পাচ্ছি। বিশ্বের ভ্রমণ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয় সম্ভব হয়েছে আইসিটি এর উন্নয়ের কারণে।
২. শিক্ষা খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) শিক্ষা খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এটি শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু শিখতে বিশেষ সুবিধা প্রদান করছে। ICT ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় এবং যেকোনো জায়গা থেকে ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারছে। যা তাদের শেখার গতিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য নিমিষেই পেয়ে যাচ্ছে।
স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার ফলে এসএসসি এবং এইচএসসি সহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মূল্যায়ন আইসিটির মাধ্যমে করা হচ্ছে। এটি কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে আইসিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এটি । শিক্ষার্থীরা এখন ঘরে বসেই অন্য কোন দেশের লাইব্রেরীর বই পড়তে পারছে। অনলাইনের মাধ্যমে distance learning তাদের জ্ঞান সীমাকে বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এর ফলে আইসিটির ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৩. ব্যবসায় ICT এর ব্যবহার

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কারনে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিনিয়তই ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ICT ব্যবহার করে ব্যবসায়িরা তাদের গ্রাহক, সরবরাহকারী এবং অন্যান্য ব্যবসার সাথে দ্রুত এবং সহজে যোগাযোগ করতে পারছে। ফলশ্রুতিতে ব্যবসায়িকগণ তাদের ব্যবসাকে আরো দ্রুত এবং কার্যকরী করতে পারছে এবং সেই সাথে তাদের গ্রাহকদের চাহিদাকে আরও ভালভাবে পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে। আবার ICT ব্যবহার করে ব্যবসায়িকগন অনলাইনে তাদের পণ্য এবং সেবাগুলি বিপণন করতে পারে। এটি তাদের ব্যবসার পরিসরকে বৃদ্ধি করতে এবং তাদের বিক্রয় বৃদ্ধি করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
৪. সরকারের কার্যক্রমে আইসিটির ব্যবহার

ICT এর মাধ্যমে সরকারের কার্যক্রম আরও জবাবদিহিমূলক এবং জনগণের কাছে আরও সহজলভ্য করে তোলা সম্ভব হয়েছে। সরকার ICT এর মাধ্যমে জনগণের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, তাদের সেবা প্রদান করতে পারে এবং তাদের তথ্য পরিচালনা করতে পারে। এটি সরকারের কাজকে আরো সহজ, আকর্ষণীয় আর প্রাণবন্ত করে তুলেছে। অফিস, আদালত থেকে শুরু করে রাস্তা, কালভার্ট তথা সরকারের সকল উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে।
৫. স্বাস্থ্যসেবায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

ICT এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত এবং একই সাথে সাশ্রয়ী করে তোলা সম্ভব হয়েছে। ডাক্তার এবং নার্স সর্বদা আইসিটির ব্যবহার করছে। আর এর ফলে রোগীদের সাথে যোগাযোগ করা, তাদের রোগ নির্ণয় করা এবং রোগ অনুযায়ী যথোপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করা তুলনামূলক সহজ হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে পূর্বের তুলনায় এখন রোগী মৃত্যুর হার অনেকাংশই কমে এসেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে জরূরী মূহুর্তে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। ফলে বেঁচে যাচ্ছে হাজারো প্রাণ।
৬. পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আইসিটির ব্যবহার

ICT এর মাধ্যমে পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত এবং নির্ভরযোগ্য করে তোলা সম্ভব হয়েছে। পরিবহন সংস্থাগুলি ICT এর ব্যাপক ব্যবহার করছে। ফলে বাস, ট্রেন, বিমান এবং অন্যান্য যানবাহন পরিচালনা করে যাত্রীদের সঠিক তথ্য দ্রুত প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।
৭. কৃষি খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

আমরা কিন্তু কৃষির উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। আর এই কৃষি খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) অনবদ্য ভূমিকা রাখছে। কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, দক্ষতা এবং সেই সাথে লাভ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করছে ICT| তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার এর মধ্যে এটি অন্যতম। আইসিটি ব্যবহার করে কৃষকরা যেকোনো সময় এবং যেকোনো জায়গা থেকে কৃষি তথ্য অনুসন্ধান করতে পারছে। এটি কৃষকদের তাদের চাষের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সহজেই খুঁজে পেতে এবং ব্যবহার করতে সাহায্য করে।
ICT ব্যবহার করে কৃষকরা কৃষি প্রযুক্তি যেমন কৃষি যন্ত্রপাতি, সার এবং কীটনাশক কি পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে তার বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছে। আবার এর মাধ্যমে কৃষকরা তাদের কৃষি পণ্যগুলোকে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় প্রক্রিয়াতেই বিপণন করতে পারছে। এভাবে বিক্রয় বৃদ্ধিতে আইসিটি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সুতরাং বলা যেতে পারে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং পরিবারের জন্য একটি ভাল ভবিষ্যত গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
৮. শিল্প উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

বর্তমান সময় শিল্প কলকারখানাগুলো আগের তুলনায় কয়েক ধাপ এগিয়ে কেন বলতে পারেন? এই যে আমরা আমাদের দৈন্দদিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করছি এটা কিন্তু তারই ফল। একটি দেশের উন্নয়নে শিল্প যে বিশেষ ভূমিকা রাখে তা বলার অপেক্ষায় রাখে না। আর এই শিল্পে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে হচ্ছে।
সুতরাং আমাদের ICT এর মাধ্যমে শিল্প উৎপাদনকে আরও দক্ষ এবং লাভজনক করে তুলতে হবে। শিল্পপতিরা ICT কে ব্যবহার করে তাদের কারখানাগুলো পরিচালনা করছে, তাদের পণ্য উৎপাদন এবং বিপণনসহ যাবতীয় কাজ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সম্পন্ন করছে। এতে করে দেশ শিল্প খাতে এগিয়ে যাচ্ছে।
৯. গবেষণা খাতে আইসিটির ব্যবহার

দেশের উন্নয়নে গবেষণা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আর গবেষণাকে কয়েকধাপ এগিয়ে নিতে বিশেষ সহযোগিতা করছে ICT। বলুন তো কিভাবে? তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নত আবিষ্কার গবেষণার কাজকে অনেক সহজ আর দ্রুতগামী করে তুলছে। গবেষকরা ICT এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারে এবং তাদের গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করতে পারে।
১০. মহাকাশ অভিযানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষ সাধন এর সাথে সাথে মহাকাশ অভিযানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। আইসিটির ব্যবহারের ফলে মহাকাশে প্রেরিত সকল যন্ত্র সঠিক তথ্য প্রদান করে। ফলে মহাকাশ অভিযান আরো সহজ এবং দ্রুততর হয়েছে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আমাদের জীবনে কেন প্রয়োজন?
জীবনকে সহজ স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং গতিশীল করতে আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিশেষ প্রয়োজন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্র সমূহ কি কি?
আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এর অবদান উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে, শিক্ষা খাত, বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা, কৃষি, শিল্প এবং চিকিৎসা খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বহুল ব্যবহৃত হয়।
উপসংহার
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এর ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের যোগাযোগ, শিক্ষা, ব্যবসা, সরকার, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন, কৃষি, শিল্প এবং গবেষণাকে আরও উন্নত করতে পারি। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ১০টি ব্যবহার পড়তে পারেন।
‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার‘ সম্পর্কিত এই পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্ট করে জানাবেন। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না কেমন!